ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বোয়ালমারীতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোরবানির মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলায় ভ্যানচালক নিহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, বোয়ালমারী, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:৪৮, ৯ জুন ২০২৫

বোয়ালমারীতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোরবানির মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলায় ভ্যানচালক নিহত

ছবিঃ সংগৃহীত

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোরবানির মাংসের ভাগ নেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত হয়ে হুমায়ূন কবীর (৪৭) নামে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।

সোমবার (৯ জুন) সকালের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত হুমায়ূন কবীর ওই গ্রামের মৃত মালেক মোল্লার ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বানিয়ারী গ্রামের আধিপত্য নিয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে। এর একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি সদস্য জামাল হোসেন ও নবীর হোসেন চুন্নু। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন লিয়াকত হোসেন। লিয়াকত হোসেন পাশের আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালদী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। অপরদিকে নবীর হোসেন ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বোয়ালমারী পল্লি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি।

সংঘর্ষে নিহত হুমায়ূন কবীর আগে লিয়াকত হোসেনের সমর্থক ছিলেন। তবে গত শনিবার ঈদুল আজহার দিন হুমায়ূন কবীরসহ লিয়াকতের কয়েকজন সমর্থক জামাল হোসেনের বিলি করা কোরবানির মাংস গ্রহণ করেন। এ নিয়ে ঈদের দিন থেকে ওই গ্রামে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

গত রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বানিয়ারী গ্রামের ছাকেনের চায়ের দোকানে লিয়াকত ও তার সমর্থকদের সঙ্গে হুমায়ূন কবীরসহ তার পরিবারের সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে লিয়াকতের সদস্যরা হুমায়ূন কবীরের পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। এ হামলায় মাথায় ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন হুমায়ূন কবীর।

পাশাপাশি আহত হন হুমায়ূন কবীরের বড় ভাই মোস্তফা মোল্লা (৫৬), তার মেয়ে বেনি বেগম (২৪) ও ভাগিনা। এদের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

হুমায়ূন কবীরকে রবিবার সকালে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রবিবার বিকেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সোমবার সকালে তিনি মারা যান।

নিহতের ভাতিজা ছোলনা সালামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মো. ফসিয়ার রহমান মোল্লা বলেন, “লিয়াকত মাস্টারের দল ছেড়ে নবীর হোসেন চুন্নুর দলে যোগ দেওয়ায় মাস্টারের লোকজন আমাদের উপর আক্রমণ করতে চেয়েছিল। ঘটনার দিন আমার দুই চাচাকে একা পেয়ে তারা আক্রমণ করে। এটা গ্রাম্য কোন্দল। দুই গ্রুপেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমর্থক রয়েছে।”

এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য জামাল হোসেনের পক্ষের নবীর হোসেন চুন্নু বলেন, “হুমায়ূন কবীর আগে লিয়াকত হোসেনের দেওয়া কোরবানির গোশত খেত। এবার আমাদের কাছ থেকে কোরবানির গোশত নেওয়ায় লিয়াকতের সমর্থকরা এ হামলা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটায়।”
তিনি আরও বলেন, “হুমায়ূনের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ এলাকায় এনে দাফন করা হবে।”

এ ঘটনার পর লিয়াকত হোসেন পলাতক রয়েছেন। তার মোবাইলে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা বলেন, “গ্রাম্য দলপক্ষ ও প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোরবানির মাংস গ্রহণ করায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাতে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু লুটের ঘটনা ঘটে। তবে একটি বাদে লুট হওয়া বাকি গরু উদ্ধার করা হয়েছে।”

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন, “নিহত ব্যক্তি আগে লিয়াকতের সমর্থক ছিলেন। তবে এ বছর তিনি জামাল হোসেনের পক্ষ থেকে কোরবানির মাংস নেওয়ায় এ হামলা ও নিহতের ঘটনা ঘটে।”

তিনি আরও বলেন, “এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার রাতে কিছু ভাঙচুর হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”

ইমরান

×