ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বন্দরনগরীর ১৩ সড়ক বেহাল

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৮ জুলাই ২০১৬

বন্দরনগরীর ১৩ সড়ক বেহাল

আহমেদ হুমায়ুন, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিতে সৃষ্ট খানাখন্দে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অধিকাংশ সড়ক যাতায়াতের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান ১৩টি সড়কের অধিকাংশ স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অতিবৃষ্টির কারণে নগরীর এসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে অপরিকল্পিত কাজ, নিম্নমানের বিটুমিন ও পাথর ব্যবহারকে দায়ী করছেন। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, পাথর, মানসম্মত বিটুমিন আর কাজের মান ঠিক না রাখায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়ছে। অপরিকল্পিত কাজের পাশাপাশি সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। বিটুমিন ও পাথরের মান, সঠিক গ্রেডেশন ইত্যাদি শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, যদি ৩০ টন ওজনের গাড়ির জন্য ৭ টন ওজনের গাড়ির কার্পেটিং করা হয়, তবে নিশ্চয়ই সেটি বেশিদিন টিকবে না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে নগরীর চকবাজার-মুরাদপুর, চকবাজার-কাপাসগোলা, চকবাজার কলেজ, চকবাজার-রাহাত্তরপুল, বক্সিরহাট-কালামিয়া বাজার, জাকির হোসেন সড়ক, ২ নম্বর গেট, টাইগারপাস সড়ক, সিটি গেট, হালিশহর সড়ক, ডিটি রোড, রামপুর ওয়ার্ড রোড, পাহাড়তলী বাজারের সামনের সড়ক, সরাইপাড়া সড়ক, নয়াবাজার ঈদগাহ রোড, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের ২ থেকে ৮ নম্বর সড়ক, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সংযোগ সড়ক, চান্দগাঁও মৌলভী পুকুরপাড় সড়কসহ প্রায় সবকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর বিমানবন্দর সড়ক, স্ট্রান্ড রোড, ভিআইপি সড়ক (সিমেন্টক্রসিং থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত), আলকরণ রোড, সিডিএ এ্যাভিনিউ, আরাকান সড়ক, কদমতলী উড়াল সড়কের ওঠা-নামার মুখ, দেওয়ানহাট ওভারপাসের সামনের অংশ, পতেঙ্গার চরপাড়া সড়ক, চট্টেশ্বরী সড়ক, কাপাসগোলা সড়ক, মেহেদীবাগ সড়ক, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সরেজমিন দেখা গেছে, টানা বর্ষণের ফলে নগরীর অধিকাংশ সড়কের কাপের্টিং উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়কের অধিকাংশ জায়গায় মাঝখানের বিটুমিন এবং ইটের কংকর উঠে গেছে, খানাখন্দের কারণে যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। ভিআইপি সড়কের সিমেন্টক্রসিং মোড় থেকে কর্ণফুলী ইপিজেড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশে বিশাল বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, চার লেন সড়কের ওই অংশের দুই লেনে (এক পাশ) যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, কর্পোরেশনের আওতাধীন ৮৫০ কিলোমিটার সড়ক আছে। এর মধ্যে কার্পেটিং সড়ক ৫৬০ কিলোমিটার। ইট বিছানো সড়ক ১৫০ কিলোমিটার। কংক্রিট বিছানো সড়ক ৬০ কিলোমিটার এবং কাঁচারাস্তা আছে ৮০ কিলোমিটার। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে এসব সড়কের অর্ধেক প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এগুলো মেরামতে কাজ করে যাচ্ছি। ৪১টি ওয়ার্ড পাঁচটি বিভাগে ভাগ করে প্রকৌশল বিভাগের পাঁচটি টিম দুই শিফটে মেরামতকাজ করে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই তাই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সাময়িক মেরামত করছি। বিটুমিন, ইটের খোয়ার মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে যেখানে সম্ভব সেখানে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমরা নগরীর প্রধান কিছু সড়ক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নতুনভাবে তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় বড় বাজেটে প্রধান সড়কগুলো তৈরির খসড়া প্রস্তুত করা হবে। এ নিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা নিচ্ছি।
×