ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি সই করল এস আলম গ্রুপ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি সই করল এস আলম গ্রুপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এস আলম গ্রুপ এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াটের বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে পিডিবি এবং এস আলমের মধ্যে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি হয়। সরকারের অনুমোদন পাওয়ার দীর্ঘ ২৭ মাস পরে এই বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হলো। যদিও এস আলম গ্রুপ বলছে, তারা বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য অর্থের সংস্থান করতে পেরেছে। দেশের বেসরকারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে এস আলম গ্রুপই প্রথম কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থ সংস্থানের সুখবর দিল। এর আগে যেসব কোম্পানি কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করেছে তাদের কেউ অর্থ সংস্থানের খবর দিতে পারেনি। এস এস পাওয়ার লিমিটেড ১ ও ২ নামে দুই কোম্পানি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৬১২ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট স্থাপন করবে। দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পটির ৭৫ শতাংশ ঋণ সংস্থান হবে চীন থেকে। যার পরিমাণ এক দশমিক ৭৩৯ বিলিয়ন ডলার। আমদানি করা কয়লায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি চলবে। মঙ্গলবার বিদ্যুত ভবনে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মধ্যে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) ও নির্মাণ চুক্তি (আইএ) সই হয়। পিডিবির পক্ষে কোম্পানি সচিব মাজহারুল হক ও এস আলম গ্রুপের পক্ষে চেয়ারম্যান সাইফুল আলম চুক্তিতে সই করেন। ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর এস আলম গ্রুপ প্রকল্পটির জন্য বিদ্যুত বিভাগের অনুমোদন পায়। মঙ্গলবার এর ২৭ মাস পর চুক্তি হলেও প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র এখনো পাওয়া যায়নি। এজন্য পরিবেশগত সমীক্ষা রিপোর্ট পরিবেশ অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জাননো হয়। দুটি চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ইলেকট্রিক পাওয়ার কন্ট্রাকশন কর্পোরেশন ও এইচটিজি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ এস আলমের সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে কাজ করছে। মোট শেয়ারের ৭০ শতাংশ থাকছে এস আলম গ্রুপের কাছে। সেপকোর কাছে থাকছে ২০ শতাংশ এবং এইচটিজি ডেভেলপমেন্ট হাতে থাকছে ১০ শতাংশ শেয়ার। সেপকোই প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। গত বছরের ২৯ জুন সেপকোর সঙ্গে চুক্তি হয় তাদের। কেন্দ্রের মূল যন্ত্রাংশও সরবরাহ করবে সেপকো। চুক্তি কার্যকরের দিন থেকে ৪৫ মাসের মধ্যে কেন্দ্রটি থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুত পাওয়া যাবে। এস আলম গ্রুপের তথ্য মতে, ১৬ নবেম্বর ২০১৯ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারবে। প্রকল্পের জন্য চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গ-ামারা পশ্চিম বড়ঘোনায় ইতোমধ্যে ৬০০ একর জমি কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছে এস আলম গ্রুপ। প্রতি টন কয়লা প্রাথমিক দর ১২০ ইউএস ডলার ধরে বিদ্যুতের দাম ঠিক করা হয়েছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের অনুমিত দর (লেভেলাইড ট্যারিফ) ধরা হয়েছে ছয় টাকা ৬১ পয়স বা আট দশমিক ২৫৯ সেন্ট। উৎপাদন শুরুর পর প্রকল্প ব্যয় ও জ্বালানি মূল্যের ওপর নির্ভর করে এ দাম বাড়তে বা কমতে পারে। বিশ্বব্যাপী কয়লার দাম কমলেও দেশের সাম্প্রতিক স্বাক্ষরিত কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রে কয়লার পূর্বের দাম ধরে বিদ্যুতের দর হিসেব করা হচ্ছে। যদিও এই সময়ে নির্মাণ ব্যয় বেশ কিছুটা বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাভু জানান, আগামী মাস (মার্চ) থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ শুরু হবে। আর আগামী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে ঋণ চুক্তি হবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বেসরকারী উদ্যোগে এটা বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় প্রকল্প হতে যাচ্ছে। আমাদের বেসরকারী খাত এখন আড়াই বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করেছে। অন্যান্য উদ্যোক্তরাও এতে উৎসাহিত হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামের চাহিদা দেড় হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন পিডিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের উপদেষ্টা এএসএম আলমগীর কবির প্রমুখ।
×