ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষসেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটার মুস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১২ মার্চ ২০১৬

বর্ষসেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটার মুস্তাফিজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ জন্ম হোক যথা-তথা, কর্ম হোক ভাল। গত বছর ২২ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত মুস্তাফিজুর রহমানের নাম পর্যন্ত শোনেনি কেউ। এমনকি জাতীয় দলের নির্বাচকরাও চেনেন না ঠিকমতো। ২৪ এপ্রিল ম্যাচে অচেনা এ পেসার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম পদার্পণে পাকিস্তান দলকে ভড়কে দিলেন, উইকেট নিলেন দুর্ধর্ষ মারকুটে শহীদ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাফিজের। প্রথমবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি২০ জয় পায় বাংলাদেশ। তবে মুস্তাফিজকে নিয়ে গবেষণাটা তখন হয়নি। মুস্তাফিজের আসল চেহারা দেখেছে ভারত, সেই সঙ্গে বিশ্ববাসী। শুরু হলো সবার গবেষণা। বছরটা দারুণ কেটেছে বাঁহাতি এ তরুণের। ৯ ওয়ানডে খেলে ২৬, ৫ টি২০ খেলে ৫ এবং ২ টেস্ট খেলে ৪ উইকেট শিকার করেন। বর্ষসেরা আইসিসি ওয়ানডে একাদশেও জায়গা করে নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। আর এবার আরেকটি বড় গৌরব বয়ে এনেছেন তিনি। ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোর বিচারে বর্ষসেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ধর্মশালায় ঐচ্ছিক অনুশীলনের সময় তার হাতে ক্রিকইনফো প্রতিনিধিরা এ পুরস্কারটি তার হাতে তুলে দেন। গত বছর ২২ এপ্রিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টি২০ ম্যাচের স্কোয়াডে মুস্তাফিজের নাম দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছেন, সবার মনে প্রশ্ন ‘কে এই মুস্তাফিজ?’ অনুসন্ধান করে যতটা না জানা গেল ওই তরুণ ২৪ এপ্রিল মাঠে নেমেই তার পরিচয়টা দিয়ে দিলেন। বয়সে মাত্র ১৯ তখন তিনি! দারুণ মিতব্যয়ী বোলিং করেছিলেন। তবে জুনে ভারতের বিরুদ্ধেই নিজের সত্যিকার পরিচয়টা তুলে ধরেছেন। অভিষেক ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট। পরেরটিতে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ৬ উইকেট। অভিষেকের পর টানা দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নেয়ার রেকর্ড এর আগে ক্রিকেট ইতিহাসেই ছিল না। তৃতীয় ওয়ানডেতে ২ উইকেট নিয়ে ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকারের বিশ্বরেকর্ড গড়েন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পরের সিরিজেও ধারাবাহিকতাটা রেখেছেন সাতক্ষীরা থেকে উঠে আসা এ তরুণ। এর আগেই অবশ্য ভারতের বিরুদ্ধে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তাতে করে সারাবিশ্বে নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। মূলত তার বোলিংয়ের অন্যতম অস্ত্র ‘কাটার’ ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। সুইং এবং এই বিশেষ অফকাটার দিয়েই তো তিনি ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের নাকানি-চুবানি খাইয়েছিলেন। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মুস্তাফিজের বোলিং নিয়ে গবেষণা শুরু করে দেন তখন থেকেই। তবু প্রোটিয়ারাও মুস্তাফিজের ‘কাটারে’ ক্ষত-বিক্ষত হলো। গত বছর মাত্র ১২.৩৪ গড়ে ৯ ওয়ানডে থেকে ২৬ উইকেট নেন। ২ টেস্টে ১৪.৫০ গড়ে ৪ এবং ৫ টি২০ খেলে ১৮.৬৬ গড়ে ৬ উইকেট। বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে জায়গা করে নেন মুস্তাফিজ। কারণ গত বছর অন্য যে কোন অভিষিক্ত ক্রিকেটারের চেয়ে পারফর্মেন্স বিবেচনায় তিনি ছিলেন এগিয়ে। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর মনোনয়নে বর্ষসেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটারের তালিকায় আরও কয়েকজন ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার সাইমন হারমারের গত বছর টেস্ট অভিষেক ঘটে। তিনি ৫ টেস্টে ২৯.৪০ গড়ে ২০ উইকেট নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের পেসার ডেভিড উইলি ১০ ওয়ানডে থেকে ২৪.২২ গড়ে ১৮ এবং ৪ টি২০ থেকে ১৬.৮৭ গড়ে ৮ উইকেট নেন। আরেক ইংলিশ পেসার মার্ক উড ৮ টেস্টে ৩৪.৪০ গড়ে ২৫, ৭ ওয়ানডে থেকে ৬৮.৮০ গড়ে ৫ এবং ১ টি২০ খেলে ৮.৬৬ গড়ে ৩ উইকেট নেন। পাকিস্তানী অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম ৫ ওয়ানডেতে ৭ উইকেট ও ৭৬ রান এবং ৫ টি২০ খেলে ৬ উইকেট ও ৬০ রান করেন। এছাড়াও ছিলেন পাক ক্রিকেটার মুখতার আহমেদ, অস্ট্রেলিয়ার পিটার নেভিল, নিউজিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনার, শ্রীলঙ্কার দুশমন্ত চামিরা ও ইংল্যান্ডের স্যাম বিলিংস। সবাইকে পিছু হটিয়ে অগ্রগামী ছিলেন মুস্তাফিজ। তাই বছর শেষে ঠাঁই মিলেছে আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই সম্মানে ভূষিত হয়ে গর্ব বয়ে আনেন মুস্তাফিজ। আর এবার ইএসপিএন ক্রিকইনফোর বর্ষসেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটার হয়ে আরেক গৌরব আনলেন দেশের জন্য। কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের সামনে পুরস্কারটি প্রকাশ করা হয়নি।
×