ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

পানির দামে কাঁচা মরিচ, বাম্পার ফলনেও লোকসানে কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২০ জুন ২০২৫

পানির দামে কাঁচা মরিচ, বাম্পার ফলনেও লোকসানে কৃষক

দৈনিক জনকণ্ঠ

 নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চলের পাইকারি  হাট বাজারে কাঁচা মরিচের দামে হঠাৎ করে ধস নেমেছে। শুক্রবার (২০ জুন) নীলফামারীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারে খবর নিয়ে জানা যায়, মাঝারি মানের প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১০ টাকায়। চাষিরা বলছেন, খেত থেকে হাটে নেওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজি কাঁচামরিচে গড়ে তিন টাকা খরচ হয়। 

এ ছাড়া রয়েছে খাজনা ও অন্যান্য খরচ, এ বাবদ খরচ হয় আরও এক টাকা। ফলে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করে চাষিরা পাচ্ছেন ছয় টাকা, যা এক কাপ লাল চায়ের দামের সমান। এতে মরিচ চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। অথচ এক মাস আগেও এই দাম ছিল ৮০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা।

আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় হঠাৎ করে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কাঁচা মরিচের দামে এই ধস নেমেছে।নীলফামারী বড়বাজারের আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, হাটে পাইকারিতে ভালো মানের প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল সর্বোচ্চ ২০ টাকা।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার  বিভিন্ন হাট বাজারে ভালো মানের প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০ টাকা, মাঝারি মানের কাঁচা মরিচ ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। 

শুক্রবার আমদানি আরও বেড়ে যাওয়ায় দাম নিচে নেমে গেছে। পাইকারি বাজারে বস্তায় বস্তায় কাঁচামরিচ নিয়ে বসে আছেন চাষিরা। কিন্তু ক্রেতার দেখা মিলছে না। ক্রেতা মিললেও দাম বলছে পানির মতো। ফলে প্রতি মণ (৪০ কেজি) কাঁচা মরিচ ৩০৯ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন চাষিরা।
 

নীলফামারীর সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট সৈয়দপুরে। সেখানে এ জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা কাঁচামরিচ বিক্রি করতে আসেন। এবার এ জেলায় কাঁচামরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে ভালো দাম না পেয়ে হতাশ মরিচ চাষিরা।  

উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের মরিচ চাষি জোবায়ের রহমান জানান, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের বর্তমান পাইকারি বাজার দর ছয় থেকে সাত টাকা। 

রহিম মিয়া নামের এক মরিচ চাষির হিসাবটা অন্য রকম। তিনি বললেন  ক্ষেত থেকে মরিচ ওঠাতে প্রতি কেজিতে শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিতে হয় সাত টাকা থেকে আট টাকা। আর সেই মরিচ বাজারজাত করতে কেজি প্রতি গুণতে হয় আরও দুই টাকা থেকে তিন টাকা। 

এ হিসাবে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের খরচ ওঠাত তো দূরের কথা, দুই থেকে তিন টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। তিনি জানান তার জমিতে এখনও ৫ মণ মরিচ আছে। যা উত্তোলন করে বিক্রি করলে পকেট থেকে টাকা দিতে হবে। তাই গ্রামের মানুষজনকে বলেছি কারো মরিচ লাগলে এমনি তুলে নিয়ে যাবেন, কোনো টাকা দিতে হবে না।

এদিকে কাঁচা মরিচের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ বাড়ায় ও চাহিদা কমায় মরিচের দাম কমেছে। দেখা যায় পাইকারা কাঁচা মরিচ ক্রয় করে বস্তায় ভরছে ও ট্রাকে তুলছে। জানা গেল এ মরিচ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা ও কুমিল্লায়। আরেকজন জানালেন তিনি নওগাঁয় নিয়ে যাচ্ছে এ মরিচ।

মরিচ চাষি বেলাল মিয়া বলেন, স্থানীয় বাজারে চাহিদার চেয়ে আমদানি বেশি। তাই মরিচের এ অবস্থা। তবে উঁচু জমির মরিচ চাষিরা এখন দাম না পেলেও পরে ভালো দাম পাবে। আর আমাদের নীচু জমি থেকে মরিচ তোলা ও বাজারে নিয়ে আসার খরচ এবং খাজনা দিয়ে কিছুই থাকছে না।

অন্যদিকে দাম কমায় স্বস্তিতে আছেন কাঁচা মরিচ ক্রেতারা। সৈয়দপুরের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ছয়/সাত টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। তুলনামূলকভাবে সবজির দামও কমেছে।  তবে অনেকে বলছেন, সৈয়দপুরের কৃষকরা প্রথম দিকে ওঠা কাঁচা মরিচ যে দামে বিক্রি করেছেন, তাতে উৎপাদন খরচ আগেই উঠে গেছে।  

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ জানান, প্রতি বিঘা জমিতে মরিচ চাষে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ মণ মরিচ হয়। কিন্তু এবার বাজার দর কম। তাই বা¤পার ফলন হলেও কৃষকরা আশানুরূপ মূল্য পাচ্ছেন না। 

হ্যাপী

×