ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কঠিন চাপে আইএস ও সিরীয় বিদ্রোহীরা

রুশ বোমাবর্ষণে উজ্জীবিত আসাদ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

রুশ বোমাবর্ষণে উজ্জীবিত আসাদ

সিরিয়ায় চার মাস ধরে চলমান রুশ বিমান হামলায় বিদ্রোহী বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং এতে অনড় অবস্থানে থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের হাতই শক্তিশালী হচ্ছে। আর জাতিসংঘ সিরীয় শান্তি আলোচনা শুরু করাতে কঠিন সমস্যায় পড়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, সিরীয় সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যকার আলোচনা পরিকল্পনামতো জানুয়ারির শেষ নাগাদ শুরু হওয়া উচিত, কিন্তু কাদের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো উচিত তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। এ পার্থক্য দূর করতে লাভরভ মার্কিন পাররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বুধবার সুইজারল্যান্ডে দেখা করেন, কিন্তু কোন মতৈক্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। একই সময়ে সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্তাফান দ্য মিসতারা বুধবার বলেছেন, জেনেভায় প্রস্তাবিত ঐ শান্তি আলোচনা ২৫ জানুয়ারি নাও শুরু হতে পারে, কিন্তু বড় বড় শক্তিকে আলোচনার টেবিলে আসতে বিবদমান পক্ষগুলোর ওপর অবশ্যই চাপ দিয়ে যেত হবে। খবর ইয়াহু নিউজ ও আলজাজিরা অনলাইনের। সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের ওপর আরও কঠিন আঘাত আনা হচ্ছে, আর দেশটির পূর্ব ও মধ্য অঞ্চলে ইসলামিক স্টেটও সামরিক চাপের মুখে রয়েছে এবং দাম কমে যাওয়ায় এর তেল চোরাচালান ক্ষতিগ্রস্ত এবং যোদ্ধাদের বেতন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিদ্রোহী দলগুলো পশ্চিম সিরিয়ায় বিভিন্ন এলাকায় অনেকাংশে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান তীব্রতর হওয়ার খবর জানায়। এসব এলাকা আসাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গত সপ্তাহে সরকার লতাকিয়া প্রদেশের সালমা শহর দখল করে। এটি ছিল রুশ হস্তক্ষেপ শুরু হওয়ার পর সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। দামেস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, তুরস্কের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত বন্ধু করে দেয়াই প্রথম কাজ। সিরিয়ায় এক সামরিক সূত্রে বলা হয়, তুরস্ক থেকে বিদ্রোহীদের রসদ পাওয়ার পথটি রুশ ও সিরীয় বিমান হামলায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। যুদ্ধের এ গতিপ্রকৃতি শান্তি আলোচনা শুরু করাতে জাতিসংঘ মিসতারার পথকে আরও কঠিন করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও নতুন শান্তি প্রক্রিয়া পাঁচ বছরের যুদ্ধের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে বলে মনে হয়। সেই যুদ্ধ শান্তি স্থাপনের পক্ষে এখনও অনুকূল নাও হয়ে থাকতে পারে। অন্যতম বিদ্রোহী দল ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) কমান্ডার জামিল আল-সালেহ বলেন, বিরাট সংখ্যক রুশ সৈন্য মোতায়েন এবং সীমাহীন বোমাসহ বহুসংখ্যক বিমান ব্যবহারের কারণে বিরোধীদের দখলে থাকা অধিকাংশ এলাকাই আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে। সরকারের সাফল্যকে খাটো করে দেখিয়ে সালেহ বলেন, সৌদি আরব ও তুরস্কের মতো বিদ্রোহীদের বিদেশী সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া সামরিক সহায়তা সরকারী বাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করার পক্ষে যথেষ্ট নয়। সরকারী বাহিনী স্থলযুদ্ধে ইরানেরও সমর্থন পাচ্ছে। তিনি বলেন, এফএসএ আরও অন্যান্য প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর বড় কারণ হলো বিমান থেকে বোমাবর্ষণের ফলে কোন কোন সদরদফতর, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও যোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। যে সাহায্য দেয়া হচ্ছে, তা এ ভয়াবহ হামলা মোকাবিলার পক্ষে সামান্য। বিদ্রোহীরা বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ ভারি ভারি অস্ত্র চাইলেও সৌদি আরব এখনও সেই সহায়তা দেয়নি। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ সাংবাদিকদের বলেন, সিরীয় আলোচনায় কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, তা নিয়ে আমরা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্রও তাদের প্রস্তাব দিয়েছে এবং সিরীয় সরকার-বিরোধী দলগুলোও তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে কোন সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসা এখন মিসতারারই দায়িত্ব। ওয়াশিংটনের অবস্থানের বিরোধিতা করে লাভরভ পুনরায় বলেন, জইশ আল-ইসলাম ও আহরার আল-শামের মতো সশস্ত্র দলগুলো আলোচনায় আমন্ত্রিত বলে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি এদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অভিহিত করেন। শান্তি আলোচনায় ডাকা হবে এমন ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছতে ব্যর্থতা সত্ত্বেও লাভরভ বলেন, তিনি বা কেরি কেউই আলোচনা স্থগিত রাখার কথা ভাবেননি। ২৫ জানুয়ারি জেনেভায় এ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা।
×