ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনে উগ্র মতবাদ নীরবে গ্রহণ করা হচ্ছে ॥ ক্যামেরনের হুঁশিয়ারি

আইএসে মদদ চরমপন্থীদের

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২০ জুন ২০১৫

আইএসে মদদ চরমপন্থীদের

যুক্তরাজ্যের মুসলিমরা জিহাদীদের সহায়তা করছেন বলে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন অভিযোগ করেছেন। তিনি শুক্রবার স্পষ্ট ভাষায় দেয়া এক ভাষণে সতর্ক করে দেন যে মুসলিম সম্প্রদায়কে বর্বর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আচরণকে নীরবে মেনে নেয়া অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি সেøাভাকিয়ায় এক বড় ধরনের নিরাপত্তা সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ডেভিড ক্যামেরন বলেন, খুব বেশিসংখ্যক ব্রিটিশ মুসলিম চরমপন্থী মতবাদকে মেনে নিচ্ছে। তিনি এ ‘বিষাক্ত মতবাদের’ বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে মুসলিম পরিবারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এ মতবাদই শত শত যুবককে ইসলামিক স্টেটের পক্ষে জিহাদ চালাতে চালিত করছে। প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ কিশোরদের সিরিয়া যাওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে দোষারোপ করা বন্ধ করতেও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে দেন যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন কোন অংশ গণতন্ত্র ও পশ্চিমা মূল্যবোধের প্রতি ঘৃণাকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য দায়ী। ফলে হিংসাশ্রয়ী চরমপন্থী মতবাদের শক্তি অর্জন করা আরও সহজ হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গত সপ্তাহান্তে ১৭ বছরের কিশোর তালহা আসমল উত্তর ইরাকের বাইজি শহরে বিস্ফোরক ভরা এক গাড়ির বিস্ফোরণ ঘটায়। সেই ছিল ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়স্ক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী। তিনি বলেন, আমরা সব সময়েই বিক্ষুব্ধ কিশোর-কিশোরীদের কথিত বিপ্লবী ধ্যান-ধারণায় দীক্ষিত হতে দেখেছি। এটি অনিষ্টকর স্ববিরোধী ও নিষ্ফল। কিন্তু তিনি বলেন যে, কোন উদ্বিগ্ন কিশোরের জন্য জিহাদী হওয়া আরও সহজ হয়, যদি চরমপন্থী মতবাদকে অনলাইনে বা সম্ভবত আপনাদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের কোন কোন অংশে নীরবে গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ইসলামিক স্টেট ও এর মধ্যযুগীয় দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বিশ্বের জন্য অন্যতম বড় হুমকি। পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার পর দিন দেয়া ওই ভাষণ মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন কোন অংশের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে। ব্রিটিশ মুসলিম তরুণদের উগ্র মতবাদে দীক্ষিত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ক্যামেরন ওই সব মন্তব্য করেন। সোমবার জানা যায় যে, ব্র্যাডফোর্ডের তিন ব্রিটিশ বোন ও তাদের নয় শিশু আইএস দলে যোগ দিতে সিরিয়া গেছেন। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আসমলের পরিবার বলেছে যে, তারা সম্পূর্ণভাবে বিচলিত ও ব্যথিত হয়েছে। ক্যামেরন ওই সব ঘটনাকে ব্রিটেনের প্রতি হুমকির সৃষ্টি করছেÑ এমন এক গুরুতর প্রবণতার অংশ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এসব কিশোর-কিশোরী তাদের বুকে বিস্ফোরক বেঁধে নিজেদের উড়িয়ে দিয়ে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করতে প্রায়ই স্নেহময় সম্ভ্রান্ত পরিবার, ভাল স্কুল ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত ত্যাগ করে বাড়ি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারা এমন এক স্থানে যাচ্ছে সেখানে নয় বছরে বিয়ে করা বৈধ এবং জিহাদীদের সেবা করাই নারীদের কাজ। তারা এমনি এক তথাকথিত রাষ্ট্রের সদস্য হতে সেখানে যাচ্ছে, যার ধর্মান্ধরা যেসব দেশ থেকে এসেছে সেসব দেশে ঘৃণ্য সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানের ষড়যন্ত্র করছে এবং এরূপ তৎপরতা উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরও সতর্ক করে দেন যে, তারা এমন এক চরমপন্থী মতবাদের দ্বারা চালিত হচ্ছে, যে মতবাদের কোন কোন অংশের সাধারণ ব্রিটিশ মুসলিম বসতিগুলোতে অন্তত কিছুটা প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, এটা এক ইসলামী চরমপন্থী মতবাদ। এ মতবাদে বলা হয়, পাশ্চাত্য খারাপ গণতন্ত্র ভুল, নারীরা নিকৃষ্ট এবং সমকাম অনাচার। ক্যামেরন সেসব মুসলিমের সমালোচনা করেন, যারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইএসে যোগ দিতে এমন প্রায় ৭০০ কিশোরকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থতার দায়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে দোষারোপ করে। তিনি বলেন, প্রায়ই আমরা একথা শুনি যে, চরমপন্থী মতবাদে লোকজনের দীক্ষিত হওয়ার জন্য অন্য কেউই দায়ী। শুক্রবারের ভাষণ ছিল ক্যামেরনের ২০১১ সালে দেয়া এক ভাষণেরই প্রতিধ্বনি। সেই ভাষণে ক্যামেরন ব্রিটেনে চরমপন্থী মতবাদের উত্থানের জন্য বহু কৃষ্টিবাদকেই দোষারোপ করেন।
×