ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বনাশের নেশায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

সর্বনাশের নেশায়

ইয়াবার করাল থাবা থেকে মুক্ত হওয়ার কথা ভাবা দুষ্কর। এর ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নানা অপরাধও বাড়ছে। স্বাভাবিক মানুষ ইয়াবার প্রতিক্রিয়ায় হয়ে ওঠে বিকৃত মানুষ। খুনী হয়ে যেতেও করে না দ্বিধা। ইয়াবা হচ্ছে এক ধরনের এফিড্রিল, যা সামান্য সেবনেই স্নায়ুতন্ত্রকে স্তিমিত করে দেয়। এতে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। যে কারণে সেবনকারীরা কিছুটা সময় প্রাণবন্ত হয়ে বেশি কথা বলতে শুরু করে। সেবনকারী রাতের পর রাত জাগতে পারে। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্লান্ত হয়ে পড়া জার্মান সৈনিকদের চাঙ্গা রাখতে হিটলার সর্বপ্রথম এ ইয়াবা আবিষ্কার করেন। সেই থেকে প্রচলন হলেও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ইয়াবা টিকেছিল। এরপর আশির দশকে এর আকস্মিক বিস্তৃতি ঘটে। হেরোইন ফেনসিডিলের পর ইয়াবা অদ্যাবধি সবচেয়ে আকর্ষণীয় মাদক হিসেবে সমাদৃত। এর অন্যতম কারণ এটি বহন, গ্রহণ, হস্তান্তর, সেবন ও নেশার কার্যকারিতায় অদ্বিতীয়। বাংলাদেশে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথমবারের মতো এই মরণঘাতী নেশা আসতে শুরু করে। ইয়াবার গডফাদার হিসেবে পরিচিত আমিন হুদা কারান্তরীণে থাকার পরও এর আমদানি কমেনি। লাখ লাখ পিস ইয়াবা আটক হওয়ার ঘটনা ঘটছে। যার সঙ্গে শিক্ষিত, ধনাঢ্য, অনেক অভিজাত পরিবারের নারী-পুরুষরাও জড়িত। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আইএস জঙ্গীরাও ইয়াবার অনুরূপ মাদক সেবন করে আসছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ইয়াবা সবচেয়ে ক্ষতিকর মাদক। আসক্তদের এটি দ্রুত মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়। এদের হিতাহিত জ্ঞান কমে যায়। নেশার অর্থ সংগ্রহের জন্য তারা করতে পারে না এমন কোন কাজ নেই। এটি সেবনে কিডনি ও মস্তিষ্ক বিকল হওয়া ছাড়াও ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার, হৃদরোগ ও স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট হয়। অধিকাংশ ইয়াবাসেবী মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, সারাদেশে কমপক্ষে ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৫ লাখ। সারাদেশে এদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। ঢাকায় বিক্রি হওয়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই নকল ও ভেজালে পূর্ণ। এসব ইয়াবা সেবনে খিঁচুনি হয়, শরীর বিবর্ণ হয়ে যায়, ক্ষুধা কমে আসে, মুখ শুকিয়ে যায়, অতিরিক্ত ঘাম হয়, চোখের দৃষ্টি বদলে যায়। নির্ঘুম রাত্রি মানসিক চাপ বাড়ায় একজন ইয়াবা আসক্ত কেবল নিজেই মরে না, পুরো পরিবারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার পর এর চাহিদা ও সরবরাহ বাড়ছে। চোরাই পথে মিয়ানমার হতে আসে এই ইয়াবা। সীমান্ত এলাকায় তারা কারখানা গড়ছে। ইদানীং বাংলাদেশেও এসব কারখানা গড়ে উঠছে। কিছুদিন দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান আটক হয়েছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে ২৮ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা যে বাড়ছে, এটা তারই প্রমাণ। অভিযোগ রয়েছে-এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন কোন সদস্যও জড়িত। ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ধরা পড়লেও অর্থের বিনিময়ে বা প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। কখনও বা কিছুদিন কারাভোগের পর মুক্তি পায়। এসব বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনে আইন সংস্কার করা দরকার। এছাড়া মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। দেশের প্রাণ তরুণ সমাজকে রক্ষায় এই সর্বনাশা নেশার কবল থেকে রক্ষা করা জরুরী।
×