ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্কে জরুরী অবস্থা জারি

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২২ জুলাই ২০১৬

তুরস্কে জরুরী অবস্থা জারি

তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে চলা ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেই তিন মাসের জন্য জরুরী অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। রাজধানী আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে বুধবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। এই তিন মাসের জরুরী অবস্থা দেশটির পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে নতুন কোন আইন পাস করতে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার খর্ব ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দিচ্ছে প্রেসিডেন্ট ও তার মন্ত্রিসভাকে। খবর টেলিগ্রাফ ও বিবিসির। জরুরী অবস্থা ঘোষণার আগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন এরদোগান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী থেকে সন্ত্রাসী উপাদান পরিষ্কার করাই তার লক্ষ্য। তার দীর্ঘদিনের শত্রু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের সমর্থকদের উদ্দেশ করে তিনি এ কথা বলেন। তিনি টেলিভিশন ভাষণে আবারও গুলেনকেই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে দায়ী করেছেন। দেশজুড়ে চলা ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যে এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। গত শুক্রবার রাতের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি সৈন্য, পুলিশ, বিচারক, শিক্ষক ও সরকারী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং গ্রেফতার করা হয়েছে। জরুরী অবস্থা ঘোষণার পর এরদোগান হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আরও গ্রেফতার করা হতে পারে। অনেক লোককে গেফতার করা হয়েছে। কিন্তু অভিযান এখনও শেষ হয়নি। আমাদের এখনও অনেক সন্দেহভাজন ও সন্দেহ রয়েছে। অনেক নামে এই আটক ও গ্রেফতার অভিযান চলবে। এই জরুরী অবস্থা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পরিপন্থী নয়। জরুরী অবস্থা জারি করার মতো পদক্ষেপ নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এরদোগান বলেন, তুরস্কের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের স্বাধীনতার প্রতি হুমকির বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়াই জরুরী অবস্থা জারির উদ্দেশ্য। জরুরী অবস্থা তিন মাস থাকবে। এই পদক্ষেপের ফলে অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত ব্যক্তি ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার। সরকারী গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর জরুরী আইন কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়াই নতুন আইন জারি ও প্রয়োজন হলে নাগরিক অধিকার স্থগিত বা সীমিত করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট ও তার মন্ত্রিসভা। অভ্যুত্থানের পর গ্রেফতার হাজার হাজার লোকের আটকাদেশ দীর্ঘায়িত করতেও জরুরী অবস্থা কাজে লাগানো যাবে। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে থাকা সব ‘ভাইরাস’ সাফ করার অঙ্গীকার করেছেন এরদোগান। অভ্যুত্থান চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের ‘শহীদ‘ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। সরকারী হিসাবে, অভ্যুত্থান চেষ্টা প্রতিরোধ করতে গিয়ে অন্তত ২৪৬ জন নিহত হয়েছেন। অভ্যুত্থান চেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় এরই মধ্যে ৬০০ স্কুল বন্ধ ও দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ১১৮ জন জেনারেল ও এ্যাডমিরালকে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র ১১৮ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে তুরস্কের শীর্ষ ৩৫৬ জন সামরিক কর্মকর্তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশকেই অভিযুক্ত করা হলো। এদিকে শিক্ষাবিদদের বিদেশ সফরের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বিদেশে কাজ বা ছুটিতে থাকা সব শিক্ষাবিদকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এদিকে এরদোগান বলেছেন, জরুরী অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করার কোন অধিকার নেই ইউরোপের। তিনি এটিকে গত বছর সন্ত্রাসী হামলার পর ফ্রান্সের নেয়া পদক্ষেপের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ১৯২৩ সালে প্রজাতন্ত্র গঠিত হওয়ার পর থেকে ৪০ বছর ধরে সমগ্র তুরস্ক বা কয়েকটি প্রদেশ বিশেষ শাসনের অধীনে ছিল। ২০০২ সালের নবেম্বর মাসে সর্বশেষ জরুরী অবস্থা তুলে নেয়া হয় দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দুই প্রদেশ দিয়ারবাকির ও সিরনাক থেকে। কুর্দি জঙ্গী ও প্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় প্রদেশ দুটিতে ১৯৮৭ সাল থেকে জরুরী অবস্থা জারি ছিল।
×