ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ মুহূর্তের জাদুতে হাসল ফরাসিরা

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৭ জুন ২০১৬

শেষ মুহূর্তের জাদুতে হাসল ফরাসিরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টানা দুই জয়ে প্রথম দল হিসেবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ফ্রান্স। বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে ফরসীরা ২-০ গোলে হারায় নবাগত আলবেনিয়াকে। ম্যাচ শেষে ফ্রান্স জয়ের উৎসবে মাতোয়ারা হলেও কান্নার সাগরে ভেসে যায় আলবেনিয়া। এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক! শুরু থেকেই শক্তি-শালী স্বাগতিকদের রুখে দিয়ে ড্র করার স্বপ্ন বুনছিল এবার প্রথমবারের মতো ইউরো খেলতে আসা আলবেনিয়া। কিন্তু শেষ সময়ের ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে যায়। ম্যাচের শেষ মিনিটে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন তুখোড় ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার এ্যান্টোনিও গ্রিজম্যান। অতিরিক্ত সময়ে (৯৬ মিনিট) আরও একটি গোল করে ফ্রান্সকে উৎসবে মাতান দুর্দান্ত খেলে চলা দিমিত্রি পায়েত। আচমকা ঝড়ে হেরে যাওয়ায় ম্যাচ শেষে আলবেনিয়ার ফুটবলাররা কেঁদেছেন অঝোরে। রোমানিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে গ্রুপের আরেক ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়। ‘এ’ গ্রুপ থেকে দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলোতে ফ্রান্স। ৪ পয়েন্ট নিয়ে পরবর্তী পর্বে খেলার দৌড়ে ভালভাবেই আছে সুইজারল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে ওয়েলসের কাছে হারলেও নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেøাভাকিয়া। পরশু তারা রাশিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে ঐতিহাসিক প্রথম জয় পেয়েছে। মার্শেইয়ের স্টাডে ভেলোড্রোমে প্রথমার্ধে আলবেনিয়ার দুর্গে তেমন আক্রমণ শাণাতে পারেনি ফ্রান্স। স্বাগতিকদের লোমেলো, পরিকল্পনাহীন ফুটবল বিরক্ত ঝরায় তাদের সমর্থকদেরই। বিরতিতে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় গ্যালারির দুয়ো পর্যন্ত শুনতে হয়েছে দলটির ফুটবলারদের। বিরতির পর শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ফ্রান্স। শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত স্বাগতিকরা। কিন্তু অলিভিয়ের জিরুডের ক্রস আলবেনিয়া ডিফেন্সকে ফাঁকি দিলেও ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারেননি কিংসলে কোম্যান। ৫৩ মিনিটে আরেকটু হলে গোটা স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে দিত আলবেনিয়া। দারুণ এক আক্রমণ থেকে ফ্রান্সের পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন এরমির লেনইয়ানি। বল গোলরক্ষক হুগো লরিসকে পরাস্ত করলেও ফিরে আসে সাইডপোস্টে লেগে। শেষ পর্যন্ত এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় আলবেনিয়ার জন্য। এরপর ঘুরে দাঁড়ায় ১৯৯৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। একের পর এক আক্রমণে কোণঠাসা করে ফেলে প্রতিপক্ষকে। ফলশ্রুতিতে দুটি দারুণ সুযোগও সৃষ্টি করে। প্রথমে পায়েটের পাস থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও গোল করতে পারেননি পল পোগবা। পরেরবার কোম্যানের ক্রস থেকে ডি বক্সের ভেতর থাকা জিরুডের হেড হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। ৬৭ মিনিটে জিরুড আবারও হতাশ করেন দলকে। প্যাট্টিস এভরার ক্রস থেকে তার হেড ফিরে আসে সাইডপোস্টে লেগে। এরপর সময় যত গড়ায়, ফ্রান্সের আক্রমণের ধার আরও বাড়ে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোলের দেখা পাচ্ছিল না টুর্নামেন্টের দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। সমর্থকদের উৎকণ্ঠাও বেড়ে যায়। অবশেষে ৯০ মিনিটে ফরাসীদের দুশ্চিন্তা দূর করেন বদলি হিসেবে নামা গ্রিজম্যান। আদিল রামির ক্রস থেকে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকারের হেড আলবেনিয়ার জালে জড়ালে উল্লাসে ফেটে পড়ে স্বাগতিক দর্শকরা। অতিরিক্ত সময় পায়েট একক প্রচেষ্টায় ফ্রান্সকে দ্বিতীয় গোল উপহার দেন। রোমানিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচেও ফ্রান্স শেষ মুহূর্তের গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল। ওই ম্যাচে ৮৯ মিনিটে অসাধারণ গোল করে দলকে জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন পায়েট। আলবেনিয়ার বিপক্ষেও শেষ সময়ে গোল করে হিরো বনে গেছেন তিনি। এ কারণে বলা হচ্ছে, শেষ সময়ের গোল স্পেশালিস্ট ফ্রান্স। ম্যাচ শেষে পায়েট বলেন, দারুণ বিষয় হলো, এটা নতুন নয়, মার্চ থেকে এবং হল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা এটা দেখিয়েছি যে আমরা সব সময়ই শেষ মুহূর্তে জিততে পারি। আসরের শুরু থেকেই আমরা অতিরিক্ত সময়েও গোল করতে পারছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের ধৈর্য ধরতে হয়েছে। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি বদলি হিসেবে নামা খেলোয়াড়রা রাতে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে এবং আমরা ফসল পেয়েছি। ফরাসী কোচ দিদিয়ের দেশম পোগবা ও গ্রিজম্যানকে বদলি হিসেবে খেলানোর ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, পোগবাকে বাইরে রাখা ছিল ট্যাকটিক্যাল সিদ্ধান্ত। গ্রিজম্যানকে নিয়ে বলিÑ আমি জানি, সে খুশি হয়নি, পোগবাও খুশি নয়। কিন্তু সে ভাল করছে। গ্রিজম্যান প্রথম ম্যাচে ৬০ মিনিট খেলেছে। আমি জানি, বদলি হিসেবে নেমে সে ভাল খেলে।
×