ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ছুটির ফাঁদে আমচাষির মাথায় হাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ৯ জুন ২০২৫

ছুটির ফাঁদে আমচাষির মাথায় হাত

দৈনিক জনকণ্ঠ

 ঈদের টানা ছুটির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আমচাষি, বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। ফলন ভালো হলেও ছুটির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো যাচ্ছে না আম। বন্ধ কুরিয়ার সার্ভিসও। তাই স্থানীয় বাজারেও পড়ে গেছে দাম। ছুটির কয়েকদিন আম না পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম অন্য এলাকার তুলনায় কিছুটা দেরিতে আসছে। সাধারণত মে মাসের শেষ সপ্তাহে গোপালভোগ জাতের আম দিয়ে শুরু হয় বেচাকেনা। এর পর জুনের প্রথম সপ্তাহে ক্ষীরসাপাত, দ্বিতীয় সপ্তাহে ল্যাংড়া আম আসে বাজারে।

তবে এবার ভরা মৌসুমে ঈদের দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, টানা ছুটির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় আম পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। এতে স্থানীয় বাজারেও কমছে দাম। আমের বাজার কোরবানির ঈদের ব্যস্ততা আর দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে দরপতন ঘটতে শুরু করেছে।

প্রতি মণ আমের দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কমেছে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, আম পরিবহণ ও বাজারজাতের অন্যতম ব্যবস্থা কুরিয়ার সার্ভিস। ইদ উপলক্ষ্যে ৫ জুন থেকে ৯ জুন সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ। ৪ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যান আমের বুকিং নেওয়া। এতে থমকে গেছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো আমের বিশাল অনলাইন মার্কেটিং।

আমচাষি ফারুক আহমেদ জানান, ৩০ মে আম নামে বাজারে। গত ১ জুন থেকে কানসাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিতরে আম বাজার জমে ওঠে। শুরুতে বাজারে উঠে গোপালভোগ আম। বাজার দর ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এদিন ক্ষীরশাপাতি আমও আসে বাজারে।

শুরুতেই ক্ষীরশাপাত আম প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছিল ২০০০ টাকার উপরে। দু-দিন পর ৩ জুন বিক্রি হয় ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণ দরে। আর ল্যাংড়া আম বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ। তিনি আরও জানান, কোরবানির ঈদমুখী ব্যস্ততা ও অফিস-আদালতের দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে আমের দাম কমে  ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। 

আমচাষি তারেক রহমান জানান, ক্ষীরশাপাত, গোপালভোগ, বৃন্দাবনি জাতের এখন ভরা মৌসুম। পুরো গাছে পাঁকা আমে পরিপূর্ণ। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে পাড়তে পারছি না। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে। কুরিয়ার চালু না হওয়া পর্যন্ত আম পাড়তে পারব না। আগামীকালকে (১০ জুন) থেকে কুরিয়ার চালু হওয়ার কথা আছে।

কনসাট বাজারের ইজারাদার শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা কম, বেচা- বিক্রি কম হচ্ছে। ঈদের আগে দু-দিন এবং ঈদের পরে তিন দিন এই ৫-৭ দিন পরে আবার বাজার ঠিক হয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ইয়াছিন আলী বলেন, আম পরিপক্ব হলে বেশিদিন গাছেও রাখা যায় না, আবার সংরক্ষণও করা যায় না। এ কারণে ঈদের ছুটিতে কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। এ জন্য ছুটির সময়টায় গাছ থেকে আম না পাড়াই ভালো।

এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির আম বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পৌনে চার লাখ মেট্রিকটন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।
 

হ্যাপী

×