ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

৪ উইকেট নিয়ে সাসেক্সকে ২৪ রানে জিতিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন ‘কাটার মাস্টার’, সতীর্থরাও মুস্তাফিজের বোলিং রহস্যে আচ্ছন্ন

কাউন্টিতেও মুস্তাফিজ ‘জাদু’

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৩ জুলাই ২০১৬

কাউন্টিতেও মুস্তাফিজ ‘জাদু’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কী যে ‘জাদু’ তার বলে। একেকটি বল তার হাত থেকে মাটিতে পড়ে। ইনসুইং, আউটসুইংয়ে কুপোকাত হয়ে যান ব্যাটসম্যানরা। বলই বুঝতে পারেন না। আর তিনি হয়ে যান নায়ক। তিনি বাংলাদেশের ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান। কাউন্টিতেও সেই মুস্তাফিজ ‘জাদু’র শুরু হয়ে গেল। আইপিএল মাতানোর পর এবার কাউন্টি ক্রিকেটও মাতাতে শুরু করেছেন এ পেসার। এসেক্সের বিপক্ষে সাসেক্সের হয়ে ৪ ওভার বল করে ২৩ রান দিয়ে একাই তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সাসেক্সকে ২৪ রানে জিতিয়েছেনও। কাউন্টি ক্রিকেটে নিজের প্রথম ম্যাচেই নায়কও বনে যান। ম্যাচসেরাও হয়ে যান মুস্তাফিজ। নেটওয়েস্ট টি২০ ব্লাস্টে এ্যাসেক্সের বিপক্ষে ম্যাচে আগে ব্যাট করে ক্রিস জর্ডানের অপরাজিত ৪৫, ফিলিপ সল্টের ৩৩, অধিনায়ক লুক রাইটের ৩২ রানে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০০ রান করে সাসেক্স। জবাব দিতে নেমে মুস্তাফিজের সুইংয়ের সামনে কুলিয়ে উঠতে পারে না এ্যাসেক্স ব্যাটসম্যানরা। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানের বেশি করতে পারেনি। রবি বোপারা, জেমস ফস্টার, কালাম টেইলর ও রায়ান টেন ডয়েসচেটকে আউট করে দেন মুস্তাফিজ। আবার একটি ক্যাচও লুফে নেন। ম্যাচে ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন লুক রাইট। নিজের প্রথম ওভারে ৪ রান দেন। এরপর ১৫তম ওভার পর্যন্ত মুস্তাফিজকে বল দেয়া হয়নি। ততক্ষণে এ্যাসেক্সও ভাল অবস্থানে চলে যায়। ৩০ বলে জিততে ৬৮ রান লাগে। চার উইকেটও হারায়। তবে ব্যাটিংয়ে তখন বোপারা ৩২ রান ও ডয়েশচেট ৪ রানে ব্যাট করছিলেন। এ্যাসেক্স জিতেও যেতে পারত। কিন্তু লুক রাইট যে তার তুরুপের তাসকে রেখে দিয়েছেন। সঠিক সময়ে কাজে লাগানোর জন্যই আগলে রেখেছেন। সেটি যথাসময়েই কাজে লাগিয়েছেনও। ১৬তম ওভারে আবার মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন। শুরু হয়ে যায় মুস্তাফিজ তা-ব। নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে রবি বোপারাকে আউট করে দেন। এ ওভারে ২ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন। ১৮তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে তো এ্যাসেক্সের হারের পথই নিশ্চিত করে দেন। ওভারের প্রথম বলে ডয়েসচেট ছক্কা হাঁকান। কিন্তু পরের পাঁচটি বলে এমন জাদু মিশিয়ে বল করেন মুস্তাফিজ, তিন নম্বর বলে ফোস্টারের লেগ উইকেটই উড়ে যায়। ষষ্ঠ বলে টেইলরকেও বোল্ড করে দেন মুস্তাফিজ। এ ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন। ওভারটিতে ৭ রান দেন। ১৮ ওভার শেষে এ্যাসেক্সের জিততে যখন ১২ বলে ৪৮ রান লাগে, সেখানেই সাসেক্সের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষ ওভারে এসে ৩৫ রান লাগে, এমন মুহূর্তে একটি ছক্কা, নোসহ মোট ১০ রান দেন মুস্তাফিজ। তুলে নেন আরেকটি উইকেট। শেষপর্যন্ত তার বোলিং ফিগারই পুরো ম্যাচে উজ্জ্বল হয়ে থাকে; ৪-০-২৩-৪। মুস্তাফিজের এমন রহস্যময় বোলিংয়ে সতীর্থরাও আচ্ছন্ন হয়ে যান। অধিনায়ক লুক রাইটের কণ্ঠে তো শুধু ‘মুস্তাফিজ, মুস্তাফিজ’ বন্দনা। সবাই মুস্তাফিজের বোলিং দেখে হতভাগ! আবারও ক্রিকেট বিশ্ব মুস্তফিজের রহস্যে বুঁদ হলো। বুধবার ইংল্যান্ড গেছেন মুস্তাফিজ। দলের সঙ্গে যোগও দিয়েছেন। নিজের জার্সি বুঝেও নিয়েছেন। লকারও বুঝে নিয়েছেন। দলের সঙ্গে যতটুকু অনুশীলন করেছেন তাতে অনেক সতীর্থই মুস্তাফিজের রহস্য বুঝে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। জয়ের পর সাসেক্স অধিনায়ক লুক রাইট বলেন, ‘সে কি করতে যাচ্ছে, সেটা বুঝতে পারা অনেক কঠিন। অনুশীলনের সময় আমরা চেষ্টা করছিলাম তার সঙ্গে কাজ করতে। কিন্তু পারিনি। আগে না দেখে তার মুখোমুখি হওয়াটা সহজ নয়।’ সাসেক্সের সামনে এখন প্রতিটা ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। ন্যাটওয়েস্ট টি২০ ব্লাস্টে শুক্রবারই সারে আর ২৮ জুলাই গ্ল্যামারগানের বিপক্ষে ম্যাচ রয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হলে ম্যাচগুলোতে জয়ের বিকল্প নেই। নিজের টুইটারে রাইট মুস্তাফিজের প্রশংসার পাশাপাশি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার কথাও বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্দান্ত এক জয়। মুস্তাফিজের জন্য অপেক্ষা করার ফল পেলাম। হেরে েেগলে আমাদের জন্য টুর্নামেন্টই শেষ হয়ে যেত। এখনও আমাদের বেশ সুযোগ আছে। ওভালে দারুণ এক দলের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচ আছে। পরের সপ্তাহে হোভে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষেও অনেক বড় ম্যাচ।’ মুস্তাফিজের খেলায় চোখ রাখছিলেন তাঁর আইপিএল দলের কোচ টম মুডি। মুডিও টুইট করেছেন, ‘ম্যাচ জেতানো পারফর্মেন্স দিয়েই আবারও মুস্তাফিজের খেলায় ফেরা দেখতে দারুণ লাগল। ২৩ রানে ৪ উইকেট!’ একদিন আগে ইংল্যান্ড পৌঁছেই পরের দিন খেলতে নামেন মুস্তাফিজ। ভ্রমণ ক্লান্তি, অপরিচিত মাঠ, অপরিচিত সতীর্থ, ভিনদেশী কন্ডিশন, অচেনা প্রতিপক্ষ-কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেননি। শুধু জাদুময় বল করে গেছেন। লুক রাইট তাই বলেছেন, ‘ও বুধবার রওনা দিয়েছে। সোজা এখানে এসে এমন বোলিং পারফর্মেন্স দেখিয়েছে। আমাদের দলে ও সত্যিই অনেক স্পেশাল। কী স্পেশাল এক প্রতিভা!’ মুস্তাফিজ স্পেশাল তো হবেনই। ৪-০-২৩-৪ বোলিং ফিগারই সেই স্পেশাল বার্তাটা দিয়ে দিচ্ছে। মুস্তাফিজের ছোঁয়াতে যে সাসেক্স জয় পেয়েছে তাতে এক লাফে পয়েন্ট তালিকার সাত নম্বর থেকে চার নম্বরেও উঠে গেছে। তা সম্ভব হয়েছে মুস্তাফিজ জাদুতে। যে জাদু জাতীয় দলে, আইপিএলে এবং এখন কাউন্টিতেও দেখাচ্ছেন মুস্তাফিজ।
×