ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিএম. মোস্তফা

ফুরিয়েই গেলেন ফেদেরার

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২০ এপ্রিল ২০১৬

ফুরিয়েই গেলেন ফেদেরার

কি জিতেননি রজার ফেদেরার। গত দেড় দশক ধরেই টেনিস বিশ্বের আলোচিত নাম। অসাধারণ সব পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। গত ১৪ বছর ধরেই টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে অবস্থান করছেন তিনি। রেকর্ড ৩০২ সপ্তাহ বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে ছিলেন ফেড এক্সপ্রেস। যার মধ্যে ২৩৭ সপ্তাহ ছিলেন টানা শীর্ষে। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৭টি গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেয়েছেন সুইজারল্যান্ডের এই টেনিস তারকা। কিন্তু সেই ফেদেরার যেন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছেন! ২০১২ সালের পর আর কখনোই মেজর কোন শিরোপা জিততে পারেননি তিনি। তাই ৩৪ বছর বয়সী এই সুইস কিংবদন্তির ক্যারিয়ারই এখন হুমকির মুখে। অনেক টেনিসবোদ্ধাই মনে করছেন ফুরিয়েই গেছেন রজার ফেদেরার! তবে শিরোপা-খরা ঘুচানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ফেদেরার। কিন্তু এবারও পারলেন না সুইস তারকা। শুক্রবার ফরাসী তারকা জো উইলফ্রেইড সোঙ্গার কাছে হেরে মন্টে কার্লো মাস্টার্সের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলে এবারও স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তার। শেষ আটের লড়াইয়ে এদিন ফ্রেঞ্চ তারকা সোঙ্গা ৩-৬, ৬-২ এবং ৭-৫ সেটে পরাজিত করেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নম্বর ওয়ান তারকা ফেদেরারকে। এই টুর্নামেন্টে বার বার হোঁচট খেয়েছেন ফেদেরার। চারবার খেলেছেন ফাইনাল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই টেনিস কিংবদন্তির, কখনোই মন্টে কার্লো মাস্টার্সের শিরোপাটা ছোঁয়া হয়নি তার। অথচ ১৭টি গ্র্যান্ডসøামসহ মোট ৮৮টি শিরোপা নিজের শোকেসে তুলেছেন ফেদেরার। গত ফেব্রুয়ারিতে হাঁটুতে অস্ত্রপচার করা হয় রজার ফেদেরারের। যে কারণে এটা ছিল তার কোর্টে ফেরার টুর্নামেন্ট। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা পেরুতে পারেননি তিনি। তবে সোঙ্গার বিপক্ষে হারলেও লড়াই করেছেন ঠিকই। তিন সেটের কঠিন লড়াইয়ে খেলেছেন ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট। তাই এই পরাজয়ের আগে ব্যাক টু ব্যাক খেলতে পেরেই আনন্দিত ফেদেরার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মন্টে কার্লো মাস্টার্সে ব্যাক টু ব্যাক খেলতে পেরেই আমি আনন্দিত। এটাও খুব ভাল খবর যে, তার বিপক্ষে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট খেলতে পেরেছি। প্রকৃতপক্ষে এই সময়ে আমার শরীর যে ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তার অনুভূতি খুবই ভাল।’ মন্টে কার্লো মাস্টার্সে শেষ পর্যন্ত শিরোপার হাসি হেসেছেন রাফায়েল নাদাল। রজার ফেদেরারের মতো টেনিস কোর্টে বাজে সময় কাটছে নাদালেরও। অবশেষে ফ্রান্সের গায়েল মনফিলসকে হারিয়ে দীর্ঘ দুই বছর পর মাস্টার্স ১০০০ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন স্প্যানিশ টেনিস তারকা। দীর্ঘদিন পর টেনিস কোর্টে নিজেকে স্বরূপে ফিরে পেয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত নাদাল। এ বিষয়ে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নম্বর ওয়ান তারকা নাদাল বলেন, ‘আবারও মাস্টার্স শিরোপা জেতা সত্যিই অন্যরকম এক অনুভূতি। গত বছরটা আমার ভাল যায়নি। কিন্তু এবার আমার প্রস্তুতি অনেক ভাল। যদিও বছরের শুরুটা ভাল হয়নি। আশা করছি এই সপ্তাহটা সামনে এগিয়ে যেতে আমাকে দারুণভাবে সাহায্য করবে।’ তবে গত দুটি মৌসুমে শিরোপা-খরায় ভোগা নাদাল কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কোর্টে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়ার জন্য আলাদা করে অনুশীলন করেছেন তিনি। যার ফল হিসেবেই এই সাফল্য। এ বিষয়ে ২৯ বছর বয়সী নাদাল বলেন, ‘আমার অনেক সময় বড় বড় টুর্নামেন্ট না জিতেই কেটেছে। যে কারণে এই মুহূর্তটা আমার জন্য খুবই উপভোগ্য। এই শিরোপা জয়ের জন্য আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। অনেক কঠিন সময়ের পর আমার জন্য এটা অবশ্যই আবেগীয় মুহূর্ত। এই সময়টা আমি খুব উপভোগ করছি। তবে খারাপ সময়টাও জীবনেরই অংশ, ক্রীড়া জগতে তো এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আজ আমি খুবই আনন্দিত। আমি মনে করি এবং আমার বিশ্বাস, ইন্ডিয়ান ওয়েলস ও মন্টে কার্লো মাস্টার্স-এই দুটি টুর্নামেন্টে আমি খুব উচ্চমানের পারফর্ম করেছি। প্রকৃতপক্ষে আমার যা দরকার ছিল। কেননা গত বছরটা আমার জন্য অনেক কষ্টের ছিল। সে বিষয়ে আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’ টেনিস কোর্টে নাদাল-ফেদেরারের যখন দুঃসময় তখন এককভাবেই রাজত্ব করছেন নোভাক জোকোভিচ। গত মৌসুমে চার গ্র্যান্ডসøাম টুর্নঅমেন্টের তিনটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। মৌসুমের তৃতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেন দুটির ফাইনালেই রজার ফেদেরারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন সার্বিয়ান তারকা। দুইবার ১৮টি গ্র্যান্ডসøাম জয়ের রেকর্ড গড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালেও ফেদেরারকে তা হতে দেননি নোভাক জোকোভিচ। যে কারণে ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্যের উইলিয়াম রেনশ আর আধুনিক টেনিসের অন্যতম সেরা মার্কিন কিংবদন্তি পিট সাম্প্রাসের মতো ফেদেরারকেও সাতটি উইম্বলডন শিরোপা এবং ১৭টি গ্র্যান্ডসøাম নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। গত তিন বছর ধরেই মেজর শিরোপা জিততে ব্যর্থ হওয়া ফেদেরারের স্বপ্ন ছিল ১৮তম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের। ছাড়িয়ে যাবেন কিংবদন্তি পিট সাম্প্রাসকে। কিন্তু স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেল বর্তমান টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে থাকা ফেদেরারের। তবে ফেদেরারের পারফর্মেনসে এখনও মুগ্ধ জোকোভিচ। তার বিপক্ষে খেলাটা সব সময়ই চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এ বিষয়ে নোভাক জোকোভিচ বলেন, ‘আমি জানতাম রজার যেভাবে সবসময় খেলে ঠিক সেভাবেই খেলবে; নিজের সেরাটা দেবে ওর বিপক্ষে খেলাটা সব সময়ই চ্যালেঞ্জের। আমি আগেও বলেছি এবারও বলতে চাই, রজারের বিপক্ষে খেলা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমার প্রজন্মের অনেক খেলোয়াড়ই তাকে দেখে এবং তার আধিপত্য দেখে দেখেই বড় হয়েছে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, রজারের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমাদের প্রজন্মের অনেক খেলোয়াড় তার খেলা অনুসরণ করেছে।’ আসছে আগস্টেই ৩৫ বছর পূর্ণ করবেন রজার ফেদেরার। একজন টেনিস খেলোয়াড়ের জন্য বয়সটা একটু বেশিই। তবে বয়সের ফ্রেমে নিজেকে বেঁধে রাখতে নারাজ ফেদেরার। বরং বছরের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেনেই ক্যারিয়ারের ১৮তম মেজর শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
×