ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রতি জেলায় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ এপ্রিল ২০১৬

ইউপি নির্বাচনে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রতি জেলায় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে অনিয়মসহ বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রত্যেক জেলায় একটি করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনে যেসব প্রার্থীর অভিযোগ রয়েছে তারা ইচ্ছে করলে ফল বাতিলসহ যেকোন বিষয়ে প্রতিকার পেতে টাইব্যুনালে মামলা করতে পারবেন। আইন অনুযায়ী নির্বাচনী ফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে অনিয়মের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। গত রবিবার কমিশন ইউপি নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তিতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, দেশের ৬৪ জেলায় সিনিয়র সহকারী জজের সমন্বয়ে এ নির্বাচনী টাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনী টাইব্যুনালে জেলার প্রত্যেক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের প্রার্থীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হবে। নির্বাচনে ক্ষুব্ধ যে কোন চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদের প্রার্থীরা নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আপীল করতে পারবেন। ইতোমধ্যে দুই দফায় নির্বাচনে প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচনের অনিয়ম তদন্ত করার এখতিয়ার এখন আর কমিশনের হাতে নেই। ফলে কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইলে বা নির্বাচন ফল চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপসচিব মহিসিনুল হক জানান, ফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীকে মামলা করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল নির্বাচনী দরখাস্ত গ্রহণ করে শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবেন। ট্রাইব্যুনাল গঠনের ফলে অনিয়মের তদন্ত এখন আর কমিশনের হাতে নেই। গত ২৩ মার্চে সারাদেশে প্রথম দফায় ৭২১ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ৭ হাজারের বেশি নির্বাচনী কেন্দ্রের মধ্যে ৬৫টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। এ ছাড়া ৩১ মার্চ দ্বিতীয় দফায় নানা অনিয়মের অভিযোগে ৬ হাজারের বেশি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫ কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। তবে নির্বাচন শেষে অনিয়মের নানা অভিযোগ নিয়ে কয়েকশ’ প্রার্থী কমিশনে নির্বাচন বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন। বিশেষ করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, সহিংসতাসহ নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে ভোট বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তবে কমিশন এসব অভিযোগের তদন্ত না করেই ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। ফলে এসব অভিযোগে তদন্ত করার সুযোগ এখন আর কমিশনের হাতে নেই। বিধি অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতা বলে যেকোন অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ইউপির নির্বাচন বাতিল করতে পারে কমিশন। কিন্তু গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচনের ফলে প্রভাব ফেলে এমন অনিয়মের তদন্তের সুযোগ থাকে না। তবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা নির্বাচনের অনিয়মের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি শুনানিতে দেখবে। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গেজেট প্রকাশের আগে কমিশন গুরুত্বসহকারে অভিযোগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে গেজেট প্রকাশ স্থগিত রেখে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ইউপির নির্বাচন বাতিল করতে পারেন। কিন্তু গেজেট প্রকাশের পর সে সুযোগ আর থাকে না। এখন সংক্ষুব্ধ প্রার্থীদের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতীতে কমিশন নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের অভিযোগ এলে তা আমলে নিয়ে গেজেট প্রকাশ স্থগিত রাখত। এরপর তদন্ত করে অথবা ভোট পুনরায় গণনা করে গেজেট প্রকাশ করত। কিন্তু নির্বাচনের পর কয়েক শ’ অভিযোগ কমিশনে এলে তা তদন্ত না করেই কমিশন গেজেট প্রকাশ ও নির্বাচনী ট্রাব্যুনাল গঠন করেছে। নির্বাচনী আইনে নির্বাচনের মামলা নিষ্পত্তির জন্য কমিশনকে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গঠন করার ক্ষমতা দেয়া রয়েছে। গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীদের নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করে ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে। চতুর্থ দফায় বাছাই সম্পন্ন ॥ এদিকে ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ দফায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৮ এপ্রিল এ দফার প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ধার্য করা হয়েছে। ওইদিন প্রত্যাহার শেষে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এর পরেই নির্বাচনী প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। গত ২৭ মার্চ নির্বাচন কমিশন চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই ও প্রত্যহারের সময়সূচী ঘোষণা করে। ঘোষিত এ সময়সূচী অনুযায়ী ৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমার কাজ শেষ করে। শেষ দিনে চতুর্থ দফায় সারাদেশে ৭২৭ ইউপিতে ৩ হাজার ৭২৫ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে ৭২৭ ইউপিতে। বিএনপি ৬৭২টিতে, জাতীয় পার্টি ১৭৮টিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। ৬ ইউপিতে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। এদের সবাই আওয়ামী লীগ দলীয় বলে জানা গেছে।
×