ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘আইনের শাসনের প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারেন’

ট্রাম্পের উত্থান নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৭ জুন ২০১৬

ট্রাম্পের উত্থান নিয়ে শঙ্কা

ডোনাল্ড ট্রাম্প আইনের শাসনের প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। নবেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে তার মনোনয়ন এখন প্রায় নিশ্চিত। একের পর এক লাগামছাড়া ও বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি এখন মনোযোগের কেন্দ্রে চলে এসেছেন। মনোনয়ন দৌড়ে তার সামনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই। দলীয় কনভেনশনে অনুমোদন পেলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তার মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। অভিবাসী, সংবাদপত্র, বিচার ব্যবস্থা- এর কোনটিই ট্রাম্পের সমালোচনা থেকে বাদ পড়েনি। যদিও রিপাবলিকান রাজনীতিকদের অনেকেই তাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। কিন্তু অনেক রক্ষণশীল ও আইনজ্ঞ তাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকে মনে করেন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে দেশ সাংবিধানিক সঙ্কটে পড়তে পারে। নির্বাচনের এখনও পাঁচ মাস বাকি। কিন্তু ট্রাম্প এখনই বলতে শুরু করেছেন তিনি নির্বাচিত হলে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বিদ্যমান আইন শিথিল করবেন। ফেডারেল নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে যারা তার সমালোচক রয়েছেন তাদেরও এক হাত দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। এই বিষয়টি ফার্স্ট এমেন্ডমেন্ট বা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ফার্স্ট এমেন্ডমেন্ট সংবাদপত্র এবং প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোকে সমালোচনার লক্ষ্যস্থল বানানো নিষিদ্ধ করেছে। গত ডিসেম্বরে ট্রাম্প যে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছিলেন সেটিও সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বিরোধী। অতিসম্প্রতি তিনি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানডিয়েগোর ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক গঞ্জালো কুরিয়েলের সমালোচনা করেছেন। কুরিয়েল বর্তমানে ট্রাম্প ইউনিভার্সিটির দুটি অনিয়মের তদন্ত কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। ট্রাম্প কুরিয়েল পক্ষপাতদুষ্ট অভিহিত করে নবেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারলে তিনি তার বিষয়ে একটি রফা করে ছাড়বেন বলে হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্পের হুমকির নিশানায় বিশেষভাবে রয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট ও এর মালিক এবং আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। বিচারকের সমালোচনা করে ট্রাম্প সীমা ছাড়িয়ে গেছেন বলে আইন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন। অবসরপ্রাপ্ত আইনের প্রফেসর ডেভিড পোস্ট রক্ষণশীল ঘেঁষা একটি ব্লগিংসাইটে লিখেছেন, ‘বিচারকের সমালোচনা করে ট্রাম্প সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন। তিনি লেখেন, ‘আপনি বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা করতে পারেন, আপনি যে কোন মামলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার মতামত দিতে পারেন বা কোন নির্দিষ্ট বিচারকের সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের বিষয়টি স্বতন্ত্র। তিনি আইনের রক্ষক হিসেবে শপথ নেন এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে তিনি সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। তিনি যদি ইশারা ইঙ্গিতেও বলেন এটি তার কাজ নয় তবে তা বড় সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।’ জর্জ টাউনের আইনের প্রফেসর র‌্যান্ডি বার্নেট মনে করেন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা ছাড়াও সংবিধান ফেডারেল সরকার ও বিচার ব্যবস্থার মধ্যে ক্ষমতা যেভাবে পৃথক রয়েছে ট্রাম্প সেটিরও বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংবিধান আপনার ক্ষমতার যে সীমারেখা টেনে দিয়েছে সে বিষয়ে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে আপনার ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দ অবশ্য বলছেন যে, নির্বাচিত হলে ট্রাম্প আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন বলে তারা আশা করছেন। সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা কেন্টাকি থেকে নির্বাচিত সিনেটর মিচ ম্যাককনেল বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ট্রাম্পের জন্য হোয়াইট হাউস কাউন্সেল থাকবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনটি করণীয় কোনটি করণীয় নয় সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়াই কাউন্সেলের কাজ। অন্যদিকে বর্তমানে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাহী ক্ষমতার ব্যবহারকে সাংবিধানিক খামখেয়ালিপূর্ণ ব্যবহার বলে রিপাবলিকান কর্মকর্তারা ইতোপূর্বে তার সমালোচনা করেছিলেন। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস।
×