ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি বড় হুমকি’

উত্তর কোরিয়ার ॥ হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

উত্তর কোরিয়ার ॥ হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা

উত্তর কোরিয়া বুধবার হাইড্রোজেন বোমার প্রথম সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে। এ দাবি সঠিক হলে তা একঘরে হয়ে থাকা দেশটির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি নতুন হুমকি। এ খবরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার পিয়ংইয়ং বলেছিল তাদের প্রধান পরমাণু স্থাপনা চালু অবস্থায় রয়েছে। এ থেকে ব্যাপকমাত্রায় উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্র যে কোন সময়ে তৈরি করা হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘যে কোন সময়’ ব্যবহার করা হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল ১০টায় উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো সফলভাবে হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। সফলভাবে হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া অগ্রগামী পারমাণবিক দেশগুলোর কাতারে শামিল হলো। দেশটির নেতা কিম জং-উন ব্যক্তিগতভাবে হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিমের জন্মদিনের দুই দিন আগে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম থেকে এ বোমার পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দেয়া হলো। উত্তর কোরিয়া আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, অল্প সময়ের মধ্যেই ‘গুরুত্বপূর্ণ ও অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র’ আসছে। খবর ইয়াহু নিউজ ও এএফপির। গত মাসে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন জানিয়েছিলেন, পিয়ংইয়ং ইতোমধ্যে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করেছে। যদিও তার এ দাবির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ওই ঘোষণা আসার আগে পরমাণু পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হওয়া উত্তর কোরিয়ার একটি কেন্দ্রের কাছাকাছি ভূকম্পন টের পাওয়া যায়। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, পুঞ্জিরাই এলাকায় হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষার ফলে ৫ দশমিক ১ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে উত্তর কোরিয়া ভূগর্ভে তিন দফা পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এসব পরীক্ষার সবগুলোই করা হয়েছে পুঞ্জিরাই স্থাপনায়। যুক্তরাষ্ট্র যে কোন ধরনের উস্কানিমূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী দেশ চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি মানবসৃষ্ট বলে তারা মনে করে। এর অর্থ উত্তর কোরিয়া নতুন একটি পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে থাকতে পারে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও এ সময় ঘোষণা দিতে ব্যস্ত থাকে। বলা হয়েছিল, অল্প সময়ের মধ্যেই ‘বিশেষ, তাৎপর্যপূর্ণ’ ঘোষণা দেয়া হবে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, পুঞ্জিরাই থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে নতুন ভূমিকম্পন শনাক্ত হয়। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। দক্ষিণ কোরিয়ার আবহাওয়া সংস্থা ভূমিকম্পটি ৪ দশমিক ২ মাত্রার ছিল বলে জানিয়েছে। জতিসংঘের পরমাণু পরীক্ষা নজরদারি সংস্থা কম্প্রিহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটি অর্গানাইজেশনের প্রধান লাসিনা জারবো বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার দাবি সঠিক হলে এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি এক বড় হুমকি। পরমাণু অস্ত্র সর্বাত্মক নিষিদ্ধকরণ চুক্তিটির প্রতি ১৯৯৬ সাল থেকে ১৮৩টি দেশ সম্মান দেখিয়ে এসেছে। তিনি উত্তর কোরিয়াকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ফের আহ্বান জানান। উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ওই ঘোষণা আসার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, এই কাজ আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বৈশ্বিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগকে পিয়ংইয়ংয়ের মধ্য দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষার কড়া সমালোচনা করে একে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি ‘বড় ধরনের উস্কানি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে ‘কঠোর’ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার ‘তীব্র বিরোধিতা করে চীন বলেছে, পিয়ংইয়ং ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা বিবেচনায় নেয়নি।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংকালে বলেন, আমরা উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের প্রতি অবিচল থাকা এবং পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এমন কোন কর্মকা- থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। উত্তর কোরিয়া এর আগে ২০০৬, ০৯ ও ১৩ সালে তিনটি পরমাণু বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা পিয়ংইয়ংয়ের এসব দাবির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি। হাইড্রোজেন বোমার ধ্বংস ক্ষমতা সাধারণ পরমাণু বোমার চেয়ে বেশি। এ বোমা ব্যবহার করতে হলে পরপর দুই বার পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটাতে হয়। প্রথমবার ঘটানোর পর পরমাণু ফিউশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফিউশন প্রক্রিয়া চালু হয়। এভাবে প্রচ- শক্তির নির্গমন শুরু হয়।
×