ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সভাপতি পদে সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুল

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

সভাপতি পদে সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খুব বেশিদিন আর বাকি নেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বহুল আলোচিত নির্বাচনের। এতদিন ধারণা করা হয়েছিল টানা দুইবারের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের বিপরীতে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দেখা যাবে না। যেমনটা দেখা যায়নি গতবারের নির্বাচনেও। সেবার একাধিক প্রার্থী নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র কিনলেও শেষ মুহূর্তে এসে পিছুটান দেন অর্থাৎ নাম প্রত্যাহার করেন। এবার সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি মহল প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এলেও তাদের তরফ থেকে কখনই ঘোষণা আসেনি কে হচ্ছেন সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। এমনকি অনেকেই শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি মনজুর কাদেরের নাম বললেও মনজুর কাদের নিজে বলেছেন তিনি বাফুফের কোন পদের জন্য লালায়িত নন এবং কখনই নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। ফলে ফুটবলবোদ্ধারা ধরেই নিয়েছিলেন সালাউদ্দিনের বিপরীতে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দেখা যাবে না। কিন্তু শনিবার পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এক লাখ টাকা দিয়ে সভাপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান। তিনি বাফুফের ভোটার এবং নরসিংদী জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হয়ে বর্তমান সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের বিপরীতে বাফুফের সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন। এতদিন পর্যন্ত সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী কে হবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। বিভিন্ন জনের নাম শোনা গিয়েছিল। শোনা গিয়েছিল আব্দুল মাতলুব আহমেদ, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর নাম। শেষ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের বিপক্ষে নির্বাচন করবেন নরসিংদীর ওই সংসদ সদস্য। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন টঙ্গী ক্রীড়াচক্রের সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু। এছাড়া সহসভাপতি পদে তাবিথ আউয়াল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সদস্য পদে মনোনয়নপত্র কিনেছেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার সাইফুর রহমান মনি, সংগঠক সাব্বির হোসেন ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ মহিদুর রহমান মেরাজ এবং রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা হাজী টিপু সুলতান। নির্বাচন উপলক্ষে তিন সদস্যবিশিষ্ট বাফুফের নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করবেন। তারা হলেন মেজবাহউদ্দিন আহমেদ, মাহফুজুর রহমান সিদ্দিকী ও আতিকুর রহমান খান। প্রথমজন হচ্ছেন কমিটির প্রধান। বাকি দু’জন তার সহকারী। ক’দিন আগে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। সেই পিন্টুই এখন বলছেন ভিন্ন কথা, ‘ফুটবলে সভাপতি হিসেবে এমন কারোর আসা উচিত, যিনি খেলাটা বোঝেন। সেক্ষেত্রে সালাউদ্দিনকেই তো মনে হচ্ছে যোগ্য ব্যক্তি। তার বিপরীতে যারা অংশ নিয়েছে বলে মনোনয়ন কিনেছেন, তারা তো পরীক্ষিত নন বা ফুটবলের লোক নন। সালাউদ্দিনের একটা কাজের প্রশংসা করতেই হয়, তিনি ফুটবলটা অন্তত সারা বছর মাঠে রেখেছেন।’ এদিকে সাফ ফুটবলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল বলেছেন, ‘প্রয়োজনে আমাদের সালাউদ্দিনের পাশে যদি দাঁড়াতে হয়, তাহলে দাঁড়াবো।’ এর আগে বাফুফে অনুমোদিত গঠনতন্ত্রের ২৫ ধারায় গঠিত নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতাবলে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির ২১ পদের (সভাপতি ১, সিনিয়র সহ-সভাপতি ১, সহ-সভাপতি ৪ ও সদস্য ১৫) জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিলি হয় ১৬ ও ১৭ এপ্রিল (সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত), যা বিলি করেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। একই ব্যক্তির কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ১৮ এপ্রিলের (সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) মধ্যে। মনোনয়নপত্রের ওপর আপত্তি দাখিল করা যাবে (সাধারণ সম্পাদক বরাবর) ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত (সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত)। বাফুফে ভবনের নির্বাচন কমিশন অফিসে ১৯ এপ্রিল বিকেল ৪টা থেকে শুরু হবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ। একই স্থানে ১৮-২০ এপ্রিল পর্যন্ত (প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) প্রত্যাহার করা যাবে মনোনয়নপত্র। একই স্থানে প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ও ব্যালট নম্বর প্রদান করা হবে ২১ এপ্রিল বিকেল ৫টায়। এর আগে বাফুফে নির্বাচনের কাউন্সিলর তালিকা চূড়ান্ত করে। খসড়া তালিকার ১৩৪ জনকেই বহাল রেখেছে ফেডারেশনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সমাধান কমিটি। বুধবার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। এরপর বিকেলে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের গত নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের মূল্য ছিল ৫ হাজার টাকা। এবার তা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ টাকা! সভাপতি পদে যে কেউ যাতে মনোনয়নপত্র কিনতে না পারেন সে জন্যই এ ব্যবস্থা। তাতেও লাভ হয়নি। বাফুফের মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথমদিনে আলোচনায় আসেন টঙ্গী ক্রীড়াচক্রের সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু। ১ লাখ টাকা দিয়ে বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কেনেন জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে অপরিচিত ওই ব্যক্তি। এদিকে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় একটি আলাদা প্যানেল দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন সাবেক ফুটবলারদের নিয়ে। এদিকে সালাউদ্দিন বিরোধী ‘বাঁচাও ফুটবল’ আন্দোলনের সংগঠকরাও বসে নেই। তারাও ব্যস্ত একটি প্যানেল দাঁড় করাতে। জানা গেছে, শনিবার রাতেই তারা প্যানেল তৈরির কাজ শেষ করে ফেলবেন এবং রবিবারের মধ্যে সব পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ফেলবেন।
×