ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন পদক্ষেপের কড়া সমালোচনায় তেহরান

নয়া নিষেধাজ্ঞার কবলে ইরান

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

নয়া নিষেধাজ্ঞার কবলে ইরান

ইরানে দীর্ঘদিন বন্দী থাকা তিন মার্কিন নাগরিক মুক্তি পেয়ে রবিবার ইউরোপ পৌঁছার পরই যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইরান সোমবার অবৈধ বলে অভিহিত করে নয়া নিষেধাজ্ঞার কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছে। সাম্প্রতিক এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সূত্র ধরে ইরানের কয়েকটি কোম্পানি ও ব্যক্তির উপর নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। খবর এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসির। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীতে উপকরণ যুগিয়েছিলেন এমন ১১ কোম্পানি ও ব্যক্তির ওপর নয়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব কোম্পানি ও ব্যক্তির সঙ্গে মার্কিন কোন ব্যাংককে লেনদেন না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের সই হওয়া ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির আওতায় দেশটির উপর থেকে ইতোপূর্বেকার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শনিবার থেকে উঠে যাওয়ার পর রবিবার নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পাশাপাশি বন্দী বিনিময়ও করেছে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান। একসঙ্গে চার ইরানী-আমেরিকান ও আলাদাভাবে অপর একজন মার্কিনীকে মুক্তি দেয় ইরান। এর বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে আটক সাত ইরানীকে মুক্তি দেয়া হয়। ডিসেম্বরে এই বন্দীবিনিময় নিয়ে আলোচনা চলার কারণে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘটনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সময় নেয় মার্কিন অর্থ দফতর। মুক্তি পাওয়া মার্কিন নাগরিকদের বহনকারী বিমানটি ইরান ছেড়ে ইউরোপ পৌঁছার পর নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জানা যায়, বন্দী বিনিময় সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়নি। ওই তিন মার্কিন নাগরিক জার্মানিতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসাইন জাবের আনসারি বলেন, পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি কখনও ইরানের লক্ষ্য ছিল না। তিনি এই নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আগেও বলা হয়েছে, ইরান তার বৈধ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী ত্বরান্বিত এবং প্রতিরক্ষা সামর্থ্য জোরদার করার মাধ্যমে এই ধরনের প্রচারণার জবাব দিচ্ছে। ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন দেহকান বলেছেন, এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র হচ্ছে একটি প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র এবং এর পরীক্ষা কোন আন্তর্জাতিক আইনেই নিষিদ্ধ নয়। তার দেশের কোন ক্ষেপণাস্ত্রই পরমাণু ওয়ারহেড বহনের জন্য তৈরি করা হয়নি। কারণ পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারকে হারাম (ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ) মনে করে তেহরান। অক্টোবরে ইরান সুনির্দিষ্টভাবে-নিয়ন্ত্রিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র পরমাণু ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। এই পরীক্ষায় দেশটির ওপর জাতিসংঘের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস ও আর্থিক গোয়েন্দা সংক্রান্ত আন্ডার-সেক্রেটারি এ্যাডাম জে জুবিন বলেছেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য এক উল্লেখযোগ্য হুমকি, এটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয় হয়েই থাকবে। মার্কিন অর্থ দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, পাঁচ ইরানী নাগরিক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন-কেন্দ্রিক একটি ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তৃতীয় দেশের মাধ্যমে এসব কোম্পানি কৌশলে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য স্পর্শকাতর উপাদান বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এবং ওই পাঁচ ইরানী নাগরিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উপাদান কেনার কাজ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এ বিষয়ে আমরা নজরদারি করব। তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কিছুক্ষণ পর ওবামা টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেছেন। তিনি জোর গলায় বলেন, পরমাণু অস্ত্র নির্মাণে ইরানকে কোন সুযোগই দেয়া হবে না। ইরানের তরুণদের লক্ষ্য করে ওবামা বলেছেন, এই পরমাণু চুক্তি তাদের জন্য একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। পরমাণু বিষয়ক এই চুক্তিটি অনুসরণ করেই তোমরা, ইরানের তরুণ-তরুণীরা সারা পৃথিবীর সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ার এক সুযোগ পেয়েছ। একটা ভিন্ন ও উন্নত ভবিষ্যত যা আমাদের জনগণ এবং একই সঙ্গে গোটা বিশ্ববাসীর জন্য অগ্রগতির সুযোগ এনে দেয়, এমন নতুন পথ গ্রহণ করার খুব কম সুযোগই আমাদের আসে। ইরানী জনতার সামনে এখন তেমনি এক সুযোগ এসেছে। তাই এর সুবিধা তাদের নিতে হবে।
×