ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মামলার বাদীকে হুমকি দিচ্ছে আসামি পক্ষ

জামালপুরে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও স্বামীকে হত্যা মামলা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২১ নভেম্বর ২০১৯

জামালপুরে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও স্বামীকে হত্যা মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে স্বামীকেও হত্যার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি পক্ষের লোকজনরা মামলার বাদী ওই গৃহবধূ ও তার শ^শুরবাড়ির স্বজনদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলাটির তিনজন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার মো: শাওনকে আদালতে সোপর্দ করে তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত ২৬ নবেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য করেছে। পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ গত সোমবার রাত থেকে জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, শ্রীপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কাঠমিস্ত্রি খলিলুর রহমান ও তার বাবা শুক্রবার রাতে বাড়িতে ছিলেন না। স্বামী ও শ্বশুরের অনুপস্থিতিতে ওইদিন রাত আটটার দিকে প্রতিবেশী তিন যুবক ছানোয়ার হোসেন, শাওন ও রফিজ উদ্দিন তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারা তাকে বাড়ির পেছনে জঙ্গলে বাঁশঝাড়ে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এ সময় তাদের সহযোগী অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো দুজন যুবক পাহারা দেন। ধর্ষণের পর তাকে ছানোয়ারের বাড়িতে নিয়ে ওঠানে আমগাছের সাথে বেঁধে রাখে। তারা গাছের কাঁচা ডাল দিয়ে বেদম পেটায় তাকে। এতে তার হাতের দুই বাহু, পিঠ এবং পায়ে মারাত্মক ফোলা জখম হয়। এ ঘটনা জেনে যাওয়ায় ছানোয়ার হোসেন ও তার সহযোগীরা গৃহবধূর স্বামী খলিলুর রহমানকে হত্যা করে বাড়ির পাশে কাঁঠাল গাছে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্রচারণা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশ গৃহবধূর অভিযোগ আমলে না নিয়ে তার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। ঘটনার তিনদিন পর ওই গৃহবধূ সোমবার রাতে জামালপুর প্রেসক্লাবে গিয়ে অভিযোগ করলে রাতেই সাংবাদিকরা তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে তিনি হাসাপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই সাথে ওই রাতেই গৃহবধূ বাদী হয়ে তাকে গণধর্ষণ এবং তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ময়েন উদ্দিনের ছেলে ছানোয়ার হোসেন ছানু (৪০), আব্দুল হকের ছেলে মো: শাওন (৩০) ও ওমর আলীর ছেলে রফিজ উদ্দিন (৩৫)। তাদের মধ্যে মো: শাওনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে ঘটনার তিনদিন পর থানায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি পক্ষের লোকজনরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ ও তার শ^শুরবাড়ির লোকজনদের মামলা তুলে নিতে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই গৃহবধূর শ^শুর ইমান আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলাটির আসামি পক্ষের লোকজনরা আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। মামলাটির স্বাক্ষী আমির খান ও আলফাজকেও তারা মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক ফনির প্রশ্রয়ে আসামি পক্ষের লোকজনরা আমাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার জন্য ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নিতে এলাকায় আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি আমার ছেলে হত্যা ও পূত্রবধূর ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ অপরদিকে আলোচিত এ মামলার দুই আসামি মো: শাওন ও রফিজ উদ্দিনের পরিবার বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তাদেরকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রেফতার আসামি মো: শাওনের বড় ভাই মনজুরুল ইসলাম ও আসামি রফিজ উদ্দিনের স্ত্রী সাফিয়া বেগম। সংবাদ সম্মেলনে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গৃহবধূর দায়ের করা মামলার তিনজন আসামির মধ্যে শাওন নামের একজনকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত আগামী ২৬ নবেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন। মামলাটির বাকি দুই আসামি ছানোয়ার হোসেন ও রফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভিকটিমের মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
×