ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিজোফ্রেনিয়া একটি মানসিক রোগ জিনভূতের বিষয় নয়

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৩১ মে ২০১৬

সিজোফ্রেনিয়া একটি মানসিক রোগ জিনভূতের বিষয় নয়

সিজোফ্রেনিয়া এক ধরনের গুরুতর মানসিক রোগ, কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ সবাই আক্রান্ত হতে পারে এ রোগে, তবে ১৫-২৫ বয়সে বেশি হয়। রোগীরা বুঝতে পারে না কি তার সমস্যা, কেন ওষুধ খাচ্ছে, কেন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। আমাদের দেশে প্রায় ০.৬% লোক সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। আমাদের দেশে মানসিক রোগীরা ঝাঁড়-ফুক, পানি পড়া, তেলপড়া, পানিতে চুবানো, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা ও বিভিন্ন কবিরাজি চিকিৎসার শিকার হয়ে আসছে। তার মধ্যে বেশি কুসংস্কার ও অপচিকিৎসার শিকার হয় সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা। কিভাবে বুঝবেন আপনার আত্মীয় সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছে কি-না? প্রধান লক্ষণ হলো : ১. চিন্তার মধ্যে গ-গোল ২. আচরণের সমস্যা ৩. অনুভূতির সমস্যা। চিন্তার মধ্যে হরেক রকম অসংলগ্নতা দেখা দিতে পারে। যেমন : * অহেতুক সন্দেহ করা : রাস্তা দিয়ে মানুষ যাচ্ছে মনে হচ্ছে তার দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তাকে দেখে হাসছে, সমালোচনা করছে। * ভ্রান্ত বিশ্বাস করা : এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রকাশভঙ্গি বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। এটা রোগীর বয়স, ধর্মীয় চেতনাবোধ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। যেমনÑআশপাশের লোকজন তার ক্ষতি করছে, খাবারে ও পানিতে বিষ মিশিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে, তাকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। * রোগীর মনের গোপন কথা না বললেও আশপাশের লোকজন জেনে যায়Ñ কেউ কেউ তারের মাধ্যমে, ফোনের মাধ্যমে, টেলিস্কোপের মাধ্যমে অথবা বা অন্য কোন অজানা যন্ত্রের মাধ্যমে জেনে যায়। * রোগীর কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা এগুলো তার নিজের না বাইরে থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। * মঙ্গলগ্রহ থেকে কেউ যেন তার সঙ্গে কথা বলছে। * সে স্বপ্নের মধ্য দিয়ে ওপর থেকে বিশেষ ক্ষমতা লাভ করছে আর তাকে নির্দেশ দিয়েছে মানুষের সেবা করার জন্য। * তার নিজের বিশেষ ক্ষমতা আছে, কারণ সে অমুক ফেরেস্তা কিন্তু রোগীর পোশাকপরিচ্ছদ ও চালচলন ঐ রকম নয়। * অনেকে বলে আমার সঙ্গে পরীর যোগাযোগ আছে। * এমনও দেখা গেছে নিজের বাবার নাম পরিবর্তন করে অন্য একজনের নাম বলে কিন্তু সুুস্থ হওয়ার পর আবার নিজের বাবার নাম ঠিক বলছে। আচরণের সমস্যা ১. এই হাসছে আবার কোন কারণ ছাড়াই কাঁদছে। ২. হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া, মারতে উদ্যত হওয়া। ৩. বকাবকি ও গালিগালাজ করা। ৪. বাথরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা। ৫. মানুষের সঙ্গে মিশতে না চাওয়া। ৬. একা ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ জীবনযাপন করা। ৭. হঠাৎ করে কাপড় বা অন্য কিছুতে আগুন ধরিয়ে দেয়া। ৮। বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ানো (দিনের পর দিন) অথচ আগে এমন আচরণ ছিল না। ৯। হারিয়ে যাওয়া যেমন ব্রিজের নিচে, মাজারে, গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকা। ১০। আত্মহত্যার চেষ্টা করা। ১১। উল্টাপাল্টা আচরণ করা ও কথা বলা। ১২। গায়ের কাপড় চোপড় সবার সামনে খুলে ফেলা। ১৩। নিজের পায়খানা প্রসার মুখে দেয়া ও দেয়ালে লাগালো। ১৪। নিজের খাওয়া দাওয়া ঘুম ও শরীরের প্রতি খেয়াল না রাখা। অনভূতির সমস্যা ১। গায়েবী আওয়াজ শোনা : আশপাশে কোন লোকজন নেই, অথচ রোগীরা কথা শুনতে পায় : কেউ কেউ একদম স্পষ্ট কথা শুনতে পায় ২/৩ জন লোক রোগীর উদ্দেশ করে কথা বলছে। ২। আবার কখনও ফিসফিস আওয়াজ, পাখির ডাকের মতো শব্দ শুনতে পায়। এ কথা শোনার কারণে অনেকে কানে তুলো বা আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকে। ৩। নাকে বিশেষ কিছুর গন্ধ পাওয়া। ৪। চামড়ার নিচে কি যেন হাঁটছে, এরকম অনুভূতি লাগা। উপরের লক্ষণগুলোর কারণে রোগীর যদি শিক্ষাজীবন, পারিবারিক জীবন, কর্মজীবন ও সামাজিক জীবনের ব্যাঘাত ঘটে এবং লক্ষণগুলো ৬ মাসের অধিক সময় থাকে, তখন তাকে আমরা সিজোফ্রেনিয়া হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। এটা পরিষ্কার যে, সিজোফ্রেনিয়া একটি মানসিক রোগ। সঠিক চিকিসৎসা ও পরিবারের আন্তরিকতার মাধ্যমে রোগীরা ফিরে পেতে পারে সুস্থ স্বাভাবিক কর্মজীবন ও সংসার জীবন। ডা. দেলোয়ার হোসেন মনোচিকিৎসক, মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
×