ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম টি২০ ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে জয় ৪ উইকেটে

জয় দিয়ে বছর শুরু মাশরাফিদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

জয় দিয়ে বছর শুরু মাশরাফিদের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দীর্ঘ ৯ বছর পর আবার একই ভেন্যুতে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই। টি২০ ক্রিকেটে ২০০৬ সালে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে যাত্রার শুরুটা জয় দিয়ে করেছিল বাংলাদেশ। সেই খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে লম্বা সময়ের বিরতির পরেও ফলাফলটা একই থাকলো। চার ম্যাচের টি২০ সিরিজে প্রথমটিতে শুক্রবার স্বাগতিক বাংলাদেশ দল ৪ উইকেটে হারিয়েছে সফরকারী জিম্বাবুইয়েকে। গত বছর জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে হারিয়ে, এবার বছরটা শুরু হলো জয় দিয়েই। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সফলতম বছর ছিল ২০১৫। উঠন্তি মূলা পত্তনেই চেনা যায়, জয়ে শুরুটা সারা বছরই বিজয়ের আলোয় ভাস্বর করেছিল টাইগারদের। এবারও শুরুটা সাফল্য দিয়েই হলো। বছর জুড়ে সাফল্য পাওয়ার গোড়াপত্তনটা কি হয়েই গেলÑ সময়ই বলে দেবে তা। প্রথম ব্যাট করে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৬৩ রান তুলেছিল জিম্বাবুইয়ে। জবাবে ৮ বল হাতে রেখেই ১৮.৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান তুলে জয় পায় বাংলাদেশ। ৪ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ২০০৬ সালের ২৮ নবেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম টি২০ খেলেছিল বাংলাদেশ দল এই ভেন্যুতে। আর শাহরিয়ার নাফীসের নেতৃত্বে সেই ম্যাচ জয় দিয়ে দারুণ সূচনা করেছিল টাইগাররা টি২০ ক্রিকেটে। কিন্তু সে জয়ের ধারাটা আর ধরে রাখা যায়নি। টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনও নিজেদের তেমন ভাল কোন দলে পরিণত করতে পারেনি। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ের অবস্থাটাও তেমন ভাল কিছু হয়নি। কিন্তু পুরনো ইতিহাস ও পরিসংখ্যান বিবেচনায় বরাবরই পরস্পরের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দল। দু’দলেরই লক্ষ্য আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ভালভাবে প্রস্তুত করে তোলার। খুলনায় চার ম্যাচের সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশ দলের পক্ষে দু’জনের অভিষেক হয়Ñ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান এবং অলরাউন্ডার শুভাগত হোম চৌধুরীর। মুশফিকুর রহীম শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই একাদশে, উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে দাঁড়িয়েছেন সোহান। বাংলাদেশী বোলাররা শুরু থেকেই কোন প্রভাব খাটাতে পারেননি। সাবলীলভাবেই স্বাগতিক বোলারদের খেলে দ্রুতগতিতে রান করে গেছেন জিম্বাবুইয়ের দুই ওপেনার ভুসি সিবান্দা ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। প্রথম উইকেট জুটিতে নিজেদের টি২০ ইতিহাসে রেকর্ড ১০১ রান যোগ করেন এ দু’জন। গত বছর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ২৬ অক্টোবর বুলাওয়েতে ১০০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন সিকান্দার রাজা ও চামু চিবাভা। দারুণ জমে যাওয়া জুটির কল্যাণে বিশাল সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। এ জুটি ভেঙ্গে দেন সাকিব আল হাসান। সিবান্দা ৩৯ বলে ৪৬ রান করে ফিরে যান। এরপরও ভালভাবেই এগুচ্ছিল সফরকারীরা। কিন্তু টানা দুই রান আউট রানের গতি কমিয়ে দেয় তাদের। মাসাকাদজা ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত সেরা ৭৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ম্যালকম ওয়ালারও রানআউট হয়ে যান। ফিরতি স্পেলে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও আল-আমিন হোসেন। সাকিব উইকেট নিলেও বেদম পিটুনি খেয়েছেন। কিন্তু এ দুই পেসার দুর্দান্ত বোলিং করে জিম্বাবুইয়ের রানের গতিতে রাশ টেনেছেন। শেষ ৪ ওভারে জিম্বাবুইয়ে মাত্র ২১ রান তুলতে গিয়েই হারিয়েছে ৫ উইকেট। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল ১৮০-৯০ রান করে ফেলবে তারা। ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজ টানা দুই বলে এলটন চিগুম্বুরা (৩) ও লুক জঙ্গেকে (০) বোল্ড করে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান। হ্যাটট্রিকের সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি মুস্তাফিজ। ২০তম ওভারের প্রথম ও শেষ বলে দুই উইকেট তুলে নেন আল-আমিন। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুইয়ে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান তুলতে সক্ষম হয়। শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদেশ। টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের রান তাড়া করার রেকর্ডটা বেশ ভাল। ১৩ জয়ের মধ্যে ৯টিতেই পরে ব্যাট করে জিতেছে টাইগাররা। এর মধ্যে ১৬০ রানের বেশি রান তাড়া করার রেকর্ড একটিই। ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জোহানেসবার্গে ১৬৪ রান তাড়া করে ৬ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ ২ ওভার হাতে রেখেই। সে জন্যই আশাটা ছিল। ৩ ওভারেই ২৬ রান তুলে উড়ন্ত সূচনা করে টাইগাররা। কিন্তু ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা সৌম্য সরকারের দুর্ভাগ্যজনক রানআউট দিয়ে শুরু (৭)। দারুণ খেলতে থাকা তামিম ইকবালও ২৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। অভিষিক্ত শুভাগতকে এবার বিপিএলের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের জন্য নেয়া হয়েছিল। কিন্তু চার নম্বরে নেমে তিনি সুবিধা করতে পারেননি। ৬ রান করেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন। টি২০ স্পেশালিস্ট নাম পাওয়া সাব্বির দুর্দান্ত খেলছিলেন। তিনিও ৩৬ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৪৬ রান করে আউট হয়ে গেলে যেন বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। তা ঘনীভূত হয় মুশফিক (২৬) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৭) দ্রুতই সাজঘরে ফিরলে। শেষ ৩ ওভারে ২৭ রান, ৪ উইকেট হাতে দলের। সাকিব ও তরুণ সোহান দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। যদিও যে চারে টাইগারদের জয় এসেছে সেটি ছিল ওয়াইড। সাকিব ১৩ বলে ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১৮.৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ।
×