ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

টি২০ ফরমেটে ব্যস্ত সময়ে মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

টি২০ ফরমেটে ব্যস্ত সময়ে মাশরাফিরা

টি২০ ফরমেটের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল তেমন সিদ্ধহস্ত হতে পারেনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখানো বাংলাদেশ জাতীয় দল বর্তমানে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বরে। ২০১৫ সালে যে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে সেটা ধরে রাখতে পারলে হয়ত অচিরেই আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে টাইগাররা। কারণ খুব বেশি পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ (৯৭ রেটিং) ইংল্যান্ড (১০১) ও শ্রীলঙ্কার (১০৪) চেয়ে। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফরমেট টি২০-তে বাংলাদেশ বর্তমানে ১০ নম্বরে। অথচ এই ফরমেটে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ আফগানিস্তান বাংলাদেশের এক ধাপ ওপরে নয়ে অবস্থান করছে। নতুন বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশ দলের চ্যালেঞ্জ টি২০ ফরমেটে নিজেদের ভাল এক অবস্থান তৈরির। কারণ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে জানুয়ারির মাঝামাঝি থাকবে টি২০ সিরিজ। এরপর আছে টি২০ এশিয়া কাপ এবং তারপরই টি২০ বিশ্বকাপ। ইতোমধ্যেই ৩ জানুয়ারি থেকে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ দল সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য। এছাড়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগও (বিসিএল) শুরু হবে কয়েকদিনের মধ্যে। সবমিলিয়ে দারুণ ব্যস্ত সময় ক্রিকেটারদের টানা তিন মাস। গত বছর বাংলাদেশ দল একটি করে টেস্ট ও টি২০ সিরিজ ছাড়া কোন সিরিজ হারেনি। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ ড্র করলেও পাকিস্তানের কাছে হারটাই একমাত্র পরাজয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১-০ তে টি২০ সিরিজ জিতলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২-০ ব্যবধানে হারে। আর বছরের শেষদিকে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করে। অথচ জিম্বাবুইয়ে ওয়ানডে সিরিজে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। বর্তমানে আইসিসির টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৪ নম্বর দল জিম্বাবুইয়ে। তাদের কাছেও এক টি২০ পরাজয়টা সঙ্কেত দিয়েছে যে এখনও ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম এ ফরমেটে তেমন ভাল অবস্থান তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ, অনেকটাই দুর্বলতর। এছাড়া কম টি২০ ম্যাচ খেলাটাও অনেক বড় কারণ এ ফরমেটে ধাতস্থ হতে না পারার। ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৬ টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে ৩৩ ম্যাচেই হার দেখেছে, জয় মাত্র ১৩টি। টি২০ ক্রিকেটে ভাল অবস্থানে থাকতে না পারার জন্যই এবারও টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে সহযোগী সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে খেলতে হবে। ২০১৪ সালে আয়োজক হিসেবে টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড এভাবেই খেলতে হয়েছে। সেখানে হংকংয়ের মতো একেবারেই দুর্বল দলের কাছেও হেরে নিজেদের টি২০ দুর্বলতা ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের। তবে সেবার টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার আগে তেমন টি২০ ম্যাচই খেলার সুযোগ পায়নি টাইগাররা। এমনকি দেশের একমাত্র টি২০ ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০-ও হয়নি। এবার অবশ্য সেদিক থেকে ক্রিকেটাররা কিছুটা সুবিধাজনক পর্যায়ে আছেন। কারণ এবার বিপিএলের জমজমাট আসরে সবাই প্রতিযোগিতামূলক অনেক টি২০ ম্যাচ খেলেছেন। অনুশীলনের চেয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ অনেক বড় প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতিটা প্রায় এক মাস ধরে চলা বিপিএলের মাধ্যমে নিতে পেরেছেন ক্রিকেটাররা। এবার সেটা প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ আসন্ন আন্তর্জাতিক টি২০ টুর্নামেন্টগুলোয়। গত ১৫ ডিসেম্বর বিপিএল শেষ হয়েছে। এরপর ১৮ দিন পুরোপুরিই ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন ক্রিকেটাররা। বছরজুড়ে ব্যস্ততা শেষে ছুটি কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। আর সে কারণে কিছুটা ফিটনেস ঘাটতিও হয়েছে। ৩ জানুয়ারি অনুশীলন শুরুর পর এই ফিটনেসটাই দেখেছেন জাতীয় দলের ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন। তিনি জানিয়েছেন আপ টু দ্য মার্ক নেই কারও ফিটনেস। সে কারণে উন্নতি করতে হলে বেশ কাজ করতে হবে। এছাড়া ইনজুরি সমস্যাও আছে দলের। সে কারণে এমনকি প্রাথমিক দলে সুযোগই পাননি অন্যতম পেসার রুবেল হোসেন। কিন্তু ভিল্লাভারায়ন জানালেন যারা ক্যাম্পে নেই তাদের স্বীয় ক্লাবের সঙ্গে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া উচিত এবং ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও মাঠে থাকা জরুরী। তিনি মনে করেন টানা ক্রিকেটের মধ্যে থাকলে ক্রিকেটারদের ইনজুরি খুবই স্বাভাবিক, অন্য সবগুলো দলের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা থাকে। আর এবারে বিপিএলে তিনি লক্ষ্য করেছেন অনেক ক্রিকেটারই খুব সহজ কিছু ক্যাচ ছেড়েছেন। এটা ফিটনেস ঘাটতির কারণে হতে পারে বলেই ধারণা তার। কারণ ফিটনেসের সঙ্গে ফিল্ডিংয়ের একটি বড় ধরনের সংযোগ আছে। সেজন্য ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসলের সঙ্গে মিলে ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন তিনি। আর এর সবকিছুকে জয় করেই আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে হবে বাংলাদেশ দলকে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া কাপ। এবারই প্রথম এশিয়ার বিশ্বকাপ ক্রিকেট হিসেবে বিবেচিত এ টুর্নামেন্ট হবে টি২০ ফরমেটে। এর মূল কারণ টি২০ বিশ্বকাপের জন্য আগাম প্রস্তুত হওয়া। ভারতে ৮ মার্চ শুরু হবে টি২০ বিশ্বকাপ। সেটার জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি সারতেই এশিয়া কাপ টি২০ ফরমেটে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য এর আগেই নিজেদের আরেকটু ভালভাবে প্রস্তুত করতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আসন্ন ঘরোয়া সিরিজ করা হচ্ছে শুধুই টি২০ ফরমেটের। এখন পর্যন্ত সিরিজের সময়সূচী চূড়ান্ত না হলেও ৫টি টি২০ ম্যাচ থাকবে এমনটাই জানানো হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে। জানুয়ারির শেষেই সিরিজ সমাপ্ত হবে। তখন ক্রিকেটাররা আবার টি২০ ফরমেটের বাইরে চলে যাবেন। খেলবেন চারদিনের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আসর বিসিএল। তবে ৪ ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছেন পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) টি২০ আসরে খেলার। প্রথমবারের মতো পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) আয়োজনে পিএসএল অনুষ্ঠিত হবে আরব আমিরাতে ৪ ফেব্রুয়ারিতে। সেখানে খেলার সুযোগ থাকছে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম ও মুস্তাফিজুর রহমানের। তাই এই চার ক্রিকেটারের টি২০ প্রস্তুতিটা থেমে থাকবে না। তারপরই টি২০ এশিয়া কাপ। সেখানে খেলে টি২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা হয়ে যাবে বেশ ভালভাবে। এবারও বাংলাদেশকে প্রাথমিক রাউন্ডে খেলতে হবে। বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ‘এ’ গ্রুপে আয়ারল্যান্ড, ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপে চমক দেখিয়ে সুপারলীগ খেলা হল্যান্ড ও ওমানের বিরুদ্ধে। টানা টি২০ ক্রিকেটের বড় এই আসর দুটির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য এবার বড় পরীক্ষা টাইগারদের জন্য। প্রস্তুতিটা শুরু হয়ে গেছে। ব্যস্ত সময়ের জন্য ফিটনেস ধরে রাখা এবং ইনজুরি মুক্ত থাকাটাও বড় চ্যালেঞ্জ ক্রিকেটারদের জন্য। টি২০ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজেই ইনজুরির কারণে বিপিএলের শেষদিকে বোলিং করতে পারেননি। তাঁকেও কাটিয়ে উঠতে হবে সেই সমস্যা। কারণ টানা টি২০ ব্যস্ততা এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ দলের জন্য।
×