ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলে সুদিনের আশায় মনোয়ার

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ৭ মার্চ ২০১৬

ফুটবলে সুদিনের আশায় মনোয়ার

জাহিদুল আলম জয় ॥ চোখের পলকে দৃষ্টি আটকে যায়। সুদর্শন বলতে যা বোঝায় আর কি! মনোয়ার হোসেন তেমনই এক ফুটবলার। বাংলাদেশের ফুটবলে যার আবির্ভাবও হয়েছিল অনেকটা চমক দিয়ে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সরাসরি সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে চাপিয়ে সাফল্যও পেয়েছেন বেশ। কিন্তু অকালেই ঝরে যেতে হয় একসময়ের মাঠ কাঁপানো মিডফিল্ডার মনোয়ারকে। অনেকটা অভিমান করেই প্রিয় ফুটবলকে বিদায় জানান তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেননি। সম্প্রতি সাবেক এই জাতীয় ফুটবলারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথপোকথন হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ক্রিকেটের জয়জয়কার। এক সময় এটি ছিল ফুটবলের দখলে। বিষয়টি নিয়ে আপসোস করেন মনোয়ার। ক্রিকেটের বিশ্বমানে যেমন তিনি মুগ্ধ তেমনি ফুটবলকেও আরও উঁচুতে দেখতে চান। এ প্রসঙ্গে মনোয়ার বলেন, ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও গণজোয়ার আসা সম্ভব। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে। মাঠে ঠিকমতো খেলা থাকতে হবে। আর খেলা থাকলেই সাফল্য আসবে। ক্রিকেট সাফল্যের কারণেই এতটা জনপ্রিয়। ফুটবলেও সাফল্য আসলে আগের সুদিন ফেরানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ফুটবল বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের খেলা। সঠিক চর্চা হলেও এখনও খেলাটিকে এক নম্বরে আনা সম্ভব। এ জন্য বয়সভিত্তিক ফুটবলের বিকল্প নেই। অনেকটা অভিমানে ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানো মনোয়ার মার্কিন মুল্লুকে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টায় আছেন। তবে বিদেশ বিভুঁইয়ে হলেও দেশের ফুটবলের জন্য মন কাঁদে তার। তাই তো ভবিষ্যতে দেশের হয়ে কাজ করার ইচ্ছার কথা জানান। মনের কোণে আছে ভবিষ্যতে কোচিংয়ে আসার। এ জন্য তিনি কাজ করছেন। ইতোমধ্যে কোচিংয়ে এএফসি সার্টিফিকেট কোর্স (সি) সম্পন্ন করেছেন। সুযোগ পেলে বাংলাদেশ দলের হয়েও কাজ করার ইচ্ছা আছে বলে জানান মনোয়ার। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মেধাবী ছাত্র ছিলেন মনোয়ার। সেখান থেকে ১৯৯৫ সালে এসএসসি ও ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। বিকেএসপিতে ভর্তি পরীক্ষায় একাধিক বিভাগে সুযোগ পেলেও ফুটবলকে বেছে নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস সম্পন্ন করেন। মজার বিষয় হচ্ছে, কোন বয়সভিত্তিক দলে না খেলেই সরাসরি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পান মনোয়ার। সেটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। অভিষেকেই নিজেকে মেলে ধরেন। যে কারণে পরবর্তীতে একে একে বাংলাদেশের অনেক স্মরণীয় কীর্তির সাক্ষী হয়েছেন। জাতীয় দলে খেলেছেন ১৯৯৮-২০০৬ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে তাক লাগানো সাফল্যের অংশীদার হয়েছেন। ১৯৯৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ গেমস চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ফুটবল দলের গর্বিত সদস্য ছিলেন মনোয়ার। ২০০৩ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সাফ গেমস চ্যাম্পিয়নশিপেও চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য তিনি। এছাড়া ২০০২ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত জিগমি দর্জি ওয়াংচাক মেমোরিয়াল গোল্ডকাপে শিরোপা স্বাদ পান। জাতীয় দলে প্রবেশের বছরই প্রথমবারের মতো অনুর্ধ ১৬ ফুটবল দলে সুযোগ পান মনোয়ার। তাও আবার অধিনায়ক হিসেবে। এরপর ১৯৯৯ সালে অনুর্ধ ১৯ জাতীয় ফুটবল দলের, ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের ও ২০০৪ সালে অনুর্ধ ২৩ জাতীয় ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেন মনোয়ার। ১৯৯৫ সালে ক্লাব ফুটবলে আবির্ভাব ঘটে ইয়ংমেন্স ক্লাব ফকিরেরপুলের মধ্য দিয়ে। সেখানে তিন বছর সাফল্যের সঙ্গে খেলার পর বাড্ডা জাগরণী হয়ে ২০০০ সালে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবে নাম লেখান। ২০০৩ সাল পর্যন্ত সাদা-কালো জার্সিতে খেলে ২০০৪ সালে যোগ দেন ব্রাদার্স ইউনিয়নে। এরপর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র হয়ে ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে খেলেন। ২০১১ সালে ফের মোহামেডানে ফিরলেও নিয়মিত হননি। সেই থেকে মাঠের ফুটবল থেকে দূরে আছেন মনোয়ার। ২০০৪ সালে ইসলামাবাদ সাফ গেমসের স্মৃতি আজও শিহরিত করে তাকে। সেবার মার্চপাস্টে বাংলাদেশের পতকা বহন করেছিলেন মনোয়ার। সাবেক দুই অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য ও হাসান আল-মামুন খুব বেশি দিন হয়নি খেলা ছেড়েছেন। এদের চেয়ে জুনিয়র মনোয়ার হোসেন। অথচ অনেক আগেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। প্রতিভাবান এই ফুটবলার সম্প্রতি জাতীয় দলের পারফর্মেন্সে হতাশা ব্যক্ত করেন। অনেকটা আপসোসের সুরে তিনি জানান, ইচ্ছে করে আবারও মাঠে ফিরে আসি। অনেকের খেলা দেখে মনে হয়, মাঠে নামলে এখনও তাদের চেয়ে ভাল করা সম্ভব।
×