ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দাপুটে যোদ্ধা জাহানারা জীবন যুদ্ধে পরাজিত

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৯ মার্চ ২০১৬

দাপুটে যোদ্ধা জাহানারা জীবন যুদ্ধে পরাজিত

কষ্টের শেষ নেই রংপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জাহানারা বেগমের। এমনিতেই নিজের হৃদরোগের ওষুধপথ্য সংগ্রহ, এর ওপর স্বামীহারা দুই মেয়েসহ তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ও ভরণপোষণ। এরই মধ্যে যুদ্ধকালে কানে গুলি লাগায় সম্প্রতি শ্রবণশক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। সব মিলিয়ে ৭৩ বছর বয়সী রংপুরের এই নারী যোদ্ধা জীবনযুদ্ধে পরাজিত। হাতেগোনা যে ক’জন নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন রংপুরে, তাদের মধ্যে জাহানারা বেগম একজন। তিনি জানান, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে গেলে পাক হানাদার বাহিনীর সহায়তায় রাজাকাররা পঞ্চগড়ে তাঁর বাড়িটি দখল করে নেয়। যুদ্ধকালে কানে গুলি লেগে শ্রবণশক্তি নষ্ট হয় তাঁর। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পঞ্চগড়েই দেশমাতৃকার টানে অন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এ সময়ই পাক সেনাদের ছোঁড়া গুলিতে কানে আঘাত পান। এখন আর কানে শোনেন না তেমনটা। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য চলে যান ভারতের জলপাইগুড়িতে। সেখানে নিজের চিকিৎসা শেষে যুক্ত হন যুদ্ধাহতদের সেবা দিতে। একপর্যায়ে যুদ্ধকালে সেখানেই থেকে যান তিনি। সেখানে ১৫ হাজার সেবিকার মধ্যে ১৭ চিকিৎসকের বিচারে শ্রেষ্ঠ সেবিকা নির্বাচিত হন তিনি। যুদ্ধ শেষে পঞ্চগড়ে ফিরে এসে দেখেন তাঁর বাড়ি অন্যরা দখলে নিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে তাদের নামে করে নিয়েছে, যা আজও উদ্ধার করতে পারেননি। এরপর রংপুরে এসে নগরীর মুন্সীপাড়ায় চার শতক জমি কেনেন। ৮৫ সালে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি করার পরই মারা যান স্বামী। ৬ নাবালক সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়ে ঋণের টাকা আর পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সুদাসলে ২০১০ সালে তা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪৬২ টাকায় দাঁড়ালে বাড়িটি নিলামে তোলে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। পরে মিডিয়ার সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে কিছুটা সুদ মওকুফের পর বাড়িটি রক্ষা পায়। বর্তমানে তিন মেয়ে দুই ছেলে নিয়ে চরম আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন। বড় এবং মেজো মেয়ের বিয়ে দিলেও স্বামী মারা গেছে তাদের। নাতি-নাতনি নিয়ে তাদেরও ভরণপোষণের দায়িত্ব পড়ে তাঁর ওপর। বিয়ের বয়স পার হতে চললেও ছোট মেয়ের এখনও বিয়ে দিতে পারেননি। ছোট মেয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে মাস্টাররোলে চাকরি করে। বড় ছেলে ক্যান্সারে মারা যায়। মেজো ছেলে স্থানীয় এক অফিসে চাকরি আর ছোটজন ঢাকায়। প্রতিদিন নিজের ওষুধ লাগে দেড় শ’ টাকার। সব মিলে যুদ্ধকালের এই দাপুটে যোদ্ধা ভাল নেই এখন। কষ্টই যেন জীবনের ব্রত তাঁর। Ñমানিক সরকার মানিক রংপুর থেকে
×