ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দূতাবাসে হামলার পর সঙ্কটে ইরান

সৌদি ফাঁদে পা দিয়েছেন ইরানী নেতারা!

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

সৌদি ফাঁদে পা দিয়েছেন ইরানী নেতারা!

যখন এক সৌদি রাষ্ট্রীয় জল্লাদ শনিবার বিশিষ্ট শিয়া ভিন্ন মতাবলম্বী শেখ নিমর আল-নিমরের শিরুচ্ছেদ করে তখন ইরানের শিয়া ধর্মতান্ত্রিক শাসকরা একে দেশটির আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের এক পরিকল্পিত উস্কানি বলে ধরে নেন। তারা রাস্তায় রাস্তায় কট্টরপন্থীদের ক্ষোভ ছড়িয়ে দেয়ার প্রিয় কৌশলটি প্রয়োগ করেন। ওই মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের জাতীয়তাবাদী ওয়েবসাইটগুলো তেহরানে সৌদি দূতাবাস এবং পূর্বাঞ্চলীয় ইরানী শহর মাশহাদস্থ সৌদি কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানায়। বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা পুলিশের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। যখন ক্ষুব্ধ প্রতিবাদীরা আগুনে বোমা দিয়ে দূতাবাস ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং দেয়াল টপকে গিয়ে ভবনের কোন কোন অংশ ভেঙ্গে ফেলে তখন পুলিশ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। এখন ইরানী নেতারা সৌদিদের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন কিনা তা তারা হঠাৎ ভেবে দেখতে বাধ্য হয়েছেন। যখন তারা বিশ্বের এক গ্রহণযোগ্য দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠার আশা করছে তখন তারা নিজেদের এক নতুন সঙ্কটে পড়া অবস্থায় দেখতে পাচ্ছে। ইরান সৌদি আরবে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ার ঘটনাগুলো কাজে লাগাতে পারত। কিন্তু সে নিজেকে ওই অঞ্চলে ও বিদেশে এক উস্কানিদাতা হিসেবে আবারও প্রতিপক্ষগুলোর দিক থেকে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বের শিয়া ধর্মতত্ত্বের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র কওম শহরের অন্যতম ধর্মীয় নেতা লাজেল মেবোদি বলেন, তারা জানত, আমরা অন্য পথের কথা ভাবতে পারব না। তারা কি আসলেই তাকে হত্যা করত? তারা আমাদের সবাইকেই হতভম্ব করে দেয়। দূতাবাসে হামলার পর সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সরকারীভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং সোমবার বাহরাইন ও সুদান সৌদি আরবকে অনুসরণ করে। ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বাণিজ্যিক অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানের সঙ্গে সম্পর্ককে নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বছরের পর বছর ধরে আলোচনা শেষে প্রত্যাহার করার কথা রয়েছে। পরমাণু চুক্তি কার্যকর হলে ইরানের জনগণ শান্তি অর্জন করবে এবং বিশ্বের দ্বার দেশের অর্থনীতির জন্য খুলে যাবে বলে ডিসেম্বর মাসে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের কোন কোন প্রতিক্রিয়াশীল দেশ পরমাণু চুক্তিটি স্বাক্ষরের পথ রুদ্ধ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। তিনি ইসরাইল ও সৌদি আরবের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন। এখন কোন কোন ইরানী সৌদি আরব নতুন কূটনৈতিক সঙ্কটে আবারও সুবিধাজনক অবস্থান লাভ করেছে বলে ভাবতে শুরু করেছেন। ইরানী ধর্মীয় নেতা মেবোদি বলেন, সুন্নি ও শিয়া মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন বাড়াতে সৌদি আরব এ সঙ্কটকালে আল-নিমরকে হত্যা করে। দুর্ভাগ্যের কথা, তারা আমাদের অতি প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল এবং এখন তারা ইরানকে আবারও একঘরে করার চেষ্টায় এটিকে আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস।
×