ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন করে সেই প্রশ্ন-সৌদি ইমামকে নিয়ে রহস্য ঘনীভূত

৯/১১-তে রিয়াদের সম্পৃক্ততা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৯ জুন ২০১৬

৯/১১-তে রিয়াদের সম্পৃক্ততা

যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হামলার সঙ্গে সৌদিদের জড়িত থাকার প্রশ্নটি আবার নতুন করে জেগে উঠেছে। মার্কিন কংগ্রেসের এ সম্পর্কিত এক রিপোর্টেও গোপনীয় অংশটি প্রকাশ করার দাবি ওঠায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের এক বিলাসবহুল প্রাসাদে ২০০৪-এর ফেব্রুয়ারির এক রাতে দু’ আমেরিকান তদন্তকারী ঐ হামলার অন্যতম রহস্যাবৃত প্রশ্নের জবাব জেনে থাকতে পারেন এমন এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই প্রশ্নটি ছিলÑ এ ষড়যন্ত্রে সৌদি সরকারী কর্মকর্তাদের যদি কোন ভূমিকা থেকে থাকে, তা হলে সেটি কি ছিল? ঐ ব্যক্তির নাম ফাহাদ আল থুমাইরি। তিনি লস এঞ্জেলেসের সৌদি কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা এবং বিমান ছিনতাইকারীদের দু’জন নামাজ আদায় করেছিল এমন একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন, হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ঐ ব্যক্তি জড়িত ছিলেন বলে দেখানো গেলে তা হামলায় সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করার পথে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। তারা জাতীয় ৯/১১ কমিশনের স্টাফ সদস্য। তারা অকৃতকার্য হন। চার ঘণ্টা স্থায়ী দু’দফা জিজ্ঞাসাবাদে থুমাইরি বিমান ছিনতাইকারী বা তাদের পরিচিত সহযোগীদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন। তাকে দৃশ্যত তার জবাবের বিরুদ্ধে যায় এমন ফোন রেকর্ড দেখানো হলে তিনি অসঙ্গতির কোন কারণ দেখাননি। তিনি বলেন, এটি ভুল রেকর্ড বা লোকজন তার ওপর কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা করছে। তদন্তকারীরা তাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা এক রিপোর্টে থুমাইরি সম্ভবত মিথ্যা বলছেন বলে মন্তব্য করেন। তবে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা সম্পর্কিত কোন সরকারী তদন্তেই কখনও থুমাইরি বা অন্য কোন সৌদি কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে সহায়তা করেছিলেন বলে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার প্রায় ১৫ বছর পর সৌদি সংশ্লিষ্টতার প্রশ্নটি আবারও উদ্ভব হয়েছে। ঐ সব হামলা সম্পর্কে ২০০২ সালের এক সংগ্রেসীয় তদন্ত বিপোর্টের দীর্ঘদিন ধরে গোপন রাখা একটি অংশ প্রকাশের নতুন দাবি ওঠায় ঐ প্রশ্নটিও উঠেছে। কারণ ঐ অংশে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে সৌদিদের ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা আলোচনা করা হয়। এ অংশে ২৮টি পৃষ্ঠা রয়েছে। ঐসব পৃষ্ঠা পড়েছিলেন এমন আমেরিকান কর্মকর্তারা বলেন, রিপোর্টের ঐ অংশে সন্নিবেশিত তথ্যাদির মধ্যে থুমাইরি ও দু’ছিনতাইকারী সম্পর্কে উত্তর জানা প্রশ্নটিই সবচেয়ে জটিল। কেউ কেউ এখনও বিশ্বাস করেন, যদি ঐ ষড়যন্ত্রে সৌদি সরকারের আদৌ কোন ভূমিকা থেকে থাকে, তা হলে সেটি খুব সম্ভবত থুমাইরিই পালন করতেন। বছরের পর বছর ধরে চলা তদন্তে সৌদি সরকারের জড়িত থাকার কোন নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়া যাওয়ায় সৌদি সরকার যুক্তি দেখান যে, তারা অন্ধ অনুমান ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের শিকারে পরিণত হয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের শুক্রবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২৮ পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হয়েছে এবং এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে ঐ সব তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে। তার সরকারের জড়িত থাকার সম্ভাবনার প্রশ্নটি বিভিন্ন উৎস থেকে উঠে এসেছে। সিনেট গত মাসে সর্বসম্মতিক্রমে এমন এক বিল পাস করে, যা সন্ত্রাসী হামলায় যে কোনভাবে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা সহজতর হবে। প্রতিনিধি পরিষদে আগামী সপ্তাহে বিলটি উত্থাপিত হতে পারে। ঐ হামলায় নিহতদের পরিবারগুলোর পক্ষে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে দায়ের করা এক মামলা আদালতে ধীরগতিতে চলমান রয়েছে। ৯/১১ কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হয়, সৌদি সরকার এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বা সিনিয়র সৌদি কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে আল কায়েদাকে অর্থ যুগিয়েছিলেন বলে আমরা কোন প্রমাণ পাইনি। এখন কমিশনের কোন কোন স্টাফ সদস্য উল্লেখ করেন যে, ঐ মন্তব্য নিম্নপদস্থ সৌদি কর্মকর্তারা ছিনতাইকারীদের সাহায্য করেছিলেন এমন সম্ভাবনা নাকচ করে দেয় না। তারা আরও বলেন, কমিশনকে খুব কম সময়ের মধ্যে কাজ করতে হয়েছিল এবং প্রতিটি তথ্যই নিয়েই তারা পুরোপুরি তদন্ত করে দেখতে পারেনি।
×