ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ

সাক্ষাতকার ॥ চিকিৎসক মানুষ সেবার কারিগর শুধু নন রোগ নিরাময়ের নিখুঁত শিল্পীও

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৩ মে ২০১৬

সাক্ষাতকার ॥ চিকিৎসক মানুষ সেবার কারিগর শুধু নন রোগ নিরাময়ের নিখুঁত শিল্পীও

জনকণ্ঠ : একুশে পদক পেয়ে আপনার কেমন লাগছে? ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : আমি কখনো পুরস্কারের কথা ভেবে কাজ করি না। একুশে পদক পেয়ে অবশ্যই ভাল লাগছে। ভাষা শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি সব সময়। আল্লাহর রহমত ও মানুষের দোয়ার কারণে এ পুরস্কারপ্রাপ্তি সম্ভব হয়েছে। দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং মানুষের প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে একসময় স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তরুণ চিকিৎসকরা এ বিষয়টি মনে রেখে তাদের কর্মময় জীবনকে সার্থক করবেনÑ আমার প্রত্যাশা। মানুষের সেবা করার মধ্যেই আমি শান্তি ও তৃপ্তি খুঁজি। জনকণ্ঠ : গবেষণা ক্যাটাগরিতে আপনাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে। আপনার গবেষণার বিষয় কী ছিল? ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : আমি একজন চিকিৎসক। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবাই আমার ধ্যান-জ্ঞান। শিক্ষকতা ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছি; যেগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গৃহীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাঠক বইগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন গবেষণা কাজে ব্যবহার করে আসছেন। সেগুলোর মধ্যে ৬টি বই হচ্ছে- শর্ট কেসেস ইন ক্লিনিক্যাল মেডিসিন, রেডিওলজি ইন মেডিক্যাল প্র্যাকটিস, ডাটা ইন্টারপ্রিটিশন ইন মেডিক্যাল প্র্যাকটিস, ইসিজি ইন মেডিক্যাল প্র্যাকটিস, লং কেসেস ইন মেডিক্যাল প্র্যাকটিস ও প্র্যাকটিক্যাল মেন্যুয়েল ইন ক্লিনিক্যাল। আমার লেখা বইগুলোর মধ্যে শর্ট কেসেস ইন ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বইটি দু’বছর আগে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনে পুরস্কৃত হয়েছে। এছাড়া আমি গণমাধ্যমে লেখালেখি করে চলেছি প্রচুর। বড় পত্রিকাগুলোয় স্বাস্থ্যবিষয়ক এবং স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে অহরহ। ওষুধের ভুল ব্যবহার, অপচিকিৎসার কুফল, চিকিৎসক-রোগী সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমে আমার লেখাগুলো পাঠকদের কাছে বেশ কদর পাচ্ছে। এসব লেখা দিয়ে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্বাচিত কলাম’ নামে একটি বইও আমার প্রকাশিত হয়েছে। জনকণ্ঠ : আপনি ইতোমধ্যে দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলবেন? ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : আমার এ পর্যন্ত আসার পথ মসৃণ ছিল না। অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ ছাড়াও প্রচুর গবেষণা করতে হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নানা পদে কাজ করেছি। বাল্যজীবনে প্রথমে ভর্তি হলাম জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার হারিয়াবাড়ী প্রাইমারি স্কুলে। প্রাইমারি শেষ করে ইসলামপুর নেকজাহান হাইস্কুলে ভর্তি হই। গ্রামীণ জনপদের খুবই সীমিত সুযোগ-সংবলিত ওই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। স্কুল জীবনে সব সময়েই ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলাম। খেলাধুলাতেও ছিলাম পারদর্শী। সব সময়েই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছি। ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হই ঢাকা কলেজে। ১৯৭২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঢাকা মেডিক্যালের প্রথম ব্যাচই ছিল আমাদের। ’৭৮ সালে এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করেই পোস্টিং নিয়ে চলে যাই নিজের সেই চিরপরিচিত গ্রামে। পরে ঢাকা মেডিক্যালে পোস্টিং পাই। আমার চাকরি জীবনের একপর্যায়ে ১৯৮৪ সালে সৌদি আরব যাই। ওখান থেকেই উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য মনস্থির করি। ১৯৯২ সালে লন্ডনের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান এ্যান্ড সার্জনস থেকে এমআরসিপি ডিগ্রী অর্জন করি। এরপর দেশে ফিরে এসে রেড ক্রিসেন্ট হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মেডিসিন কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করি। পরবর্তী সময়ে পিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালে তৎকালীন আইপিজিএসআরে (পিজি) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেই; যা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর থেকে আমি এখানেই রয়েছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও মেডিসিন অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। জনকণ্ঠ : চিকিৎসা সেক্টরে আপনি একজন সফল ব্যক্তিত্ব। আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন। ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : বাংলাদেশের আর দশটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার হাড়িয়াবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫৪ সালে আমার জন্ম। পারিবারিক জীবনও অনেকটা চিকিৎসক পরিবার। স্ত্রী মাহমুদা বেগম রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। ছেলে সাদি আবদুল্লাহ ও মেয়ে সাদিয়া সাবাও মেডিসিনের চিকিৎসক। জনকণ্ঠ : আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষকতা ও রোগী দেখার দায়িত্ব। এমন ব্যস্ততার মধ্যে আপনি কিভাবে আন্তর্জাতিকমানের এতগুলো মেডিক্যাল শিক্ষাবিষয়ক বই লেখেন? ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : কাজের প্রতি আগ্রহ, অধ্যবসায়, আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব। আমার বেলাতেও তাই হয়েছে। আমি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠি। শুরু করি লেখালেখি। সকাল ৮টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকি। কখনো চায়ের টেবিলে বসি না, আড্ডা দেই না। অতি প্রয়োজন না হলে কোন সভা, সেমিনার বা আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করি না। সময় বাঁচিয়ে তা বই লেখা ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করি। তবে আমার কাছে এসে কোন রোগী ফেরত যান না। শত কাজের মধ্যেও আমি আগত রোগীকে সময় দেই। বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাসাতেও পরিবারের সদস্যদের সময় দেয়ার পাশাপাশি লেখালেখির কাজ করি। ঘুমাতে অনেক রাত হয়ে যায়। পরিবার আমাকে খুব সহযোগিতা করে থাকে। তাদের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েই আমি নিজ দায়িত্ব পালন ও লেখালেখিতে উৎসাহিত হই। জনকণ্ঠ : দেশে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে অনেক মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠেছে। দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার বর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন। ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার উন্নতি হয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিকমানের হয়ে ওঠেনি। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। মজবুত অবকাঠামো ছাড়াই ঢালাওভাবে অনেক মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠছে। বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ সঙ্কট রয়েছে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর শিক্ষকদের যোগ্যতা ভালভাবে মনিটরিং করা হয় না। একজন শিক্ষককে শিক্ষাদান ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয়। অনেক সময় শিক্ষাদানের তুলনায় চিকিৎসাদানে বেশি সময় দিতে হয় শিক্ষকদের। অনেক শিক্ষক একাধিক মেডিক্যাল কলেজে সম্পৃক্ত থাকেন। মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান বজায় রাখতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। ভাড়াটে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না। চিকিৎসকদের মধ্যেও রাজনৈতিক দলাদলি চলে। চিকিৎসাসেবা এক ধরনের শিল্পকলা। কেবল অর্থ উপার্জন নয়, এর বাইরেও চিকিৎসাশাস্ত্র ও চিকিৎসাসেবাকে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে দেখারও সুযোগ আছে। আমি এ পেশাকে বেছে নিয়েছি ভিন্ন একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। রোগীর আর্থ-সামাজিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করে চিকিৎসাবান্ধব একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারলে রোগীর মননকে স্পর্শ করা সহজ। এটা একটা শৈল্পিক কৌশল। এভাবে রোগী-চিকিৎসক সম্পর্ক চিকিৎসাসেবাকে দৃশ্যমান মাত্রায় অর্থবহ করে। সেই অর্থে আমার মতো একজন চিকিৎসক মানুষ সেবার কারিগরই শুধু হন না, রোগ নিরাময়ের একজন নিখুঁত শিল্পীতে পরিণত হন। চিকিৎসকরা আর মহৎ নেই এ বিষয়ে মানুষের যে অভিযোগ, সেটা পুরোপুরি অযৌক্তিক নয়। কোন পেশাই যেন এখন আর মানবিক নেই। পুরোদমে ক্যান্সারাস পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকরাও আর এর বাইরে নেই। তবে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে, শ্রম দিয়ে, মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। অন্য পেশার মতো এই পেশা নয়। এটা অনেক স্পর্শকাতর পেশা। তাই ভালভাবে না লেখাপড়া করলে ভাল চিকিৎসক হওয়া যাবে না। প্রকৃত চিকিৎসক হতে না পারলে চিকিৎসক আর রোগীদের দূরত্ব বাড়তে থাকবে। আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা দানোপযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বেশিরভাগ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের অবকাঠামো, লেখাপড়ার পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার যেন শেষ নেই। চিকিৎসা শিক্ষা কিংবা চিকিৎসাসেবার এতগুলো ঐতিহ্যবাহী ও খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও আত্মনির্ভরশীল হওয়া তো দূরের কথা, এ দীর্ঘ সময়ে এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম আস্থাটিও বোধ করি অর্জন করতে পারিনি আমরাও। আর এ কারণে চিকিৎসা শিক্ষা বা চিকিৎসাসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে বলতে গেলে প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে নানা অবাঞ্ছিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা। দেশে স্বাস্থ্যসেবার এতসব উদ্যোগ-আয়োজন থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও অন্য সামর্থ্যবানসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যে ঘন ঘন বিদেশে যাতায়াত করেন, সেটাও মূলত অনাস্থা, অবিশ্বাস ও সন্দেহের কারণেই। এটা কেমন কথা যে, দেহে কোন রোগবালাই আছে কিনা, তা শনাক্ত করতেও বিদেশের হাসপাতালগুলোর শরণাপন্ন হতে হবে? তাই জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ ও বিভাগে-বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা ও সেবার মান নিশ্চিত করা কিংবা বাড়ানোটা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে। জনকণ্ঠ : দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একের পর এক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠছে। এমন অবস্থায়, দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার অবস্থান কোথায়? ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামো নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। এশিয়ার কোথাও এমন মজবুত অবকাঠামো নেই। আয়তনের তুলনায় বিশাল জনগোষ্ঠীকে সীমিত সম্পদ ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে সরকার অনেক কৃতিত্বের দাবি রাখে। স্বাস্থ্য সেক্টরে বরাদ্দকৃত সরকারী অর্থ ও উপকরণসমূহের সদ্ব্যবহার নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিক দায়িত্ব পালনের ওপর। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সরকারী অর্থ ও উপকরণসমূহের সঠিক ব্যবহার হয় না। এজন্য অনেকাংশেই মাঠ পর্যায়ের লোকজন দায়ী। আমাদের দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোয় বিনামূল্যে অনেক ব্যয়বহুল ও জটিল রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় দেখা যায় না। অর্থাৎ সরকারী বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হলে অধিকাংশ মানুষকেই বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র খরচে ব্যয়বহুল চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। সরকারী উদ্যোগের কমতি দেখছি না। সমন্বিত উদ্যোগে এই সমস্যাসমূহের সমাধান করতে হবে। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আন্তর্জাতিকমানের না হলেও অনেক উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসা ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। নিম্নমান হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যাও অনেক। ওষুধ ক্রয় ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়েই মূল চিকিৎসার টাকা ফুরিয়ে যায়। বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে সেবামূলক হয়ে উঠতে হবে। অতি দরিদ্রদের জন্য বেশি করে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এতে সরকারী ও বেসরকারীভাবে সমন্বয় গড়ে উঠবে। টাকার অভাবে অকালে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে না। জনকণ্ঠ : মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কিছু বলুন। ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : শিক্ষার্থীরা যেন আমার চেয়েও সুনাম পায়। মেডিক্যাল নিয়েই এখন আমার বেশি চিন্তা। কিছু বইপুস্তক লেখা হয়েছে তা পড়ে যদি শিক্ষার্থীদের ভাল লাগে তবে আমার আনন্দ। এখন আশা, আমার শিক্ষার্থী, সন্তানরা যেন ভাল চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারে। আমার ছাত্ররা যেন আমার থেকেও ভাল করে। তাদের সুনাম বাড়লে সেটা আমার জন্য হবে বড় পাওয়া। তাদের মনে রাখতে হবেÑ মেডিক্যাল শিক্ষা স্পর্শকাতর ও বাস্তবভিত্তিক বিষয়। এই সেক্টরে মুখস্থবিদ্যা এবং ক্লাসে নামমাত্র উপস্থিতি কাম্য নয়। ভাল লেখাপড়া, বাস্তব জ্ঞান ও তা প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ভাল চিকিৎসক হওয়া যায়। জনকণ্ঠ : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ : বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি। নতুন নতুন মেডিক্যাল শিক্ষার বই রচনা ও গবেষণা কাজ অব্যাহত রয়েছে। নিজে যতটুকু অর্জন করেছি, এটা যেন ধরে রাখতে পারি। এখন হাসপাতালে ব্যস্ততার মাঝে সময় কাটে। বিকেলে চেম্বারে প্র্যাকটিস করি। নিজের এলাকায়, গ্রামে সামাজিক কিছু কাজ করি। এগুলো করতে পারলে ভাল লাগে। আমার জমিতে সরকারের মাধ্যমে ক্লিনিক করেছি। এতে এলাকার মানুষের উপকার হচ্ছে। আমি মনে করি, মানুষ তো আর বেঁচে থাকবে না। তবে জীবনের শেষ পর্যন্ত কিছু ভাল কাজ করতে পারলে সেটাই রয়ে যাবে।
×