ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাবটি এখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ থেকে সিনেটে উঠেছে

অভিশংসন ভোটে হার রুসেফের

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

অভিশংসন ভোটে হার রুসেফের

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ রবিবার সন্ধ্যায় দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অভিশংসন ভোটে হেরে গেছেন। এর ফলে তার অপসারিত হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেল এবং রিও ডি জেনেরিওতে গ্রীষ্মকালীর অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাত্র চার মাসেরও কম সময় আগে ব্রাজিলের রাজনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হলো। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও ওয়েবসাইটের। রুসেফকে ক্ষমতাচ্যুত করার এ চেষ্টা সমাজকে গভীরভাবে বিভক্ত করে দিয়েছে এবং দেশটিতে এক মারাত্মক রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। ব্রাজিল এমনিতেই এখন ১৯৩০-এর দশকের পর সবচেয়ে শোচনীয় অর্থনৈতিক মন্দায় নিমজ্জিত রয়েছে। রুসেফের অভিশংসন প্রস্তাবটি এখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ থেকে সিনেটে উঠেছে এবং সিনেট তাকে রবখাস্ত করতে পারে। রবিবার পাঁচ ঘণ্টা ধরে ভোট গ্রহণ শেষে রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন নিম্নকক্ষের স্পীকার এদুয়ার্দো কুনহা। নিম্নকক্ষের ৫১৩ জন ডেপুটির (সদস্য) মধ্যে ৩৬৭ জন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন। বিপক্ষে ‘না’ ভোট দেন ১৬৭ জন। অন্যদের মধ্যে সাতজন ভোটদানে বিরত থাকেন এবং দুইজন ডেপুটি অনুপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া শুরু করতে নিম্নক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ বা ৩৪২ জন ডেপুটির সমর্থন প্রয়োজন ছিল। রুসেফের বিরোধিরা তার চেয়ে বেশি ভোট টানতে সমর্থ হন। ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট রুসেফ অবৈধভাবে আর্থিক সাফল্যের ব্যাপারে মিথ্যা হিসাব দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানির একটি বড় দুর্নীতিতে তার নাম এসেছে। এছাড়া বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধসের জন্যও তার সরকারকে বিরোধীরা দায়ী করে আসছেন। এসব অভিযোগে তাকে অভিশংসনের মুখোমুখি করার দাবি তোলে দেশটির কংগ্রেসের বিরোধীদলীয় সদস্যরা। রুসেফ অভিযোগ অস্বীকার করে অভিশংসনের ভোটকে ‘অভ্যুত্থান চেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটা তাকে ‘ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র। এর জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মিশেল তেমেরকে দায়ী করেছেন রুসেফ ও তার ক্ষমতাসীন দল ওয়ার্কার্স পার্টি। কিন্তু অভিশংসনের উদ্যোগে প্রথম প্রক্রিয়ায় কংগ্রেস কমিটির ভোটাভুটিতে তিনি হেরে যান। কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য অভিশংসনের পক্ষে মত দেন। কমিটির অনুমোদনের পর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। অভিশংসনের প্রস্তাব এখন নিম্নকক্ষ থেকে উচ্চকক্ষ তথা সিনেটে উঠেছে। সিনেটে বিষয়টি নিয়ে ফের ভোট গ্রহণ করা হবে। ৮১ সদস্যের সিনেটের ৪১ জন সদস্য ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলেই পরবর্তী ১৮০ দিন বা ছয় মাসের জন্য ক্ষমতা থেকে অপসারিত হবেন প্রেসিডেন্ট রুসেফ। এ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু সিনেটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য অভিশংসনের পক্ষে ভোট না দিলে অভিশংসন প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যাবে এবং যথারীতি প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন রুসেফ। অভিশংসনের প্রস্তাবটি সিনেটের অনুমোদন পেলে সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি সিনেটে শুনানির মুখোমুখি হবেন প্রেসিডেন্ট রুসেফ। ছয় মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করে প্রেসিডেন্ট ‘দোষী’ না ‘নির্দোষ’ তা নির্ধারণে ফের ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটে প্রেসিডেন্ট ‘নির্দোষ’ প্রমাণ হলে বহিষ্কারাদেশ বাতিল হয়ে ফের প্রেসিডেন্ট পদে বহাল হবেন রুসেফ, আর ‘দোষী’ প্রমাণিত হলে এ পদ থেকে স্থায়ীভাবে অপসারিত হবেন। অভিশংসন থেকে রক্ষা পেতে শেষ চেষ্টা হিসেবে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন রুসেফ। কিন্তু তা কাজে আসেনি। এছাড়া কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের ভোটের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশটির সুপ্রীমকোর্ট তা খারিজ করে দেন। এদিকে এই ভোট নিয়ে দেশটিতে রুসেফের পক্ষ-বিপক্ষের দুই দলের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনার আশঙ্কা করা হয়। ভোটের আগে কংগ্রেস ভবনের বাইরে রুসেফের পক্ষের ও বিপক্ষের লোকজন জড়ো হয়। লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল ১৯৩০-এর দশকের পর এখন সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দায় নিমজ্জিত। দেশটিতে ভয়াবহ জিকা মহামারি ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া দেশটির নেতারা আগে থেকেই দলাদলি ও দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িত রয়েছেন। তাই ব্রাজিল এখন ২০০৯ সালের চেয়ে অনেক বেশি অসন্তোষ ও বিভাজন কবলিত এক দেশ। অথচ সেই সালে চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য ব্রাজিলকেই বেছে নেয়া হয়েছিল।
×