ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য ও সকল শ্রেণীর নারীর আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত ইতিবাচক বলে দাবি করেছেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মিজ মেরেতো লুনডেমো। এ ছাড়া দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল উৎপাদনে বাংলাদেশের উন্নয়নের নারীরাই মূল চাবিকাটি। শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দু’দিনব্যাপী অভ্যন্তরীণ বার্ষিক মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক জাতীয় পরিষদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘সংগঠনকে সংহত করি, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করি’ সেøøাগানে অনুষ্ঠিত সভায় রাষ্ট্রদূত বলেন, নেতৃত্বের ধারাবাহিকতাকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের একটি বিশেষ শক্তির দিক। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে যার মধ্যে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং এই ক্ষেত্রে এ দেশের নারী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের এবং সকল শ্রেণীর নারীদের আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত ইতিবাচক এবং দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নারীর সকল উৎপাদন বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীরাই মূল চাবিকাঠি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য গার্মেন্টস শিল্প, কৃষি ও গৃহস্থালি কর্মকা-ে নারীদের অবদান ঐতিহাসিক। এ বিষয়ে সচেতনতা নারীর ক্ষমতায়নের পথ অগ্রসর করবে। তিনি বলেন, তৃণমূলের শক্তির সাথে নারী আন্দোলনের সংগঠকদের সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে এদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধের মতো অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করা সম্ভব। এছাড়া মেয়েদের বিয়ের বয়স আঠারোর কম হওয়া উচিত নয়। নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে এবং এভাবেই পরিবারে, সমাজে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে হবে। তবেই কেবল সমাজে নারীরা উন্নতি লাভ করবে। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহফুজ আনাম বলেন, সুন্দর ও সফল সমাজের জন্য নারী-পুরুষের সমান অবদান প্রয়োজন। আমাদের দেশে নারীদের প্রতি বৈষম্যের বহুমুখী বিষয় বিদ্যমান। রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক বিভাজনের বাইরে গিয়ে নারী হিসেবে একটি বৃহৎ ঐক্য তৈরি করে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইনসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিদ্যমান বৈষম্যগুলোর বিরুদ্ধে একটি গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। নারী ব্যবসায়ী, নারী আইনজীবী, নারী পেশাজীবী-ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, শ্রমিক ও অন্যান্য, নারী উন্নয়ন কর্মী সকলেরই নারীস্বার্থকে ভিত্তি করে একটি সমন্বিত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে যাতে নারীর অবদানগুলো মূল্যায়িত হয় এবং নারীর মানবাধিকার ও ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সফল হতে পারে। এ লক্ষ্যে নারী আন্দোলনকে সমাজের অন্যান্য শক্তিসমূহের সঙ্গে এবং পাশাপাশি মিডিয়ার সাথে একটি প্রফেশনাল সম্পর্ক দক্ষতার সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে। স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর উন্নয়নে রাষ্ট্র এবং নাগরিক সমাজের ভূমিকা চিহ্নিত করা এবং একই সঙ্গে এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তা মোকাবেলার উপায় নির্ধারণ করতে হবে। নানান প্রতিকূলতা ও গভীর চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান নারী শ্রমশক্তি, যার মধ্যে আছে কৃষক নারী, পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী, চ্যালেঞ্জিং পেশাসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত পেশাজীবী নারী, শ্রমিক নারী যারা আগামী দিনের সমৃদ্ধ অর্থনীতির অন্যতম অংশীদার। এছাড়া বিনা পারিশ্রমিকে যারা গৃহস্থালির কাজ বা সেবাদানের কাজ করছেন দেশের উন্নয়নে তাদের অবদানের বিষয়টিও আজ জাতীয় ও বিশ্বপরিসরে স্বীকৃতির দাবিদার। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, নারীরা তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ও ধারাবাহিক নারী আন্দোলনের ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক নারী-পুরুষ বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন নতুন কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে চলছে। আগামী পাঁচ বছরের কর্ম-পরিকল্পনা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে যা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের নারীদের সাহস ও সমর্থন যোগাবে। উদ্বোধনী অধিবেশনে ইউএন উইমেন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন সুশান হান্টার, সহ-সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থসহ ৫৯টি জেলা শাখা থেকে ৫০০ জন সংগঠক অংশগ্রহণ করেন। সভায় ৫টি গ্রুপের ৫ জন সদস্য প্ল্যানারিতে সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন। এছাড়া শুরুতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ছায়া কর্মকার ও এটিএম জাহাঙ্গীর। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আঞ্জুমান আরা আকসির। সভা সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ। দিনশেষে কবি সুফিয়া কামালের উপর তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অধিবেশন পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠন উপ-পরিষদের সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম। দ্বিতীয় কর্ম অধিবেশনে কমিশনভিত্তিক আলোচনা ও সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়।
×