ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বাড়ির ছাদে রঙিন মাছের চাষ

শখের বশে শুরু জীবনে এসেছে সাফল্য

এসএম জসিম উদ্দিন

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ১০ অক্টোবর ২০২৩

শখের বশে শুরু জীবনে এসেছে সাফল্য

বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি রঙের মাছ চাষ করে প্রতিমাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন গোলাম মর্তুজা 

এতদিন বাড়ির ছাদে কৃষি বাগানের গল্প অনেক শোনা গেলেও এবার বিকল্প পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে মাছ চাষ করে তাক লাগিয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণ উদ্যোক্তা গোলাম মর্তুজা মনা। ছাদের ওপর বিশেষ উপায়ে অ্যাকুরিয়ামে বাহারি রং ও জাতের মাছ ও পোনা চাষ করছেন তিনি। বাণিজ্যিকভাবে মাছ ও পোনা উৎপাদন করে সরবরাহ করছেন জেলার বিভিন্ন অ্যাকুরিয়ামের দোকানে। এতে নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন এ যুবক। তিনি শখের বসে রঙিন মাছ চাষ শুরু করলেও পরে পেয়েছেন ব্যাপক সফলতা। তার সফলতায় বিদেশী জাতের এ মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে।
ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের সরকারপাড়ার বাসিন্দা গোলাম মর্তুজা মনা। পেশায় তিনি একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। আড়াই বছর আগে শখের বসে শুরু করেন রঙিন মাছ চাষ। বাজারে চাহিদা থাকায় বছর ঘুরতে না ঘুরতে সফলতার মুখ দেখেন তিনি। স্বল্প সময়ে তার এমন সফলতা দেখে রঙিন মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে। 
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ছাদে বিশেষ পদ্ধতিতে চৌবাচ্চায় রাখা হয়েছে পানি। সে স্বচ্ছ পানিতে ভাসছে নানা রঙের মাছ। শখের বসে চাষ করা মুর্তজার এ ছাদে চাষ হচ্ছে গাপ্পি, গোল্ড ফিশ, কমেট, কই কার্ভ, ওরেন্টা গোল্ড, সিল্কি কই, মলি, গাপটিসহ ২০ প্রজাতির রঙিন মাছ রয়েছে। ইট, পাথর, সিমেন্টে গড়া ভীষণ ব্যস্ত জীবন ব্যবস্থায় এক পলকের জন্য চোখ আটকে যায় বাহারি রঙবেরঙের অ্যাকুরিয়ামের ওপর।

ক্রমশ এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। মনের তৃপ্তির পাশাপাশি শোভাবর্ধক হিসেবে কাজ ঘরের মধ্যে কাচের শিট দিয়ে ঘেরা এক কৃত্রিম জলাধার। বাড়ির ছাদকে কাজে লাগানোর ভাবনা থেকে রঙিন মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন এই চিকিৎসক। এখন এলাকার মানুষ ছাড়াও মৎস্য কর্মকর্তারা তার এই মাছ দেখতে আসছেন। অনেকে খামার দেখতে এসে মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি মাসে গড়ে মাত্র পাঁচশ’ টাকার খাবার খরচ হয় তার। খামার থেকে পাইকারি দরে মাছ বিক্রির পাশাপাশি বিক্রি করা হয় খুচরা দরে। মাছ বিক্রি করেই প্রতি মাসে আয় করছেন ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।
রঙিন মাছ চাষে সফলতা অর্জন করায় প্রতিনিয়ত তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। রঙবেরঙের মাছ আর স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভের কথা শুনে রঙিন মাছ চাষে আগ্রহ জানিয়েছেন অনেকে।
রঙিন মাছ দেখতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, মনা ভাই ছাদে মাছ চাষ করে শুনেছিলাম। আজকে নিজের চোখে দেখলাম। এত অল্প পরিসরে আয় করা সম্ভব জানা ছিল না। উনার কাছে আমিও এই মাছ চাষ সম্পর্কে জেনে  নেব।
মাছ কিনতে আসা শিরিন আক্তার বলেন, আমার বাসায় অ্যাকুরিয়াম আছে। আমি মনা ভাইয়ের এখান থেকে মাছ নিয়ে যাই। রঙিন মাছ ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
সফল উদ্যোক্তা গোলাম মর্তুজা মনা বলেন, বাড়ির ছাদকে কাজে লাগানোর দৃঢ় প্রত্যয়ে শখের বসে রঙিন মাছ চাষ শুরু করি । অনেক অল্প সময়ের মধ্যে সফলতা পেয়েছি। মৎস্য অধিদপ্তর ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আরও বেশি পেলে মাছ চাষের পরিধি বাড়াতে চাই। সেই সঙ্গে কেউ যদি আগ্রহী হয় আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করব।
 জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য মতে জেলায় বিদেশী জাতের রঙিন মাছ চাষ করেন ২০ জন উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে এ মাছ চাষে সফলও হয়েছেন অনেকে। আর ক্রমশ বাড়ছে এ মাছ চাষের প্রবণতা। রঙিন মাছ চাষে সফলতা অর্জন করায় প্রতিনিয়ত তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। রঙবেরঙের মাছ আর স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভের কথা শোনে রঙিন মাছ চাষে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন অনেকে। 
 জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা খালিদুজ্জামান বলেন, জেলায় আগের চেয়ে বেড়েছে বিদেশী প্রজাতির রঙিন মাছ চাষ। উদ্যোক্তা গোলাম মর্তুজার পাশাপাশি নতুন কেউ রঙিন মাছ চাষ আগ্রহী হলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

×