ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

পাইকারি মার্কেটে কেনাকাটার ধুম

মো. খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ২২ মার্চ ২০২৪

পাইকারি মার্কেটে কেনাকাটার ধুম

দেওভোগে পাইকারি মার্কেটে ঈদের কেনাকাটার ধুম

দেওভোগ পোশাক প্রস্তুতকারক পাইকারি মার্কেটে ঈদের বেচা-কেনার ধুম পড়েছে। রোজার পনেরো দিন আগ থেকেই এ পোশাক প্রস্তুতকারক পাইকারি মার্কেটে কেনা-বেচা শুরু হয়। যা ২০ রোজা পর্যন্ত ধুম চলে তাদের কেনা-বেচা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাইকারি এ মার্কেট জমজমাট থাকছে।

দেশের ৬৪টি জেলা থেকে পাইকাররা প্রস্তুতকারক এ মার্কেট থেকে এসে লাখ লাখ টাকার হরেক রকমের মেয়েদের থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ও ফোরাকসহ শিশুদের জামাকাপড় কিনে নিয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছেন। দেওভোগ পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের দাবি এ বছর এ পাইকারি মার্কেটে ঈদ উপলক্ষে শতকোটি টাকার জামাকাপড় বিক্রি হবে।
জানা যায়, দেওভোগ এলাকার ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগম সড়ক, আলী আহম্মদ চুনকা সড়ক ও আশপাশের এলাকায় অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, হাকিম মার্কেট, হাকিম প্লাজা, ভূঁইয়া মার্কেট, ভূঁইয়া সুপার মার্কেট, মোল্লা মার্কেট, ভাই ভাই মার্কেট, রহমত উল্লাহ মার্কেট, ফরিদা ম্যানশন ও জামির মার্কেট নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ দেওভোগ পোশাক প্রস্তুতকারক পাইকারি মার্কেট। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, পাকিস্তান আমলে এখানে কাঠের দোতলা একটি মার্কেট ছিল।

তখন ৬-৭টি দোকান ছিল। বর্তমানে এ মার্কেটে ৪শ’ থেকে ৫শ’ দোকান রয়েছে। 
মাওলা ফ্যাশনের মালিক বাবুল দেওয়ান বলেন, তিনি ৪৬ বছর ধরে পাইকারি এ মার্কেট সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছেন। তার মতো ৪শ’ থেকে ৫শ’ ব্যবসায়ী এ মার্কেটে ব্যবসা করে আসছেন। তিনি ৮ রোজা পর্যন্ত ১৫-২০ লাখ টাকার জামাকাপড় বিক্রি করেছেন। সওদা ফ্যাশনের মালিক শাহিন শিকদার। তার ভাই মোজাহিদ শিকদার বলেন, ২০ রোজা পর্যন্ত পাইকারি এ মার্কেটে কেনা-বেচার ধুম থাকে।

এরপর বেচা-বিক্রি কমে যায়। তবে চাঁদরাত পর্যন্ত এখানে বেচা-কেনা হয়। তাদের দাবি তারা ঈদ উপলক্ষে এক কোটি টাকার জামাকাপড় বিক্রি করতে পারবেন। একই দোকানের সেলসম্যান মো. রাব্বি বলেন, এ মার্কেটে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি হয়। তবে ঈদ উপলক্ষে রাত ১১টা পর্যন্ত এ সব দোকানগুলো খোলা রাখা হয়। 
রাজশাহীর বাঘমারা থেকে ঈদের পোশাক কিনতে দেওভোগের পাইকারি এ মার্কেটে এসেছেন পাইকার পল্লব কুমার সাহা। তিনি এখান থেকে ঈদের পোশাক কিনে নিয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছেন। এখান থেকে তিনি ২-৩ লাখ টাকার জামাকাপড় পাইকারি কিনে নিয়ে ঈদ উপলক্ষে বিক্রি করবেন।
দেওভোগ পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেওয়ান জানান, ঈদ উপলক্ষে এ পাইকারি মার্কেটে ২০ রোজা পর্যন্ত আমাদের বেচাকেনা হলেই যথেষ্ট।

চট্টগ্রামে ব্যস্ত খলিফাপট্টি
স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, বিরামহীন মেশিনের শব্দ। সারাদিন এমনকি সারারাতও চলছে সেলাইয়ের মেশিন। নির্ঘুম সময় কাটছে দর্জি ও কারিগরদের। কারণ সামনেই ঈদ। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রস্তুত করতে হবে অনেক পোশাক। ঈদের আগেই এখানে ব্যবসা হয় প্রায় শতকোটি টাকার। 
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা সংলগ্ন ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ৩শ’ কারখানা। মূলত সাত দশক আগে থেকেই এই স্থানটিতে চলে আসছে পোশাক প্রস্তুতের কাজ। দর্জিকে বলা হয় খলিফা। তাই এই জায়গার নামকরণ হয়ে গেছে খলিফাপট্টি। 
দেশের নামি-দামি অনেক শপিং মলে বেশি দামে যে সকল পোশাক বিক্রি হয় সেখানে রয়েছে এই খলিফাপট্টিতে তৈরি হওয়া জামাও।

এখানকার দর্জিরা অত্যন্ত সুনিপুণ কারিগর। অর্ডার ও ডিজাইন অনুযায়ী যে কোনো ধরনের জামা তৈরি করে দিতে তাদের বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে প্রস্তুত হওয়া পোশাক দামে কম, মানে ভালো। সে জন্য সাধারণ মানুষও ছুটে যায় পছন্দের জামা কাপড় কিনতে। 
খলিফাপট্টির ইতিহাস কম করে হলেও ৭০ বছরের। প্রথমে একটি দর্জির দোকান দিয়েই শুরু হয়েছিল। জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টির অল্প কিছু সময় পর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে আইয়ুব আলী নামের এক ব্যক্তি এসে এখানে কাপড় তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। পেশায় তিনি নিজে ছিলেন একজন ফেরিওয়ালা। ফেরি করেই কাপড় বিক্রি করতেন তিনি। 
একাধিক কারিগরের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অনেক দামে এসব পোশাক কিনে আনন্দিত হন রুচিশীল ক্রেতারা। কিন্তু ক’জন জানেন, আমরা এ পোশাক তৈরি করি। পাইকারিতে একেকটি পোশাক বিক্রি হয় ২৫০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। আর মার্কেটে অর্থাৎ মূল ক্রেতাদের কাছে বিক্রি পর্যন্ত গেলে এর দাম আরও বেড়ে যায়। 
খলিফাপট্টির ব্যবসায়ী ও কারিগররা জানান, এ শিল্প তিল তিল করে এত বড় হয়েছে। এটি ব্যক্তি পর্যায়ে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কারিগরদের মেধা ও শ্রমের ফল। সরকারি কিংবা কোনো সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা বা সহযোগিতা নেই। তবে বন্দর নগরীর একটি স্থানের নাম ‘খলিফাপট্টি’ হয়েছে, এটি ভাবতে তাদের ভালো লাগে।

×