ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

হালদা থেকে বছরে আয় হয় ৮২১ কোটি টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ১৫ জুন ২০২৫

হালদা থেকে বছরে আয় হয় ৮২১ কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত

হালদা নদী দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক কার্প প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। এই নদীর মা মাছের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ডিম থেকে যে রেণু বা পোনা তৈরি হয়, তার আর্থিক মূল্য দেশের মৎস্য অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় দেখা গেছে, হালদার এক মা মাছ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার সমমূল্যের মাছের পোনা উৎপাদন সম্ভব।

প্রাকৃতিক প্রজননের অনন্য ক্ষেত্র হালদা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এ নদী দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র নদী, যেখানে প্রাকৃতিকভাবে মা মাছ ডিম ছাড়ে। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ কার্প জাতীয় মাছগুলো ডিম ছাড়ে। নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলপ্রবাহ এবং তলদেশের মাটি ডিম ফোটানোর জন্য উপযুক্ত বলে এখানে ডিমের মানও উন্নত।

১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত হালদা থেকে গড়ে প্রতিবছর ৩০ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার রেণু পাওয়া গেছে। এর পরিমাণ প্রায় ৬০৪ দশমিক ৬৪ কেজি। প্রতি কেজি রেণুর দাম ৩৫ হাজার টাকা ধরলে বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার ৪০০ টাকা। ৪০ শতাংশ মৃত্যু হার ধরে হিসাব করলে দ্বিতীয় ধাপে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। তৃতীয় ধাপে আবার ৪০ শতাংশ মৃত্যু হার ধরলে পোনার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৩৫ হাজার ২০০। প্রতি কেজি পোনার দাম দুই লাখ টাকা ধরলে তৃতীয় ধাপে আয় হয় ২১ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪০০ টাকা। চতুর্থ ধাপে ৪০ শতাংশ মৃত্যুহার ধরলে পোনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ৫৩ লাখ ১ হাজার। হালদার পোনা চাষ করলে বছরে গড়ে এক কেজি হয়। এই হিসাবে মাছের পরিমাণ ৬ কোটি ৫৩ লাখ ১ হাজার কেজি। প্রতি কেজির দাম সর্বনিম্ন ১২০ টাকা ধরে গবেষকরা বলছেন এই ধাপে আয় দাঁড়ায় ৭৮৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে হালদা থেকে বছরে ৮২১ কোটি ১০ লাখ টাকা টার্নওভার হয়। এটি দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ৬ শতাংশ।

হালদা নদী খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বদনাতলি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এটি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায় ৯৮ কিলোমিটার অতিক্রম করে চট্টগ্রাম শহরের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হয়েছে। হালদার মূল স্রোতের সঙ্গে বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া মিলিত হয়ে এটিকে সমৃদ্ধ করেছে। উৎসমুখের পর থেকে ২০টি বড় খাল বা ছড়া ও প্রায় ৩৪টি ছোট পাহাড়ি ছড়া মিশেছে। হালদাকে কেন্দ্র করে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। দু’পাড়ের প্রায় ১ হাজার ৫৪৪ জন জেলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হালদার ওপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করেন। এ ছাড়াও রয়েছেন ১ হাজার ৮৯ জনের মতো ডিম সংগ্রহকারী, যাঁদের প্রায় ৫২৪টি নৌকা প্রতি বছর ডিম সংগ্রহের কাজে লাগে। প্রতিটি নৌকার জন্য খরচ হয় বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে সারাদেশে বিক্রি করেন জেলেরা। হালদার মাছ খুব দ্রুত বড় হয়। এটি সুস্বাদু। তাই সারাদেশে এ জাতীয় মাছের কদর বেশি। নদী থেকে সংগ্রহ করা ডিম থেকে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করে দোতলা বাড়ি করেছেন আবুল কাশেম। বছর দশেক আগেও তাঁর ছিল কুঁড়েঘর। এখন তার নিজস্ব নৌকা আছে। এ ছাড়া বদলে গেছে পরিমল, জাহাঙ্গীরসহ অনেকের জীবন।

আসিফ

×