ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ফটিকছড়ির মহাসড়কে ‘মহাযন্ত্রণা’ বিদ্যুৎখেকো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা!

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১৩:৪৩, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪৬, ১৫ জুন ২০২৫

ফটিকছড়ির মহাসড়কে ‘মহাযন্ত্রণা’ বিদ্যুৎখেকো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা!

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পথে-প্রান্তরে, সড়কে-মহাসড়কে, অলিতে-গলিতে, গ্রামে-গঞ্জে'র 'মহাযন্ত্রণা' অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব যান চলাচল, কেনাবেচা, আমদানি-রপ্তানিতে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এসবের তোয়াক্কা করছেনা কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অদক্ষ, অপ্রাপ্তবয়ষ্ক চালকদের কারণে ঘটছে প্রতিদিন ছোটবড় দুর্ঘটনা। এছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার নানা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিলেও ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা নষ্ট করছে দৈনিক চারটি পরিবারের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ। স্থানীয়রা এই রিকশা বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা পাত্তা না দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। চালকরা রিকশা নয়, যেন কার-মাইক্রো চালাচ্ছেন। ইচ্ছেমতো যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে যেমন যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট বাড়ছে, তেমনি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে করে অঙ্গহানির ঘটনাও ঘটছে। উপজেলাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিদ্যুৎখেকো অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

নাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী শম্ভু কুমার শীল বলেন, ‘এসব যান অবৈধ ঘোষণা করলেও পুলিশ এখনও এসব বন্ধে কোনো অভিযান চালায়নি। কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে সেটা বেশি দূর এগোতে পারছে না বলে শুনেছি। উপজেলাবাসী এই অটোরিকশা নিয়ে মারাত্মক অসুবিধায় আছে।’

মো. রহিম নামে এক অটোরিকশা চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি অটোরিকশায় চার্জ নিতে দৈনিক ৮ ঘন্টা সময় দিতে হয়। তাই সে সারারাত গাড়িটি চার্জ দিয়ে দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘন্টা চালাতে পারে। এসব গাড়িতে ব্যবহার হয় ১২ ভোল্টেজের চারটি ব্যাটারি। হিসাব করে দেখা যায় একটি অটোরিকশা যত ইউনিট বিদ্যুৎ অপচয় করে তা দিয়ে চারটি পরিবার ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ফটিকছড়ি জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, ফটিকছড়িতে মোট বিদ্যুতের এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ প্রদানের শিডিউল থাকলেও বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে তা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। ব্যাটারিচালিত যানবাহন বেশকিছু বিদ্যুৎ অপচয় করছে। এসব যানে ৬ ঘন্টা চার্জ দিলে গড়ে তিন ইউনিট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ফলে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ হলে লোডশেডিং আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। 

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা। উচ্চগতিসম্পন্ন এসব মোটরচালিত রিকশায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া এসব রিকশার ব্যাটারি অবৈধ পন্থায় চার্জ করা হয়। তাতে বিদ্যুতের অপচয় বাড়ছে। যে কারণে অফ-পিক আওয়ারেও লো-ভল্টেজ, লোডশেডিং তথা বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে । 

এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় বিবিরহাট ১নং রোড, রাজঘাট, দরগাহ রোড, ঈদগাঁ রোড ও নাজিরহাট পৌরসভার চৌধুরী ছকিনা কমিউনিটি সেন্টার, পেট্রোল পাম্প, মেডিকেল রাস্তার মাথাসহ বেশ কিছু এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। অনেক অটোরিকশা মালিক মাসিক চুক্তিতে এইসব গ্যারেজে রেখে চার্জ দেয়া হয় বলে জানা যায়।

বিবিরহাট গ্যারেজ মালিক মো. শহিদুল জানায়, তার গ্যারেজে মাসিক চুক্তিতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ভ্যান গাড়ি রাখা হয়। যাদের বাড়িতে জায়গা নেই বা নিরাপত্তার অভাব রয়েছে তারা এখানে রাখছেন বলে জানায়। অটোরিকশা গুলোর ব্যাটারিতে তার গ্যারেজ থেকে চার্জে দেয় চালকরা।

উপজেলায় অটোরিকশা চালকের প্রায় ৯০ শতাংশ বিভিন্ন জেলার লোকজন এসে এখানে চালাচ্ছে। ফলে কিছু কিছু চালক ছিনতাই, মাদক ব্যবসার কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বিবিরহাট বাজারের এক ব্যবসায়ীকে ছিনতাই করতে গিয়ে কুপিয়ে আহত করার ঘটনাও ঘটিয়েছে অটোরিকশা চালক। সচেতন মহল বলছে, অটোরিকশা বন্ধ হলে বিদ্যুৎ ঘাটতির পাশাপাশি ছিনতাই, মাদক ব্যবসাও কমে আসবে।

এদিকে অটোরিকশা চালকরা অভিযোগ করে বলেন,  'মাসোহারার বিনিময়ে তারা সড়কে গাড়ি চালান।' অটো রিক্সা চালক মুহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, 'আমাদের অলিখিত একটি অটোরিকশা সমিতি আছে। সেটি নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি-জামাতের কয়েক নেতা। তাদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে আমরা সড়কে অটোরিকশা চালাই। যে কোনো অসুবিধা তারা দেখেন।'

চালক রাসেল মিয়া বলেন, "থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ও অটোরিকশা মালিক ম্যানেজ করেন। মাসিক টাকা দিলেই সব শেষ।” 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, 'সরকারি নিষেধাজ্ঞার পাত্তা না দিয়ে বিভিন্ন সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশা। এসব যান কিছু ব্যক্তির দাপটে দেদার চলছে।” তিনি আরও বলেন, "আদালতের ঘোষণার প্রেক্ষিতে এসব যন্ত্রদানবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নোভা

×