ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন মিশন গুটিয়ে ফেলায় মস্কো চায় সম্প্রসারিত ভূমিকা

রুশ অস্ত্র পাবে আফগান বাহিনী

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

রুশ অস্ত্র পাবে আফগান বাহিনী

রাশিয়া আগামী মাসে আফগানিস্তানে ক্ষুদ্রাস্ত্রের চালান পাঠাবে। এক শীর্ষ কূটনীতিক বুধবার একথা বলেন। যখন যুক্তরাষ্ট্র এর সামরিক মিশন ক্রমশ গুটিয়ে ফেলছে এবং তালেবান ও অন্যান্য জঙ্গী দৃশ্যত প্রভাব বৃদ্ধি করছে তখন রাশিয়া এভাবে আফগানিস্তানে এর ভূমিকা সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নিল। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও ইয়াহু নিউজের। আফগানিস্তানের চরমপন্থী উপদলগুলো উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত পেরিয়ে সাবেক সোভিয়েত মধ্য এশীয় দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মস্কো উদ্বিগ্ন। এসব দেশে মস্কোর বড় রকমের সামরিক উপস্থিত রয়েছে। ঐ সিদ্ধান্ত ঠান্ডা লড়াইকালীন অন্যতম মিত্র আফগানিস্তানে রাশিয়ার ভূমিকাকেও জোরদার করবে। মস্কো ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছিল। যখন রাশিয়া এর সীমান্তের বাইরে তৎপরতা বৃদ্ধি করছে, সিরিয়াতে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে এবং আফগানিস্তান, সিরিয়া ও অন্যত্র সংঘাত নিরসনে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ভূমিকা লাভের চেষ্টা করছে তখন মস্কো ঐ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করল। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মস্কো ক্ষুদ্র অস্ত্রের চালান পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, তবে অন্যান্য অস্ত্র পাঠানো থেকে বিরত থাকবে। প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত জামির কাবুলভ বলেন, ফেব্রুয়ারিতে ঐসব অস্ত্র পাঠানো হবে এবং এখনকার মতো এটি বেশ যথেষ্ট। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বুধবার একথা জানায়। প্রেসিডেন্ট পুতিন আফগানিস্তান থেকে জঙ্গীদের অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা সম্পর্কে মধ্য এশীয় দেশগুলোর নেতাদের সতর্ক করে দেন। তিনি পরিস্থিতি প্রায় গুরুতর বলে অভিহিত করেন। ইসলামিক স্টেট, আল কায়েদা ও তালেবানের কাছ থেকে হুমকির মুখে পড়ে কাবুল আফগানিস্তানে সামরিক সহায়তা বাড়াতে মস্কোর প্রতি অনুরোধ জানায়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে এর সামরিক উপস্থিতি ক্রমশ গুটিয়ে ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা গত বছর তাদের সামরিক বাহিনীর অধিকাংশই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে কাবুলকে তালেবানের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টায় নতুন অংশীদার খুঁজতে হচ্ছে। ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের হাতে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে রাশিয়া আফগান বিমানবাহিনীর পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছে। কিন্তু আফগান কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কোকে এর সহায়তা বাড়াতে চাপ দিয়েছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে মূল্য পাওয়ার পর রাশিয়া কাবুলের কাছে অস্ত্র পাঠায়। গত শরৎকালে আফগান কর্মকর্তারা হেলিকপ্টার গানশিপ ও ভারি অস্ত্রশস্ত্রের জন্য অনুরোধ জানাতে মস্কো সফর করেন। ২০১১ সালে প্রতিরক্ষা দফতর আফগান সেনাবাহিনীকে রুশ নির্মিত হেলিকপ্টার সরবরাহ করতে রুশ অস্ত্র বিক্রয় সংস্থা রোসোবোরন এক্সপোর্টের সঙ্গে এক চুক্তি সই করে। ইউক্রেনে রুশ সামরিক হস্তক্ষেপের পর ঐ সংস্থার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু নবেম্বরে হেলিকপ্টারগুলো সরবরাহ করার ক্ষেত্রে এ সংস্থাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পুতিন অক্টোবরে বলেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি বলতে গেলে গুরুতর। তিনি সেখানে তার দেশের ভূমিকা বাড়ানোর আগ্রহের আভাস দেন। কিন্তু আফগানিস্তানে ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর ক্ষেত্রে মস্কোকে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দেশটিতে সোভিয়েত সৈন্যদের ব্যাপক সংখ্যায় নিহত হওয়ার স্মৃতি এখনও প্রকট। ১৯৭৯-১৯৮৯ সালের আফগান যুদ্ধে হাজার হাজার সোভিয়েত সৈন্য নিহত হয় এবং এটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হওয়ার অন্যতম কারণ। সোভিয়েত সৈন্যরা পাশ্চাত্যের সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। ওসামা বিন লাদেনের মতো ইসলামপন্থী যোদ্ধারা বিদ্রোহী দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এমন কি এখনও সৈন্যদের নিহত হওয়ার ঐ ঘটনা রাশিয়ায় অন্যতম রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়। গত মাসে রাশিয়া ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করতে তালেবানের সঙ্গে সীমিত মাত্রায় তথ্য বিনিময় শুরু করেছে বলে ঘোষণা করে। আফগানিস্তানে আইএসের উপস্থিতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জঙ্গী দলটি এক অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে বলে রাশিয়ার উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় ঐ অস্বাভাবিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়।
×