ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাকৃবি বোটানিক্যাল গার্ডেন উদ্ভিদের বিরল সংগ্রহশালা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৮ মে ২০১৬

বাকৃবি বোটানিক্যাল গার্ডেন উদ্ভিদের বিরল সংগ্রহশালা

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের বিরল সংগ্রহশালা বোটানিক্যাল গার্ডেন। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ, চিরহরিৎ বনাঞ্চল, ঝাউ-থুজা, ঊষর মরুর বুকে প্রাণ জাগানিয়া রক গার্ডেন, শাপলা-পদ্মফুলের ঝিল, কৃত্রিম দ্বীপ, নারিকেল কর্ণার, বিলুপ্তপ্রায় বাঁশ-ঝাড়সহ বিচিত্রসব উদ্ভিদরাজির সমাহার এ বোটানিক্যাল গার্ডেন। প্রচলিত ও অপ্রচলিত উদ্ভিদরাজি সমন্বয়ে গঠিত ৩০টি জোনে বিভক্ত দেশী-বিদেশী বিভিন্ন অঞ্চলের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় কয়েক সহস্র উদ্ভিদের বিশাল সংগ্রহশালা এ বোটানিক্যাল গার্ডেন। সরকারী হিসাব মতে দেশের মোট চারটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে সর্বাধিক উদ্ভিদ প্রজাতির অ্্্াঁধার এই গার্ডেন জীব বৈচিত্র্যের দিক দিয়েও সবচেয়ে এগিয়ে। বোটানিক্যাল গার্ডেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা বোটানিক গার্ডেনস কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল (বিজিসিআই) কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেন এটি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২ বছর পর ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মাত্র ১০ একর জমি নিয়ে বোটানিকাল গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব প্রান্তে উপাচার্যের বাসভবন সংলগ্ন পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত গার্ডেনটির বর্তমান আয়তন প্রায় ২৫ একর। উদ্ভিদ অরণ্যানী এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে দেশী প্রায় সব প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি বিদেশী অনেক বিরল প্রজাতির উদ্ভিদেরও দেখা মিলবে। ছোট-বড়-মাঝারি ধরনের অসংখ্য গাছে ভরপুর এ গার্ডেনে রয়েছে প্রায় ১০০০টি বড়, ১২৭৮টি মাঝারি ও ৪৪৬৭টি ছোট গাছসহ প্রায় ৬০০ প্রজাতির উদ্ভিদ। সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত এসকল বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল উদ্ভিদসমূহকে সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য গার্ডেনটিকে মোট ৩০টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। ঔষধী, ফুল, ফল, ক্যাকটাস, অর্কিড, পাম, ফাইকাস, মসলা, টিম্বার, বাঁশ, বেত, বিরল উদ্ভিদ ও বনজ উদ্ভিদ জোনসহ জলজ উদ্ভিদ (হাইড্রোফাইটিক) সংরক্ষণের জন্য ওয়াটার গার্ডেন এবং মরুভূমি ও পাথুরে অঞ্চলের উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য রক গার্ডেন গড়ে তোলা হয়েছে। অফিস কক্ষসংলগ্ন নিসর্গ ভবনের ভেতরে রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় অসংখ্য প্রজাতির ক্যাকটাস। এর অপরূপ সৌন্দর্যই যেন এর নিসর্গ নামের সার্থকতা বহন করছে। আর বাগানের সর্ব দক্ষিণে রয়েছে মনোরোম অর্কিড হাউস। এ জোনে আরও রয়েছে গরান, গেওয়া, কেওড়া, পশুর, বাইন, হোগলা ও ফার্ণ জাতীয় নানা প্রজাতির উদ্ভিদ। এখানকার ঔষধি জোনে রয়েছে ২২৫ প্রজাতির ওষধি উদ্ভিদ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অশ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, গন্ধভাদুলী, পুনর্নভা, কুর্চি, বচ, উলটচন্ডাল, অন্তমূল, অঞ্জন ইত্যাদি। ফলের মধ্যে রয়েছে: স্টার আপেল, আমেরিকান পেয়ারা, থাই মালটা, আঙ্গুর, প্যাসান ফল এবং বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল। বিভিন্ন ধরনের ফুলের মধ্যে রয়েছে কমব্রিটাম, রনডেলেসিয়া, পালাম, ক্যামেলিয়া, আফ্রিকান টিউলিপ, ট্যাবেবুঁইয়া, রাইবেলী, ডায়ান্থাস, ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- রাজঅশোক, ডেফল, নাগলিঙ্গম, কালাবাউস, ক্যারিলিফ, ফলসা, মনগোটা, মাক্কি, বনভুবি, লোহাকাট, উদাল, পানবিলাস, টেকোমা, বয়রা, হরীতকী, কাটাসিংড়া, ম্যালারিউকা, প্যাপিরাস, রাইবেলী, রুপিলিয়া, স্ট্যাভিয়া, হিং, পেল্টোফোরাম ইত্যাদি। শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীদের জন্য এর গার্ডেনটি সপ্তাহের রবি থেকে বৃহস্পতিবার ৫ দিন বিকাল ২টা থেকে ৫টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারলেও, বহিরাগত দর্শনার্থীদের ১০ টাকার প্রবেশ কুপন সংগ্রহ করতে হয়। গার্ডেনটি থেকে প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হয়। বোটানিক্যাল গার্ডেনের কিউরেটর ও ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, দেশের প্রাকৃতিক ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদসমূহের এক অনন্য সংগ্রহশালা এ গার্ডেনটি উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গবেষণার একটি অন্যতম হাতিয়ার। প্রতি বছর এ গার্ডেনের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদসমূহ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী স্বনামধন্য পরিবেশ ও উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। ে আবুল বাশার মিরাজ
×