
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
জামালপুর সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামে ঘটেছে এক চাঞ্চল্যকর সামাজিক অনিয়মের ঘটনা। পারিবারিক বিরোধের জেরে সাতটি পরিবারকে একঘরে ঘোষণা করে সমাজচ্যুত করেছে স্থানীয় একদল মাতব্বর। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের ফলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে জামালপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এর আগে ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে।
পুলিশ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামেরই এক ব্যক্তি—মুনসুর—এর পরিবারের সঙ্গে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধ ছিল। সেই জের ধরে এক বসা (স্থানীয় সালিশ) ডেকে মাতব্বররা মুনসুরের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। মুনসুর তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তাকে এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজনসহ মোট সাতটি পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করা হয়।
ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিতে মাতব্বররা ঢাকঢোল পিটিয়ে এবং মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামের মানুষদের জানিয়ে দেয়, এই পরিবারগুলোর সঙ্গে কেউ মেলামেশা করলে তাকেও একঘরে করে দেওয়া হবে। এমনকি ভয় দেখানো হয়—তাদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হতে পারে।
এই হুমকি ও সমাজচ্যুতির সিদ্ধান্তের ফলে ওই সাতটি পরিবার ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রামের বাজারে যাওয়া, শিশুরা স্কুলে যাওয়া এমনকি একটি নির্ধারিত বিয়েও স্থগিত হয়ে গেছে। এলাকাজুড়ে একধরনের নীরব ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী ইসমাইল মাওলানা জানান, "আমরা কোনো অপরাধ করিনি। কেবল একটি পরিবারিক বিষয়ে আমাদের মতামত আলাদা ছিল। সেই কারণেই আমাদের সাতটি পরিবারকে একঘরে করা হলো। আমাদের বাড়ির ছোটরা আতঙ্কে কাঁদছে, আমরা কেউ বাড়ি ছেড়ে বের হতেও পারছি না।"
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পর ১৪ জুন জামালপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে যায় এবং তদন্ত শুরু করে।
এদিকে এই ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিন্দা প্রকাশ করেছে। জামালপুর মানবাধিকার পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, "এটি একটি সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘন। আইনের বাইরে গিয়ে কেউ কাউকে শাস্তি দিতে পারে না। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।"
এ প্রসঙ্গে জামালপুর সদর থানার ওসি ( তদন্ত) সেলিন আশিকীন বলেন, "আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং তা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
নোভা