ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হারুন হাবীব

সম্পাদকীয় সাহস, সততা ও নৈতিকতা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১ মার্চ ২০১৬

সম্পাদকীয় সাহস, সততা ও নৈতিকতা

ইদানীং আগের তুলনায় বেশি গ্রামের বাড়ি যাই। জীবনের একটা সময় আসে যখন যেখান থেকে যে উঠে আসে সেখানে বেশি যেতে ইচ্ছে করে। মা-বাবার কবর দেখতে পাই, যাদের সঙ্গে প্রাইমারি-মাধ্যমিকে পড়েছি, একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তাঁদেরও কারও কারও সঙ্গে দেখা হয়। সবচেয়ে বেশি আপন মনে হয় ফসলের মাঠ থেকে দৌড়ে আসা বাতাসকে, যা শরীর ছুঁয়ে দেয়, সেই আগের মতো আলিঙ্গন করে। লজ্জা ও আক্ষেপও হয়, এই আপনদের কতকাল উপেক্ষা করেছি! ঝামেলাও একেবারে কম হয় না। পত্রপত্রিকা ঠিক মতো পাইনে, টেলিভিশন দেখবার সময় হয় না, ইন্টারনেট তো রীতিমতো প্রতারণা করে। কাজেই দেশের প্রধান ইংরেজী দৈনিক ‘দি ডেইলি স্টার’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে যে এতগুলো মামলা রুজু হয়েছে, বিস্তর তর্ক-বিতর্ক চলছে, ঢাকা না ফেরা পর্যন্ত সেসবের বিস্তারিত আমার জানা হয়নি। তাই আমার এ লেখাটা অনেকটাই বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া। তবে বিষয়টা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যতটা বিতর্কের, তার চেয়ে কম আলোচনার দাবি রাখে না সাংবাদিকতার নীতি, নৈতিকতা ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের সাহস ও সততার প্রশ্নে। তবে বিলম্বে হলেও লেখাটা আমি লিখছি। মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রজু করা হয়েছে, তার বেশিরভাগ ক্ষতি পূরণের বা মানহানির, কিছু ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ও। রাষ্ট্রের কোন নাগরিক যদি কারও কোন কর্মকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত হন বা সংক্ষুব্ধ হন, তাহলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। তবে বাংলাদেশের আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হলেই তার বিচারকার্য শুরু হয় না। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। আমি জানি না, মাহফুজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগগুলো সরকার বা রাষ্ট্র অনুমোদন দেবে কিনা। যদি দেয় তাহলে সেগুলো যথারীতি মামলায় পরিণত হবে। অন্যথায় নয়। ঘটনার সূত্রপাত ‘ডেইলি স্টার’-এর ২৫ বছর পূর্তিতে একটি টিভি অনুষ্ঠানে মাহফুজ আনামের একটি স্বীকারোক্তি, যে তিনি, ৭Ñ৮ বছর আগে, সেনা নিয়ন্ত্রিত কেয়ারটেকার সরকারের জরুরি অবস্থার সময়, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ডিজিএফআই বা সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ সরবরাহকৃত দুর্নীতির কিছু খবর ছাপিয়েছিলেন, ঘটনার সত্যতা যাচাই না করেই। একজন সম্পাদক হিসেবে এটি তাঁর ‘বড় ভুল’ ছিল বলেও তিনি স্বীকার করেন। সকলেই জানি, এই ধরনের ‘বড় ভুল’ সে সময়কার অনেক সম্পাদকই করেছিলেন। আজ পর্যন্ত কেউ তা স্বীকার করেননি, করবার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেননি। অনেক বছর পর হলেও মাহফুজ তা করেছেন। তবে এ ধরনের অতিÑবিলম্বিত ভুল স্বীকার বাস্তবতা বা সময়ের ক্ষতকে শুধরে দেয় না, লাভও হয় না তেমন। কারণ সেনাÑনিয়ন্ত্রিত সরকারের দুই বছরের শাসনামলে রাজনীতিবিদদের ‘দুর্নীতিবাজ’ প্রমাণ করতে এ ধরনের খবর হরহামেশাই বেরিয়েছে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীগণ সকলেই নীতিবান মানুষ, তা বলবার সুযোগ হয়ত নেই। কিন্তু ঢালাওভাবে তাঁদের দুর্নীতিবাজ বলার মাঝে যে মানসিকতা কাজ করে, সেটিও সাধুবাদ পাবার যোগ্য নয়। সকলেই জানি, সেনা নিয়ন্ত্রিত সে সময় জেলে পুরা হয়েছে বহু সংখ্যক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে ঢোকানো হয়েছে এবং যেভাবে তাঁদের জোরজবরদস্তি করে রাজনীতি থেকে অপসারণের চেষ্টা হয়েছে ‘মাইনাস টু’ নামের অদ্ভুত এক তত্ত্ব বাস্তবায়ন করতে, তাতে এ ধরনের ‘ভুলগুলো’ যথেষ্টই যে সমর্থন জুগিয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। বলতেই হবে, আমাদের গণসমাধ্যম সার্বিকভাবেই তখন পেশাগত সততা ও সাহস প্রদর্শন করতে পারেনি। জনাব মাহফুজ আনামের মতো একজন নামীদামী সম্পাদক যদি সেদিন এমন ‘বড় ভুল’ না করতেন, বা না করার পক্ষে অবস্থান নিতেন, তাহলে ধরে নিতে পারি, হয়ত তিনি জেলে যেতেন অথবা নিগৃহীত হতেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এটিও বলা যায় যে, বাংলাদেশের অবস্থানে তিনি একটি সৎ ও সাহসী সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত হয়ে বেঁচে থাকতেন। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি তা পারেননি। এমনকি পদত্যাগ করেও নৈতিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাতে পারেননি। ২০০৭-এর জরুরী অবস্থাটি বর্তেছিল সেদিনকার বিএনপিÑজামায়াত জোট সরকারের জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে। রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিনকে বিধিবহির্ভূতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানিয়েছিলেন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। জোরজবরদস্তি করে একটি নির্বাচনী প্রহসনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে জোট সরকার নতুন করে ক্ষমতায় আসে। এ পরিকল্পনা যেমন মেনে নেয়নি দেশের মানুষ, তেমনি বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী বাইরের বিশ্ব। যা হোক, সেদিনের সেই রাজনৈতিক অসততা ভ-ুল করেছিল ‘কেয়ার টেকারের’ নামে সেনা নিয়ন্ত্রিত শাসন। কিন্তু সেদিনকার ‘কেয়ার টেকার’ তার ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব হাতে তুলে নেয়, ঢালাওভাবে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে। এমন কি দেশের বাইরে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে দেশে না ফিরতে দেয়ারও ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেয় এক সময়। ইত্যাদি নানা অপকর্মে জড়িত হবার ফলে ইতিহাসের কুখ্যাত অবস্থানে ঠাঁই হয় তাদের। মনে পড়ে, সে সময় আমরা কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা মহান মুক্তিযুদ্ধের সে সময়কার জীবিত সেক্টর কমান্ডারদের একত্র করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার সেই অসৎ তৎপরতার বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সমর কর্মকা-ের বয়োজ্যেষ্ঠ অধিনায়করা নানা দল ও মতের অনুসারী হয়েছিলেন ১৯৭৫-পরবর্তী পরিস্থিতিতে। কিন্তু দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তারা সেদিন এক মঞ্চে উঠেছিলেন, এক কণ্ঠে জয়বাংলা বলেছিলেন, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ইয়াজউদ্দিন পরিচালিত ‘কেয়ার টেকার’ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলেছিলেন সমস্বরে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জন্ম নিয়েছিল ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরামÑমুক্তিযুদ্ধ’ ৭১’ নামের জাতীয় সংগঠনটি। মাহফুজ আনামের তাঁর হাতে নিয়ন্ত্রিত ইংরেজী পত্রিকাটি শুরুতে সম্পাদনা করেছেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকভাবে বরেণ্য সম্পাদক এসএম আলী। তবে বলাইবাহুল্য, মাহফুজের হাত ধরেই ডেইলি স্টার এখন দেশের অন্যতম প্রধান কাগজ, প্রভাবশালী তো বটেই। এটি কম কৃতিত্ব নয়। এ কাগজটির আধুনিকতা যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি সমালোচনা বা এর সম্পাদকীয় নীতির সমালোচনাও হাল্কা করে দেখবার নয়। প্রশংসার কথাই বলি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসজুড়ে ডেইলি স্টার যে সাহস ও যোগ্যতায় মুক্তিযুদ্ধের, বিশেষত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দেশীয় দালালদের নির্বিচার গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের ওপর নিবদ্ধ, প্রবন্ধ ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপিয়েছে, তা পত্রিকাটিকে বিশেষ আসনে বসিয়েছে। ‘দি জেনোসাইড দে রোট’ শিরোনামের ধারাবাহিক নিবন্ধটি একদিকে যেমন ইতিহাসের সততাকে তুলে ধরেছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান বাহিনীর নারকীয় গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকারের বিরুদ্ধে একটি দালিলিক প্রমাণ। এরপরও বলতে হবে যে, পত্রিকাটির এক নয়, একাধিক অবস্থান অসংখ্য মানুষকে আশাহত করেছে, এমন কিছু কিছু ক্ষেত্রে আতঙ্কিতও। ভুললে চলবে না যে, সংবাদপত্র সমাজকে নিরীক্ষণ করে, পর্যবেক্ষণ করে; আমরা যেন ভুলে না যাই, ঠিক একইভাবে সমাজও সংবাদপত্রকে দেখে, নিরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করে। কাজেই পেশাগত নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে বৈকি! সকলের মতো করে সকলেই ভাববেন বা চিন্তা করবেন, তা নয়। মত ও দ্বিমত প্রকাশের যে ধারা, সেটিই গ্রহণযোগ্য ধারা, যার বিকাশ জরুরী। একে লালন করতে না পারলে সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ স্থায়ী হবার নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিরোধীরা প্রবলভাবে সক্রিয়। তারা জাতীয় গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ, এমন কি রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পর্যন্ত আক্রমণ করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে, আজও এই ৪৪ বছর পরও! কাজেই জাতীয় গণমাধ্যমের ঐক্যবদ্ধ দেশপ্রেমিক ভূমিকা জরুরী বৈকি! এই ভূমিকা পালন তখনই সার্থক হবে যখন আমাদের সাংবাদিকতা সৎ হবে, সাহসী হবে এবং নৈতিকতাসম্পন্ন হবে। অস্বীকার করার জো নেই যে, বহু সংখ্যক মানুষের মনেই এ প্রশ্ন উঠেছে যে : কিছু কিছু সংবাদপত্র বিশেষ ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে কাজ করছে। এই শ্রেণীর প্রশ্ন আরও : তারা কী রাষ্ট্র, রাজনীতি, উন্নয়নÑ এসব নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়? এ অভিযোগও কম নেই যে, পেশাগত ‘ম্যান্ডেট’ থেকে এসব সংবাদপত্র সরে যাচ্ছে। গণতন্ত্রে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা জরুরী, জরুরী তার পেশাগত স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা। সংবাদপত্র যত শক্তিশালী হবে ততই গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন সহজ হবে। কিন্তু সংবাদপত্র এনজিও নয়, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিও নয়। একই সঙ্গে সংবাদপত্র তার শক্তির কারণে নিজের মতো করে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারে না, রাজনীতি ‘ডিক্টেট’ করার ‘এজেন্ডা’ হাতে নিতে পারে না। এসব সংবাদপত্রের কাজ নয়। খবরে দেখছি, এই সম্পাদকের বিরুদ্ধে বহু সংখ্যক মামলা দায়ের হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি পূরণও দাবি করা হয়েছে। কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন, যারাই যোগ্য মনে করেছেন তারাই মামলা করেছেন, এতে কার কি করার আছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, এভাবে গ-ায় গ-ায় মামলা কি প্রয়োজনীয়, নাকি কি সাধুবাদ পাবার যোগ্য? আর যাই হোক, মামলাÑমোকদ্দমা হুজুগের বিষয় নয়। যে ঘটনাটি ঘটেছে তার মাঝ দিয়ে সাংবাদিকতার নীতি, নৈতিকতা ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের সাহস ও পেশাগত সততা নিয়ে একটা বিতর্ক হতে পারে। কারণ এ বিতর্ক ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের বৃহত্তর অংশ গণতন্ত্রকে সমুন্নত করার পক্ষে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পক্ষে, প্রগতিশীলতা ও জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সার্বিক অবস্থানের দিক থেকে। তাদের এই ভূমিকা প্রশংসার পাওয়ার যোগ্য। তবে এর মধ্যেও কিছু কিছু সংবাদপত্র আছে যারা স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতাকে উসকে দেয়, মৌলবাদ ও ধর্মীয় জঙ্গীবাদকে উসকে দেয়। দেখলাম, এসব মামলা দায়েরের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। পরিষদ সভাপতি ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আশা করা হয়েছে, মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে এবং এ ব্যাপারে সব মহলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। ড. আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতেও এসব মামলায় উদ্বেগ জানানো হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা মেনে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রকাশিত সংবাদ বিষয়ে ভুল স্বীকার করার মধ্য দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে বাক স্বাধীনতার জগতে এক উন্নত সংস্কৃতির নজির হতে পারত। কিন্তু মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার ঢালাও অভিযোগ এনে এত মামলা করায় বিষয়টি হয়রানির পর্যায়ে গেছে। যা একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সংবাদপত্রসহ নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করার শামিল। বিবৃতিদাতারা আরও আশঙ্কা করেছেন, এ ধরনের অবস্থান অগণতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে তাদের দুরভিসন্ধিমূলক অপপ্রয়াস চালানোর সুযোগ করে দিতে পারে। বিবৃতিগুলোর সঙ্গে সবটা নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করব আমি। তবে বিনয়ের সঙ্গে বলব, প্রশ্নটা নাগরিকের মত প্রকাশের নয়, এটি একটি সম্পাদকীয় ভুলের বা ব্যর্থতার, যা সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যে কারণেই হোক, ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছেয় মাহফুজ আনাম সেদিন সৎ ও সাহসী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। পারলে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন। পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ আমলেও শ্রদ্ধেয় মরহুম তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, মরহুম জহুর হোসেন চৌধুরী এবং আব্দুস সালাম খানরা যা পেরেছেন, তা পারেননি আমাদের কালের সম্পাদক। শুধু তাই নয়, এসব দুর্বলতার কল্যাণেই সেদিন প্রলুব্ধ হয়েছিল এক ভয়ঙ্কর ‘বিরাজনীতিকরণের’ প্রক্রিয়া, যা কেবল দুর্ভাগ্যজনকই নয়, রীতিমতো আত্মঘাতী। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলব, কিন্তু যে গণতন্ত্রে উন্মুক্ত রাজনীতি মূল নিয়ামক, সেই রাজনীতিকেই আমরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করব, তা হয় না। রাজনীতি সংস্কৃতিকে আরও বেশি পরিশুদ্ধ, আরও কল্যাণকর ও জবাবদিহিতামূলক হবার প্রয়োজন আছে। কিন্তু রাজনীতিকে নিজের মতো করেই বিকশিত হতে হবে, বাইরে থেকে চাপিয়ে দিয়ে নয়। সবশেষে বলব, মাহফুজ আনাম তাঁর ভুল স্বীকার করেছেন। কাজেই, বিষয়টির সুরাহা হওয়া উচিত। গণহারে মামলা বন্ধ হওয়া উচিত। লেখক : সাংবাদিক যয১১৯৭১@মসধরষ.পড়স
×