ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পেট্রোলবোমাবাজদের প্রাপ্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৩ মে ২০১৫

পেট্রোলবোমাবাজদের প্রাপ্য

এমন ধারাবাহিক নাশকতা এর আগে আর প্রত্যক্ষ করেনি বাংলাদেশ। বিষয়টি ছিল নেতিবাচক অর্থে একেবারে অভূতপূর্ব। তিন মাস ধরে লাগাতার অবরোধের নামে বিকট বিপুল-বিকট সন্ত্রাসের বিস্তার দেখেছে দেশের মানুষ। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই তিন-তিনটি মাসজুড়ে প্রথমে অবরোধ, পরে হরতাল সহযোগে অবরোধ চালানো হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশে। পুরো সময়জুড়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাসের জনপদ। কে কোথায় কখন ককটেল ফাটাবে, পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেবে- তার কোন ঠিক ছিল না। দেশবাসী নতুন অভিজ্ঞতায় দেখেছে- সন্ত্রাসকবলিত সমাজে সন্ত্রাস আর একমুখী থাকে না; সে পেয়ে যায় বহুমুখিতা। আগুনের পরিবর্তে সন্ত্রাসের উপকরণ হয়ে উঠতে পারে ছুরি-চাপাতি-রামদা, তার প্রমাণও মিলেছিল। সেই সঙ্গে বাকসন্ত্রাসও শুরু হয়েছিল প্রবল শক্তি নিয়ে। সন্ত্রাস ভয়ঙ্কর! তার বহুমুখিতা ততোধিক ভয়ঙ্কর। বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাসের এই চেহারা সম্বন্ধে জানেন বলেই তাঁদের অবস্থান হয় সন্ত্রাসের বিপরীতে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের, মানুষ খুনের প্রকল্পে বেঁচে যাওয়া অগ্নিদগ্ধ মানুষের ঠাঁই যেন আর হচ্ছিল না হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল ওই আগুন-সন্ত্রাসীরা গোটা দেশকেই বার্ন ইউনিট বানানোর নীলনক্সায় মেতেছে! তাদের পৈশাচিকতায় নিহত হয়েছিল দেড় শতাধিক মানুষ। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা শুধু মানুষ পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের সহিংসতা ও নাশকতায় দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় বিপুল পরিমাণে। বিপন্ন হয়ে ওঠে ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যত। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে নাশকতার অভিযোগে ১ হাজার ৭৭৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ১২০টি মামলার চার্জশীট বা অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। মাত্র একটি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বাদবাকি বিপুলসংখ্যক অর্থাৎ ১ হাজার ৬৫৪টি মামলা এখন তদন্ত পর্যায়েই রয়েছে। দীর্ঘ তিন মাস ধারাবাহিক সন্ত্রাস পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা কোনক্রমেই কাম্য হতে পারে না। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী কাজের জন্য আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ ব্যস্ততা গেছে, এটা অনস্বীকার্য। সেজন্য মামলার তদন্ত কাজ যদি কিছুটা পিছিয়ে গিয়েও থাকে, তাহলে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য বর্তমানে কাজের গতি বাড়ানোর সুযোগটিকে অবশ্যই সর্বাত্মক কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাশকতার মামলাগুলোর দ্রুত চার্জশীট দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সবাই আশা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মহল অতিসত্বর তৎপর হবে। মনে রাখতে হবে, যত দ্রুত পেট্রোল বোমাবাজদের প্রাপ্য চুকিয়ে দেয়ার কাজটি সম্পন্ন হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। এক্ষেত্রে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই চায় দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ। তা নিশ্চিত করা গেলে আগামীতে সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা ছুড়ে আত্মক্রোধ নিরসন ও ক্ষমতারোহণের অভিলাষ পূরণের খায়েশ আর কেউ করবে না বলে আশা করা যায়।
×