ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মু. আবদুল্লাহ আলআমিন

নিষেধাজ্ঞার যাঁতাকল থেকে মুক্তির পথে ইরান

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

নিষেধাজ্ঞার যাঁতাকল থেকে মুক্তির পথে ইরান

ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর ওপর জাতিসংঘ পরমাণু নজরদারি সংস্থা রোডম্যাপ অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এ কথা জানিয়েছে। কর্মসূচীর আড়ালে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করে থাকতে পারে বলে সংস্থাটি এর আগে অভিযোগ করেছিল। এ বছর জুলাই মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন) ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত ঐতিহাসিক পরমাণু সমঝোতা চুক্তির আলোকে আইএইএ এবারের পর্যবেক্ষণটি করেছে। সংস্থার প্রধান ইয়োকিয়ো আমানো আগামী ১৫ ডিসেম্বেরের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্টটি তৈরি করবেন। চুক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম শর্ত আইএইএর রিপোর্ট। ইরানের ঘোষিত পরমাণু স্থাপনাগুলোতে আইএইএ পর্যবেক্ষণের কাজ শেষ করেছে তবে রিপোর্টটি তারা এখনই প্রকাশ করছে না। পরমাণু কর্মসূচীর নামে তেহরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে বলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো যে অভিযোগ করে আসছিল ইরান বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও জাতিসংঘ দেশটির বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছিল। নিষেধাজ্ঞার যাঁতাকলে ইরানের অর্থনীতি কার্যত ভেঙ্গে পড়ার মুখে চলে এসেছিল। ইরানের দাবি বিদ্যুত উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করাই তাদের পরমাণু কর্মসূচীর লক্ষ্য। জুলাইতে সম্পদিত চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে পরমাণু কর্মসূচী ব্যাপক মাত্রায় কাটছাঁট করতে হবে। সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়াম ও সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলতে হবে। অন্তত এটা প্রমাণ করতে হবে পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতা আর দেশটির নেই। কিন্তু আইএইএর অভিযোগ ২০০৩ সালের আগে ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর লক্ষ্য ছিল অস্ত্র তৈরি করা। এই উদ্দেশ্যে পারচিন সামরিক ঘাঁটিতে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণও ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। তোহরান অবশ্য এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। ১৪ জুলাই ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে (জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব এ্যাকশন) পরমাণু চুক্তি সম্পাদনের দিনটিতেই ইরান পৃথকভাবে আইএইএর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচীর রোডম্যাপ ঠিক করে নেয়। এতে নজরদারি কাজ শেষ করার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ডেড লাইন ঠিক করা হয়েছিল। ২০ জুলাই নিরাপত্তা পরিষদ এবং ১৪ অক্টোবর ইরানের পার্লামেন্ট চুক্তিটি অনুমোদন করে। এরপর ১৫ অক্টোবর আইএইএর সর্বশেষ এই ঘোষণা চুক্তি বাস্তবায়নের পথে এক ধাপ অগ্রগতি বলেই পর্যবেক্ষক মহল আশা করছে। ১৮ অক্টোবর ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। চুক্তি সম্পাদনের ৯০ দিন পূর্ণ হয় এদিন। তবে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ সেপ্টেম্বরে চুক্তিটি অনুমোদন করতে ব্যর্থ হলেও আশা করা হচ্ছে ওবামা উচ্চকক্ষ সিনেটের কাছে প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবেন। ইরানের কর্মকর্তারা আশা করছেন চুক্তি বাস্তবায়িত হলে চলতি বছরের মধ্যেই নিষেধাজ্ঞার খড়গ একটু একটু করে উঠে যেতে শুরু করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব শর্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলেও সিরিয়া সংঘাতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ায় ইরারেন ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সময় লাগতে পারে।
×