ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় হেগেলকে বিদায় দিলেন ওবামা

মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি ॥ ঢেলে সাজা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৬ নভেম্বর ২০১৪

মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি ॥ ঢেলে সাজা হচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদ থেকে চাক হেগেলকে বাদ দিয়েছেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে আমেরিকার লড়াই চলার সময় পেন্টাগণের নেতৃত্ব দিতে হেগেলের সামর্থ্য নিয়ে আস্থা হারান। গত বছর ওই পদে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই হেগেলের সঙ্গে ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা টিমের সম্পর্কে ঝঞ্ঝাট দেখা দেয়। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বোমাবর্ষণ জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হেগেলের সমস্যাই ঘনীভূত হতে থাকে। হোয়াইট হাউস হেগেলের বিদায়কে পরস্পর সম্মত সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করে। কিন্তু তাদের মধ্যকার মতপার্থক্যের অবনতি ঘটে। একেবারে সম্প্রতি হেগেল এক স্মারকপত্রে ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে আরও সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বনের পক্ষে যুক্তি দেন। স্মারকটি ফাঁস হয়ে যায়। প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আসলে বরখাস্ত করা হয় বলে ওয়াকিফহাল কর্মকর্তারা জানান। খবর টেলিগ্রাফ ও ইয়াহু নিউজের। কংগ্রেসের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের ডেমোক্রেটিক পার্টির শোচনীয় পরাজয়ের পর তিনি জাতীয় নিরাপত্তা টিমকে ঢেলে সাজাবেন বলে কয়েক সপ্তাহ ধরে জল্পনা-কল্পনা করছিলেন। এ নির্বাচনকে প্রশাসনের দৃশ্যত দ্বিধাগ্রস্ত পররাষ্ট্র নীতির ওপর এক গণভোট হিসেবেই দেখা হয়। এর পরই ওবামা হেগেলকে বিদায় দেয়ার পদক্ষেপ নিলেন। হেগেল (৬৮) দু’বছরেরও কম সময় ধরে ওই পদে তার দায়িত্ব পালনকালে প্রায়ই তার আকর্ষণহীন ব্যক্তিগত চালচলনের জন্য সমালোচিত হন। তিনিই ছিলেন প্রথম সদস্য যাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদে নিয়োগ করা হয়। তিনি ও তার ভাই টম ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয় হ্রাস ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের অবসান ঘটানোয় সহায়তা করতে হেগেলকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আভাস দেন যে, মধ্যপ্রাচ্য, উক্রাইন ও পাশ্চিম আফ্রিকায় সম্প্রতি সৃষ্ট আন্তর্জাতিক সঙ্কট মোকাবেলার জন্য ভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব এখন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা হেগেলের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করে দৃশ্যত স্বীকার করেন যে, সাবেক রিপাবলিকান সিনেটর হেগেল প্রশাসনে কাজ করতে রাজি হওয়ার পর থেকে ঘটনাবলীর পরিবর্তন ঘটে চলেছে। ওবামা বলেন, যখন আমি হেগেলকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে বলেছিলাম, তখন আমরা এক তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের যুগে প্রবেশ করছিলাম। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার ভবিষ্যৎ মিশনের জন্য আমাদের বাহিনীকে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তা বোধ এবং কঠোর আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী ও প্রস্তুত রাখা। হেগেল জানান যে, তিনি তার উত্তরসূরির নিয়োগ মার্কিন সিনেটে অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন। তার উত্তরসূরি এখনও পর্যন্ত মনোনীতই হননি। ওই পদে মনোনীত হওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দিক দিয়ে অন্যতম সাবেক প্রতিরক্ষা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মিশেল ফ্লোরনয়ই সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। তিনিই হতে পারেন প্রথম মহিলা মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রতিরক্ষা দফতরের অন্যতম সাবেক উর্ধতন কর্মকর্তা ব্যারি পাভেল বলেন, আন্তর্জাতিক সঙ্কটের সংখ্যা বৃদ্ধি পদকপ্রাপ্ত ওই সৈনিককে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে অনুপযুক্ত করে তুলে মাত্র। পাভেল বলেন, সেই সময়ে সিনেটর হেগেলের অসংখ্য গুণাবলী তাকে প্রেসিডেন্টের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। পরিস্থিতি খুবই বদলে যাওয়ায় সেসব গুণ এখন কিছুটা কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশ্ব বদলে গেছে এবং এর জবাবে হোয়াইট হাউসও বদলাচ্ছে। হেগেল সিনেট সদস্য থাকার সময় একজন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান বলে গণ্য হন। তিনি ২০০৭ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাকে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিবাদ করলে ডেমোক্র্যাটদের শ্রদ্ধাভাজন হন। কিন্তু শুরু থেকেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ওই পদে তার মনোনয়ন অনুমোদনের জন্য সিনেটে শুনানি চলাকালে তিনি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে ভুল করলে হোয়াইট হাউসে অস্বস্তি দেখা দেয়। জানা যায়, ওবামা ক্রমশ নিশ্চিত হতে থাকেন যে, হেগেল মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালনের মতো সামর্থ্যবান নন। এ লড়াই কয়েক বছর ধরে চলতে পারে বলে মনে করা হয়।
×