ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর অবস্থানে বাফুফে, শোকজের জবাব দিতে হবে মামুনুলদের

সাত ফুটবলারের ভাগ্য নির্ধারণ আজ

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সাত ফুটবলারের ভাগ্য নির্ধারণ আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আজ বৃহস্পতিবারই ফয়সালা হবে কে দোষী আর কে দোষী নয়। কি ঘটবে আজ মামুনুলদের ভাগ্যে? অভিযুক্ত সাত ফুটবলার আজ সশরীরে হাজির হবেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে। সাফ সুজুকি কাপ (সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ) এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের বাজে পারফর্মেন্সের প্রধান কারণ হিসেবে দলের কতিপয় ফুটবলারকে উচ্ছৃঙ্খল দিনাতিপাতকে চিহ্নিত করে তাদের দায়ী করেছে বাফুফের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। ইতোমধ্যেই তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে। শক্তিশালী কোন যুক্তি পেশ করতে পারলে এবারের মতো পার পাওয়া যাবে। এমনকি ফিরে আসতে পারেন জাতীয় দলেও। নয়তো লম্বা সময়ের জন্য বহিষ্কার, যাতে শেষ হয়ে যেতে পারে ক্যারিয়ারও! দোষী প্রমাণিত হলে কোন ফুটবলারকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায়। ফুটবলারদের দেয়া হয়েছে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ। বাফুফে ভবনে সশরীরে এসে তারা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাখ্যা দেবেন। জাহিদ-মামুনুলদের আত্মপক্ষ সমর্থনের এই শুনানিতে অংশ নেবেন বাফুফের তিন উর্ধতন কর্মকর্তা তাবিথ আওয়াল, আনোয়ারুল হক হেলাল এবং বাদল রায়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ থাকবে বাফুফের এমনটাই আশা করছেন বাদল রায়, ‘জিজ্ঞাসাবাদে যদি এটা প্রমাণ হয় যে উচ্ছৃঙ্খলতার কারণেই তারা নিজেদের পারফর্মেন্সটা মাঠে উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাহলে কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে আশা করছি।’ সাত ফুটবলারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো কি কি এ বিষয়ে মুখ খুলছে না বাফুফের কোন কমিটিই। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে পারফর্মেন্সের ওপর প্রভাব পড়ার কারণ হিসেবে ফুটবলারদের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ও অসদাচরণকে চিহ্নিহ্নত করেই ন্যাশনাল টিমস কমিটির কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। এর মধ্যে দু’একজন ফুটবলারের রয়েছে মদ্যপান করা ও নারী ঘটিত বিষয়ের মতো গুরুতর অভিযোগও। এছাড়া ফুটবলারদের রাত জেগে ফেসবুকে সময় কাটানোটাকেও বাজে পারফর্মেন্সের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। এসব বিষয় নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে বাফুফে। এ প্রসঙ্গে বাদল রায় বলেন, ‘ফুটবল একটি শারীরিক খেলা। তাদের কিছু নিয়ম-কানুনের মধ্যে থাকতে হয়। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, হতে পারে এসব কারণেই তাদের ফিটনেস যথার্থ ছিল না। তারা মাঠে যে পারফর্মেন্স করেছে এটা তো এই দলের আসল পারফর্মেন্স নয়।’ ফুটবলারদের অসদাচরণ নিয়ে বাদল রায় বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে এমন ক’জনকে আপনি দেখবেন যাদের এমন মানসিকতা রয়েছে? যে যতো নামী ফুটবলার হয়েছেন, তিনি ততটাই নম্র হয়েছেন আচার-আচরণে।’ সাত ফুটবলারকে জাতীয় দল থেকে অব্যাহতি দেবার সুপারিশ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। অপরাধের তীব্রতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে নিষেধাজ্ঞাটা হবে ক্লাব পর্যায়েও। সেক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়বে ক্লাবগুলো। কেননা অভিযুক্ত ফুটবলারদের দু’একজন রেকর্ড পারিশ্রমিকে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ক্লাবের সঙ্গে। তাই শাস্তিটা যদি এমন হয় দেশের সব রকম ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ। তবে ক্লাবগুলোও ছেড়ে কথা বলবে না বাফুফেকে। এ বিষয়ে বাদলের ভাষ্য, ‘অনেক খেলোয়াড় অনেক ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছেন। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন তারা ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, তাদের কি শাস্তি দেয়া হবে। যদি জাতীয় দল থেকে বহিষ্কার করতেই হয়, তাহলে ঘরোয়া ফুটবলের বিষয়টাও আসে। সেগুলোও আমাদের বিবেচনায় আছে।’ গত কয়েকদিন ধরে দেশের ফুটবল পাড়ায় এমন গুঞ্জন উঠেছেÑ ফুটবলারদের শাস্তির ব্যাপারে আবারও টালবাহানা শুরু করেছে বাফুফে! আর এ কারণেই ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান এবং বাফুফে সদস্য শেখ মোহাম্মদ আসলাম। জাতীয় দলের টানা ব্যর্থতার পেছনে দায়ী সাত ফুটবলার। তাই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনটাও ছিল তাদের বিপক্ষেই। কিন্তু রিপোর্ট তৈরি করলেও এই কমিটির এখতিয়ার নেই তা কার্যকরের। তাই অপেক্ষাটা এবার ন্যাশনাল টিমস কমিটির সিদ্ধান্তের। ফুটবলের স্বার্থে নিঃসন্দেহে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশীয় ফুটবলের এমন অচলাবস্থার জন্য দায়টা কি বাফুফের নয়? এদিকে টানা ব্যর্থতার মধ্যেই বাফুফে প্রস্তুতি নিচ্ছে জর্দানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচের জন্য। যেখানে আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে দলীয় প্রশিক্ষকের। দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক দলের কোচ গঞ্জালো সানচেজ মরেনোকে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই ম্যাচের জন্য ২৭ ফেব্রুুয়ারি থেকে ক্যাম্প শুরু করবে বাফুফে। তবে এই ক্যাম্পে অংশ নিতে পারবেন না বিচারের কাঠগড়ায় থাকা সাত ফুটবলার।
×