মেছের আলী
চাঁদাবাজি অতি ঘৃণিত, নিন্দিত হলেও চাঁদা শব্দটি অনেকটা স্বাভাবিক অর্থে সমাজ মেনে নেয়। চাঁদার বেলায় হুমকি কিংবা জোরাজুরি করতে হয় না। মাজার, মসজিদ, ঈদ, পূজা, মেলা, ত্রুীড়া অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, নাটক মঞ্চস্থ প্রভৃতি সামাজিক আয়োজনে চাঁদা তোলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে খুশি মনে সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দেয়া-নেয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়, আইলা, সুনামি তথা দেশে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে বিভিন্ন বিত্তবানরা চাঁদা প্রদান করেন হতগরিবদের কল্যাণে। যা অনুদান নামেই স্বীকৃত। দক্ষিণবঙ্গে সাগর তীরে জেলে-পল্লীতে এবং সাগরে জেলে নৌকায় অহরহ চাঁদাবাজি হয়ে আসছে। দিনে দুপুরে রাজধানীতে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে নীতিহীন ব্যক্তিরা নানা কৌশলে ট্রাক ও যানবাহনে চাঁদাবাজি করছে। ঘুষ ও দানের মধ্যে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। ঘুষ প্রকৃত অর্থে চাঁদাবাজির একটি শাখা। এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, ক্লাবের কথা বলে উচ্চপদে কর্মরত কর্মকর্তাগণ মক্কেলদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে ফাইল ছাড়েন, যার নাম চাঁদাবাজি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক চাঁদাবাজি ঘটছে প্রকাশ্যভাবে। সন্ত্রাসীরা বড় বড় ব্যবসায়ী ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক ছোট-বড় কর্মকর্তা-কমচারীদের ফোনের মাধ্যমে ও বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে জীবননাশের হুমকি দিয়ে বড় অঙ্কের চাঁদা হাতিয়ে নিত।
পিচ্চি হান্নান, মুরগি সেলিম, ডাকাত শহীদ, পিচ্চি আনোয়ার, শাহাদাত-এ রকম অসংখ্য সন্ত্রাসী ব্যবসায়ীদের ও চাকরিজীবীদের জিম্মি করে চাঁদাবাজি করেছে। এরূপ কার্য সর্বদাই ঘৃণিত, অনৈতিক ও অপরাধতুল্য। দুদকপ্রধান বলছেন, তার অফিসে দুর্নীতি চালু রয়েছে। ফাইল আটকিয়ে রেখে ভিন্নপথে কুকর্ম করে দুর্নীতি করছে। অনেক সময় চাঁদাবাজিকে চাঁদা হিসেবে প্রকাশ করা হয় নানা কারণে। সামাজিক ব্যাধি এক সময় মহামারী আকার ধারণ করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ফলে এই ব্যাধি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যায়। তারপরও চালু আছে চাঁদা, ঘুষ ও দুর্নীতি। ব্যাংকের অর্থ লুট, এনজিও কর্তৃক গরিবের অর্থ লুট, প্রকল্পের অর্থ ভাগাভাগি এসব দুর্নীতির আওতায় অন্তর্ভুক্ত। মূল কথা হচ্ছে চাঁদাবাজি মূলত চালু রয়েছে রাজধানী ও জেলা শহরে। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এখন সচেতন। গ্রামের একশ্রেণীর মানুষ যাদের বাস এখন শহরে তারা গ্রামের অপরের সম্পদ লুট করছে স্থানীয় তহসিল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বড় অঙ্কের ঘুষ দিয়ে। যাকে চাঁদা বলে আখ্যায়িত করা হয়।
এসব বন্ধ করা সমাজের ক্ষমতার বাইরেই থেকে যাবে? ওই শ্রেণীভুক্তরা সমাজের কতিপয় দুষ্ট ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করে নেয়। বড় কর্তারা এর আওতায় থেকে বিত্তবান হচ্ছে এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতিবাজ অংশটি তা না দেখার ভান করে। কালক্রমে দেশের সাগরে, বিমানবন্দরে, সীমান্তে, ইমিগ্রেশনে, তহসিল ও এসিল্যান্ড অফিস, ব্যাংক, এনজিও, ডিআইটি, বিআরটিএ, ভ্যাট-কাস্টম, সমাজকল্যাণ ও গৃহায়ন এবং ক্রীড়া প্রভৃতি সেক্টরে চাঁদা ও চাঁদাবাজি সাধারণ নিয়মে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করি। এতে সমাজ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর বিরুদ্ধে সরকারকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।
শ্রীনগর, পাবনা থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: