
পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ সংসদীয় আসন
পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ সংসদীয় আসন। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এ আসনটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের দখলে থেকেছে। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে এই আসনটি টানা তিন দফায় আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে পর পর দুবার এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। তবে ২০১৮ সালে প্রার্থী বদল করে আওয়ামী লীগ। সেবারও জয় পায় দলটি। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্তত ডজনখানেক নেতা মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে কেউ রয়েছেন নবীন আবার কেউ প্রবীণ।
সম্ভাব্য এসব প্রার্থী এখন সুযোগ পেলেই এলাকার মানুষের কাছে ছুটে আসছেন। এলাকার রাস্তাঘাট এবং বিভিন্ন বাজারসহ মোড়গুলোতে ছেয়ে দেওয়া হয়েছে নেতাদের শুভেচ্ছা ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে। ফলে বড় দুই দলের নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বে দিশেহারা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের দুইবারের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে বর্তমান এমপি ডা. মুনসুর রহমানের এবং বিএনপির দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফার সঙ্গে বিএনপির প্রবীণ নেতা অধ্যাপক নজরুল ইসলামের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে।
এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমানের আক্ষেপ, তিনি ২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন। তবে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে নানাভাবে অপতৎপরতায় নেমেছেন সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। এমপি মনসুরের অভিযোগ, এলাকায় নানা রাজনৈতিক ঝামেলা জিইয়ে রেখেছেন দারা। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, তিনি এমপি হয়ে কোনো কাজ করতে পারেননি। তিনি নিজের ব্যর্থতা অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন।
এবার বর্তমান এমপি ডা. মুনসুর ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারাও মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা দুজন ছাড়াও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ।
প্রফেসর ডা. মো. মনসুর রহমান এমপি বলেন, সংসদীয় এলাকার দুই উপজেলার মানুষ বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে সুখে-শান্তিতে আছেন। এ আসনে রাজনৈতিক কোনো কলহ-বিবাদ নেই বললেই চলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদে মডেল মসজিদ নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ, রাস্তাঘাটসহ এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে আগামীতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে আমি শতভাগ আশাবাদী। এ ছাড়া এই আসনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীকে আসনটি উপহার দিতে সক্ষম হব।
এদিকে সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, নির্বাচনের সময় এলে অনেকেই পরিচিত হওয়ার জন্য মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়ে থাকে। যাদের দলে অবস্থান নাই, তারাই বিভেদ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, আমি সব সময় মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করেছি। সাধারণ মানুষ এবং দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আমার প্রাণশক্তি। তাদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্যায়নই বড় কথা। ফলে শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, আমি কাজ করে যাচ্ছি দলের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য। এটি পুঠিয়া-দুর্গাপুরের মানুষ জানে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী আহসানুল হক মাসুদ বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করে আসছি। এখন পুঠিয়া-দুর্গাপুরের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষও আমার পাশে আছে। এই অবস্থায় দল আমাকে মনোয়ন দিলে আমি নির্বাচনে জয়ী হব বলে বিশ্বাস করি।
এদিকে এই আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন অন্তত হাফ ডজন বিএনপি নেতা। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত না হলেও হাইকমান্ডের নির্দেশে ভোটের মাঠে নেমেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকেই। বিশেষ করে নিজের পক্ষে সমর্থন পেতে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে। তবে এবার ক্লিন ইমেজের নেতা চান বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এলাকা ছাড়েন তিনি। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নাদিমের স্থলে মনোনয়ন দেওয়া হয় পুঠিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলাম ম-লকে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে নজরুল ইসলাম পরাজিত হন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নাদিম মোস্তফা ও নজরুল ইসলাম ম-ল দলের মনোনয়ন চাইবেন।
এ ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি গোলাম সাকলাইন, বিএনপি নেত্রী মাহবুবা হাবিবা, খায়রুল হক শিমুল ও দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহেদ মোল্লার ছেলে সিরাজুল কবির সনু।
সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা বলেন, আমি পুঠিয়া-দুর্গাপুরবাসীর জন্য যা করেছি, তা আগামী ১০০ বছরেও অন্য কোনো এমপি করতে পারবেন না। কারণ আমি রাজনীতি করেছি সাধারণ মানুষকে নিয়ে। সাধারণ মানুষই হচ্ছে আমার শক্তি। তাদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্যায়ন করেছি সব সময়ের জন্য। আগামীতেও তাদের জন্যই রাজনীতি করতে চাই। এই অবস্থায় দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে এবং নির্বাচিত হয়ে পুঠিয়া-দুর্গাপুরের অসমাপ্ত কাজগুলো করতে চাই।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সে সময় দলের হাইকমান্ড পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার আশ^াস দিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে বলেন। তখন থেকে আমি পুঠিয়া-দুর্গাপুরের রাজনীতির মাঠে রয়েছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের এক জায়গায় করার চেষ্টা করেছি। এতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি বলে জানান তিনি।
গোলাম সাকলায়েন বলেন, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক। ছাত্র অবস্থায় থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং কৃষক। তাই সাধারণ মানুষ নিয়েই আমার পথচলা। আমি দেশের জন্য, সমাজের জন্য রাজনীতি করি। দলের নেতাকর্মীরাও আমাকে কাছে টেনে নেন খুব সহজেই। এ কারণে তাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে ভালো করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা।
নজরুল ইসলাম ম-ল বলেন, বিগত ২০০৮ সালে যখন সবাই পলাতক ছিল, তখন আমি নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নির্বাচন করেছি। তবে সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছিলাম। সেই থেকে জনগণের সঙ্গেই আছি। এবারও দল আমার প্রতি আস্থা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।
এ আসনে আগামী নির্বাচনে দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সাবেক এমপি অধ্যাপক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, মানুষ জাতীয় পার্টিকে ভুলে যায়নি। তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছে। তাই আগামী নির্বাচনে লাঙল প্রতীক নিয়ে ভোট করতে চাই।