ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার থেকে গুলি এসে লাগলো বাংলাদেশের গাড়িতে 

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মিয়ানমার থেকে গুলি এসে লাগলো বাংলাদেশের গাড়িতে 

গুলিতে চলন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে যায়।

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দুদিন গোলাগুলি বন্ধ থাকার পর আজ শনিবার থেকে আবার শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড গোলাগুলির একটি গুলি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে পড়েছে। আর এই গুলিতে উত্তর পাড়া এলাকায় রাস্তায় একটি চলন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে গেছে। তবে এতে কোন হাতাহত হয়নি।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু এলাকার উত্তরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

অটোরিকশাচালক আবু তাহের বলেন, ‘তুমব্রু উত্তরপাড়ায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এসময় হঠাৎ সীমান্তের ওপারে প্রচণ্ড গোলাগুলি আওয়াজ শোনা যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অটোরিকশায় একটি গুলি এসে পড়ে। এতে বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও গুলি লেগে অটোরিকশার সামনের বড় গ্লাসটি ভেঙে গেছে।’

ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আলম জানান, বিকেল থেকে আবারও মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি বিকট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (আইসি) মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ‘বিকেলে তুমব্রু এলাকায় গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। তবে অটোরিকশা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না নিশ্চিত নই। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল থেকে ফের ঘুমধুম তুমব্রু এলাকায় থেমেথেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। পরে দুপুরে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়াগুলো এসে পড়ে উত্তর পাড়ায় রাস্তায় চলন্ত অবস্থায় একটি সিএনজি গাড়িতে। সীমান্তের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির সদস্যরা তাদের টহল জোরদার করার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে যাতে কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া, বিজিবির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানায়, গত শুক্রবার ভোর থেকে সারাদিন মিয়ানমার থেকে তাদের সীমান্ত এলাকায় কোন ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা না গেলেও ফের শনিবার সকাল থেকে বিস্ফোরণের শব্দের কারণে এলাকাবাসীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুপুরে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি এসে পরে একটি চলন্ত সিএনজি গাড়িতে। জনপ্রতিনিধিদের মতে মিয়ানমারের জন্তা সরকারের সেনা বাহিনীর সাঙ্গে সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যকার লড়াই সাময়িক ভাবে থামলেও আবার লড়াই শুরু হাওয়ায় সীমান্তবাসীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

এদিকে, সীমান্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান তাকায় অভিভাবকরা আতঙ্ক উৎকণ্ঠায় রয়েছে বলে জানা গেছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন থেকে সীমান্ত বসবাসকারী নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে তাৎক্ষণিক ঝুঁকিতে থাকা সীমান্তবাসীদের সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসন।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে ওপার থেকে আবার বিস্ফোরণের শব্দের খবর শুনেছি। সীমান্তের পরিস্থিতি অবনতি হলে ঝুকিতে থাকা জনসাধারণকে সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেওয়ার হবে। তবে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি করছে।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মিয়ানমার সেনা বাহিনী (বিজিপি) এবং সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যকার চলমান সংঘর্ষের সময় গত ২৭ জানুয়ারি মিয়ানমার থেকে ফায়ারকৃত ১৩টি মর্টার শেল এবং ১ রাউন্ড বুলেট কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ে। পরে শনিবার আবার মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি এসে পড়ে উত্তর পাড়ায় রাস্তায় চলন্ত সিএনজি গাড়িতে। এ ঘটনায়  কোন হতাহত হয়নি। সূত্রমতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি জান্তা সরকারের শাসনে থাকতে চায় না। তারা রাখাইন রাজ্যকে স্বীকার করে না। বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই রাজ্যকে আরাকান বলে মনে করে। তাদের মতে, আরাকান একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। বার্মার রাজা আরাকান দখল করে রাজ্যটিকে দেশটির অন্তর্ভুক্ত করে। আরাকানের স্বাধীন সত্ত্বা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সশস্ত্র সংগ্রাম করে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। সম্প্রতি তারা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পালতোয়া, যেটি মিয়ানমারের চিন রাজ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে পালতোয়ার দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার।

 

এম হাসান

×