ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে চরম বিপাকে সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

কলাপাড়ায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে চরম বিপাকে সাধারণ মানুষ

*২৩ চিকিৎসকসহ ৮০ পদ শুন্য মেজবাহউদ্দিন মাননু, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ কুয়াকাটা হাসপাতালের চিকিৎসক আফরোজা আকবর ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে নিরুদ্দেশ। কোন খোঁজ মেলাতে পারেনি স্বাস্থ্যবিভাগের প্রশাসন। এখন তাই হিসাবের খাতায়ও তাকে দেখাতে চায়না কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। কুয়াকাটা হাসপাতলে কর্মরত ছিলেন এই চিকিৎসক। মেডিকেল অফিসার ডাঃ শংকর কুমার পাল ঢাকায় টিবি হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছেন বহু আগে থেকে। একই ভাবে নীলগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ঢাকায় প্রেষণে রয়েছেন সহকারী সার্জন ডাঃ এইচ এম মাহবুব আলম। চাকামইয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী সার্জন ডাঃ মোঃ কামরুজ্জামান রয়েছেন পটুয়াখালীতে প্রেষণে। এছাড়া প্রশিক্ষণে রয়েছে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ জুনাইদ হোসেন লেনিন, ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ রেফায়েত হোসাইন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডাঃ মোঃ আরিফুল হক। একইভাবে মৃজাগঞ্জে প্রেষণে রয়েছেন কম্পাউন্ডার মরিয়ম বেগম, বরগুণায় রয়েছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) সুকুমার মালো, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ( রেডিও) শফিকুল ইসলাম চার বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণে রয়েছে। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট ( মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট ( গাইনি এন্ড অবস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়ার কনসালটেন্ট ( নাক,কান,গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট ( অর্থোঃ), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট ( এ্যানেস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্মযৌন), মেডিকেল অফিসার (ইএমও)সহ কলপাড়া-কুয়াকাটার চিকিৎসকদের ৩৬ টি পদের ২৩টি পদ খালি রয়েছে। যারা রয়েছেন তার মধ্যে প্রেষণে ও প্রশিক্ষনে রয়েছেন ছয় জন। মাত্র সাতজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে কলাপাড়া উপজেলা সদরের ৫১ শয্যার হাসপাতাল, কুয়াকাটার ২০ শয্যার হাসপাতাল ও মহিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। চিকিৎসক ছাড়াও দ্বিতীয় শ্রেণির ১০টি এবং তৃতীয় শ্রেণির ৩৪টি পদ শুন্য রয়েছে। শুন্য রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ১৩ টি পদ। মোট ৮০টি পদ শুন্য থাকায় এখন কলাপাড়ার চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সাগরপাড়ের উপকূলীয় জনপদ কলাপাড়া উপজেলা বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং উন্নয়নমুখি এলাকা। যেখানে সরকারের একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এমনিতেই কলাপাড়ার প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা ছাড়াও রাঙ্গাবালী উপজেলার একাংশ, তালতলী উপজেলা ও কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা এবং নবগঠিত পুলিশি থানা মহিপুরের বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সকল পদের কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন থাকলেও চিকিৎসা সেবায় হিমশিম খেতে হয়। গড়ে প্রতিদিন কলাপাড়ায় ইনডোরে ৫০-৮০ জন রোগী এবং আউটডোরে দুই শ-দুই শ ৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবার জন্য আসেন। কুয়াকাটায় ইনডোরে রোগির চাপ নেই। তবে আউটডোরে দৈনিক ৪০-৫০ জন রোগি সেবা নিতে আসেন। চিকিৎসক সঙ্কটে এখন সাগরপাড়ের মানুষ চরম দুরবস্থায় পড়েছেন। বিশেষ করে ২০১২ সাল থেকে এখানে প্রসুতি মায়েদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। গাইনি এবং এনেসথিয়া বিভাগের চিকিসকের সঙ্কটে বেহালদশা প্রসুতিদের। মাতৃস্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এমনকি স্বাভাবিক ডেলিভারিও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এতসব সঙ্কটের মধ্যেও যে কয়জন চিকিৎসক রয়েছেন তাঁদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার অধিকাংশ সময় প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। এরপরও চিকিৎসা সেবা চলছে যেন জোড়াতালি দিয়ে। রোগিরা জানান, চিকিৎসক পদায়ন জরুরি। তারপরও গুটিকয়েক চিকিৎসকসহ যেসকল কর্মচারী রয়েছেন তাদের কেউ কেউ আন্তরিকভাবে সেবা দিয়ে আসলেও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অনিয়মের অভিযোগ। রোগিদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে চিকিসকদের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে দালালদের বিচরন। যতটুকু চিকিৎসা সেবা পাওয়ার কথা তাও স্বাচ্ছন্দে পাচ্ছেন না রোগিরা। তাই সাগরপাড়ের এই জনপদের মানুষের দাবি প্রসুতিদের নিরাপদ সেবা নিশ্চিতে জরুরি ভিত্তিতে গাইনিবিভাগসহ সকল পদে চিকিৎসকসহ স্টাফ পদায়ন নিশ্চিত করা হোক। এছাড়া যাদের প্রেষণে রাখা হয়েছে তাদেরকেও কলাপাড়ায় পদায়ন করা হোক। বর্তমানে চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করেছেন এলাকাবাসী।
×