ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জিআই পণ্য নিয়ে হতাশা

আম্রপালির সঙ্গে টিকতে পারছে না ফজলি

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:০৮, ১৪ জুলাই ২০২৩

আম্রপালির সঙ্গে টিকতে  পারছে না ফজলি

.

গতবছর আন্দোলন করে ফজলি আমের ভৌগোলিক নির্দেশক-জিআই সত্ত্বে রাজশাহীর সঙ্গে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ। রাজশাহীকে এককভাবে ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতি দেওয়ার পরেই আন্দোলনে নামেন তারা। অবশেষে রাজশাহীর সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে যুক্ত করেরাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমহিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেই জিআই পণ্য ফজলি আম নিয়েই এবার বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

চাষিরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে ফজলি আমের দরপতনে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষিদের। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে ফজলি আম। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এখনো চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের সার্বিক উৎপাদনের ১৫ শতাংশই ফজলি জাতের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ম্রপালি আমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফজলি আমের দাম কমেছে। ফলে ফজলি আমের চাষাবাদ করা বাগানিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। মিষ্টতা অন্য গুণাবলি থাকায় ম্রপালির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। একই সময়ে বাজারে পাল্লা দিয়ে কমছে ফজলি আমের চাহিদা।

দেশের বৃহত্তম আম বাজার কানসাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে গুটি জাতসহ বিক্রি হচ্ছে রকমের আম। রকমভেদে বাজারে প্রতিমণ আম বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে। কানসাট আম বাজারে সব ধরনের গুটি জাতের আম রকমভেদে এক হাজার টাকা থেকে পনেরশ টাকা, লক্ষণভোগ আম আটশ থেকে পনেরশ টাকা, বারি আম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত।

আম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ফজলির থেকে ¤্র্রপালির দামই বেশি। বাজারে প্রতিমণ ফজলি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা থেকে ১৬০০ টাকা। অন্যদিকে ম্রপালি বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা থেকে সাড়ে হাজার টাকা।

শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুরের বাগানি আব্দুর রাজ্জাক কানসাটে বিক্রির জন্য মণ ফজলি আম এনেছেন। বাজারে ফজলি আমের চাহিদা কমে যাওয়ায় দীর্ঘ সময়ও বিক্রি হচ্ছে না। তিনি বলেন, মানুষ ফজলি আমের চেয়ে ম্রপালি খেতে বেশি পছন্দ করছেন। ফলে ম্রপালির চাহিদা কমে যাওয়ায় ফজলি আমের দাম কমে গেছে।

কানসাট-শ্যামপুর এলাকার আশরাফ নামে এক আম ব্যবসায়ী জানান, ফজলি ম্রপালি একসঙ্গে বাজারে নামায় দাম কমেছে। দিন দিন ফজলি আমের চাহিদা কমতে থাকায় লোকসানে চাষিরা গাছ কেটে ফেলছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিকের দাবি, গাছে এখনো ৮০ শতাংশ ফজলি আম ঝুলছে। তিনি বলেন, ফজলি আমের চাহিদা কমে যাওয়ায় লোকসান গুণছেন দীর্ঘদিন থেকে চাষি বাগান মালিকরা। যতদিন না ফজলি আমের প্রসেসিং করে বাই প্রোডাক্ট হবে (আচার, আমসত্ত্ব জাতীয় খাবার) ততদিন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন আম চাষাবাদ হচ্ছে। এখনো চাঁপাইনবাবগঞ্জের উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি দামে বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমের হাট থাকায় সেসব হাটে ব্যাপারীদের আনাগোনা বাড়ছে। একইসঙ্গে কানসাট আম বাজারে কমছে। ফলে ফজলি আমের চাহিদা কমেছে, চাষিরাও কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, ম্রপালি আমের গুণগত মান এবং মিষ্টতার কারণে এর চাহিদা প্রচুর।

বাগান থেকেই আম বিক্রি করা যাচ্ছে। ঘন আম বাগানগুলোতে ম্রপালি আমের চাষ বেড়েছে। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে ফজলি আমের চাষাবাদ হচ্ছে। এতে গাছ রয়েছে লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫টি। অন্যদিকে জেলায় হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে লাখ ৪৬ হাজার ১০৫টি গাছে ম্রপালি চাষাবাদ হচ্ছে।

×