ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আপাতত ফিরে গেলেন ডাচ্ কোচ ক্রুইফ

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৯ জুন ২০১৬

আপাতত ফিরে গেলেন ডাচ্ কোচ ক্রুইফ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পুরনো কোচকেই আবারও নতুন করে আনতে যাচ্ছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। গত ১৭ মে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে নতুন করে ফেরেন পুরনো ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। গত ২ ও ৭ জুন এএফসি এশিয়ান কাপের প্লে-অফ ম্যাচে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশ। কোয়ালিফাই করার জন্য তাই এই ম্যাচ দুটি বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু দুই ম্যাচেই হারে বাংলাদেশ (যথাক্রমে ৫-০ এবং ১-০) ক্রুইফকে মূলত এই দুটি ম্যাচের জন্য আনা হয়েছিল। ম্যাচ দুটি শেষ হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ক্রুইফের সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে আবারও তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চিন্তা করছে বাফুফের ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটি। এ প্রসঙ্গে বাফুফের সহ-সভাপতি এবং ন্যাশনাল টিমস কমিটির প্রতিনিধি তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘৭ জুনের এ্যাওয়ে ম্যাচে হারলেও আমাদের দল অনেক ভাল খেলেছে। অনেক উন্নতি চোখে পড়েছে। আজ ক্রুইফের সঙ্গে বাফুফের চুক্তি শেষ হলো। আজ সকালে বাফুফে সভাপতির সঙ্গে ক্রুইফের কথা হয়েছে। আশা করি ভুটানের সঙ্গে আমরা জিতব। ওই ম্যাচের পর আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাত দেব। এই পরিকল্পনায় জাতীয় দলের কোচ হিসেবে ক্রুইফ কিছুটা হলেও অগ্রাধিকার পাবেন। কারণ তিনি আমাদের এখানে অনেকদিন ধরেই আছেন, আমাদের খেলোয়াড়দের তিনি ভালমতোই চেনেন-জানেন।’ ক্রুইফ তার নিজ দেশ হল্যান্ডের একটি ক্লাবের (এফসি হল্যান্ড) সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ। ক্লাবের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বাংলাদেশে আবারও ফিরে আসার চেষ্টা করবেন। তখন বাফুফে আবারও তাকে নিয়োগ দেবে। প্রথমে ভুটানের সঙ্গে দুটি ম্যাচ পর্যন্ত, তারপর ভুটানের সঙ্গে জিতলে দীর্ঘমেয়াদে। তাবিথ জানিয়েছেন, ‘আগামী ১৫ জুলাই থেকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ শুরু হচ্ছে। ঠিক তখনই আমরা জাতীয় দলের জন্য কোচ ঠিক করে ফেলব। সেটা ক্রুইফও হতে পারে। আবার আমাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে দুই-তিনজন অন্য কোচেরও প্রাথমিক কথাবার্তা চলছে।’ বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, এফসি হল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলে ক্রুইফ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাফুফেকে জানাতে পারবেন তিনি বাংলাদেশে ভুটান ম্যাচের আগে আসতে পারবেন কি না। সে অনুযায়ী বাফুফে পরিবর্তী পদক্ষেপ নেবে। বুধবার তাবিথ আউয়াল নতুন কথা শুনিয়েছেন, যা সাংবাদিকদের বিস্মিত করেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বরাবরই জাতীয় দল কেমন খেলে, তাদের পারফর্মেন্সের উন্নতি হলো কি না, সেটাই বিবেচনা করেছি। তারা কত গোলে হারল, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়!’ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের প্লে-অফ হারলেও আরেকটা ‘লাইফ লাইন’ পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। সেক্ষেত্রে আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তাদের প্লে-অফের আরও দুটি ম্যাচ খেলতে হবে প্রতিপক্ষ ভুটানের বিপক্ষে। ভুটানকেও যদি হারানো না যায়, তাহলে আগামী তিন বছরÑ অর্থাৎ ২০১৯ সাল পর্যন্ত এএফসি আয়োজিত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও তাজিকিস্তান ১১ ম্যাচে পরস্পরের মোকাবেলা করেছে। তাজিকিস্তান জিতেছে ৭ ম্যাচে, বাংলাদেশ ১ ম্যাচ। ড্র হয়েছে ৩ ম্যাচ। ক্রুইফের অধীনে আড়াই বছরে বাংলাদেশ জাতীয় দল মোট ম্যাচ খেলেছে ৩২টি। জিতেছে ৭টিতে, ড্র ৮টিতে, হার ১৭টিতে। এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এই ডাচ্ কোচের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল বাফুফের। এরপর আর তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো ক্রুইফকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৪ সালের অক্টোবরে চাকরি ছেড়ে দিলে পরের বছরের জানুয়ারিতে আবারও নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। সেবার শুধু বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য তাকে রাখা হয়েছিল। এরপর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বসহ বেশকিছু ম্যাচের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ক্রুইফকে। শেষ পর্যন্ত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মাঝে দায়িত্ব পালন করেন সাইফুল বারী টিটু, ইতালিয়ান ফ্যাবিও লোপেজ ও মারুফুল হক। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দুই ম্যাচে বাজে পারফর্মেন্সের লোপেজকে বরখাস্ত করা হয়। সাফ ফুটবল ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাজে পারফর্মেন্সের জন্য মারুফুল নিজেই কোচ থাকতে আর রাজি হননি। মারুফুল হকের পর আপাতত দায়িত্ব পালন করেন স্প্যানিশ গঞ্জালো সানচেজ মোরেনো। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে তিনিই প্রথম বিদেশী কোচ, যিনি দ্বিতীয় দফায় কাজ করার সুযোগ পান। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এ তার অধীনে খেলে রানার্সআপ হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। জাতীয় ফুটবল দলের ১৭তম বিদেশী কোচ ক্রুইফ। তার অধীনে জাতীয় ফুটবল দল ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়। কোনটিতেই তার দল আশাতীত রেজাল্ট করতে পারেনি। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে ১৬৫ থেকে ১০০-১২০-এর মধ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ক্রুইফ। ক্রুইফ অক্টোবরে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৮১ (অবশ্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ভাল রেজাল্ট করায় তখন বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫৭)! সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল ক্রুইফদের মূল এ্যাসাইনমেন্ট, সেখানে সপ্তম হয় বাংলাদেশ। ব্যর্থ হন ক্রুইফ। এখন দেখার বিষয়, জাতীয় দলের আগামী দুটি ম্যাচের জন্য কোচ হিসেবে আবারও ক্রুইফকেই দেখা যায় কি না।
×