ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলা প্রতিদিন

বাংলা একাডেমির বইয়ে পাঠকের বিশেষ আগ্রহ

প্রকাশিত: ১১:০২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলা একাডেমির বইয়ে পাঠকের বিশেষ আগ্রহ

মনোয়ার হোসেন ॥ শৈশব-কৈশোর ও তারুণ্য পেরিয়ে এখন পরিণত বয়সে পা রেখেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সাবলীল গতিতে এগিয়ে চলা মেলায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে অজস্র বই। বিভিন্ন প্রকাশনীর বহুমাত্রিক বিষয়ের বইগুলো সংগ্রহ করছেন পাঠকরা। তবে সব ছাপিয়ে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বইয়ের প্রতি রয়েছে পাঠকের বিশেষ আগ্রহ। বুধবার মেলার অষ্টাদশতম দিনে নজরে পড়ে সেই চিত্রটি। উদ্যান অংশে বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নটিতে চোখে পড়ে পাঠকের সমাগম। মনীষা বড়ুয়া নামের এক পাঠক সংগ্রহ করছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’। গল্প, উপন্যাস কিংবা কাব্যগ্রন্থ ছাপিয়ে এবার মেলার সবচেয়ে আলোচিত গ্রন্থে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর লেখা তৃতীয় গ্রন্থটি। ইতোমধ্যে ২০ হাজার কপির প্রথম মুদ্রণ শেষে ১০ হাজার কপির দ্বিতীয় মুদ্রণও শেষের পথে। মহান নেতার লেখনীর প্রতি পাঠকের হাতছানিতে বইটি জায়গা করে নিয়েছে মেলার সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকায়। এছাড়াও একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ শিরোনামের পুরনো বইটিও টানছে পাঠক। পাশাপাশি বিদ্বজনদের আগ্রহের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অভিধানসহ মননশীল নানা গ্রন্থ। ফাগুনের দুপুরে একাডেমির বিপণন কেন্দ্র থেকে একাধিক ব্যাগভর্তি বই সংগ্রহ করছিলেন ভারতের আসানসোল কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান মোনালিসা দাস। বাংলা একাডেমির বইয়ের প্রতি আগ্রহ প্রসঙ্গে এই শিক্ষক জনকণ্ঠকে বলেন, এখান থেকে প্রকাশিত অধিকাংশ বইয়ের নেপথ্যে রয়েছে অসংখ্য অনুসন্ধানী তথ্য। আমরা যারা শ্রেণীকক্ষে পড়াই তাদের জন্য এই গবেষণামূলক গ্রন্থ এবং বিভিন্ন ধরনের অভিধানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বইগুলোতে উপস্থাপিত তথ্য ও তত্ত্বের সততার প্রতি বিশ্বাস রাখা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার চেয়ে এখানকার বইয়ের মূল্যও সুলভ। একাডেমির বইয়ের প্রতি পাঠকের বিশেষ আগ্রহ প্রসঙ্গে মেলার সদস্য সচিব এবং একাডেমির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, প্রথম কথা বাংলা একাডেমি মানসম্মত বই প্রকাশ করে। প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও প-িতদের লেখা নিয়ে একাডেমির বই হয়। তার ওপর একাডেমির রয়েছে দক্ষ সম্পাদনা পরিষদ। সুলেখকের সুসম্পাদিত বইগুলো সহজেই আকৃষ্ট করে পাঠককে। আর যারা সিরিয়াস পাঠক তাদের কাছে একাডেমির বইয়ের মান ও উৎকর্ষ বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়। এসব পাঠক প্রস্তুতি নিয়েই বাংলা একাডেমির বই কিনতে আসে। একাডেমির বইয়ের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অভিধানসহ বঙ্গবন্ধু রচিত কারাগারের রোজনামচা, পার্লামেন্টারি শব্দকোষ, তিতাস একটি নদীর নাম, শকুন্তলাসহ মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ওপর গবেষণাধর্মী বইগুলো বেশি চলছে।। এর বাইরে ভাষাবিজ্ঞান, লোকসাহিত্য, জীবন ও সাহিত্যকর্ম, রবীন্দ্র ও নজরুল বিষয়ক, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সঙ্গীত, শিশুতোষ, নাটক ও নাটক প্রসঙ্গ, কবিতা ও কবিতা প্রসঙ্গ, রচনাবলী, জীবনী গ্রন্থমালাসহ আছে নানা ধরনের গ্রন্থ। তাই সারা বছরের পাশাপাশি মেলাকে ঘিরে একাডেমি প্রকাশিত বইয়ের বিক্রি বেড়ে যায় অনেক গুণ। একাডেমির বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিপণনকর্মীরা জানান, এ বছর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ ছাড়া ‘আধুনিক বাংলা অভিধান’ বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। প্রতিবছরের মতো এবারও ভাল চলছে বানান, উচ্চারণসহ বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান। ১৯৫৮ সালে রচিত ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’-এর মধ্য দিয়ে অভিধানের ব্যাপকতা শুরু হয়। এরপর গত ষাট বছরের ইতিহাসে শুধু বাংলা একাডেমি থেকেই মোট ২১টি অভিধান প্রকাশ পেয়েছে। ইংরেজী থেকে বাংলা ও বাংলা থেকে ইংরেজী অভিধান এবং নতুন আসা আধুনিক বাংলা অভিধানও বিক্রি হচ্ছে। একাডেমির অভিধানের মধ্যে ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, বাংলা টু ইংলিশ ও ছোটদের অভিধান বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া একাডেমি প্রকাশিত প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষার অভিধান, ছোটদের অভিধান, আঞ্চলিক ভাষার অভিধান, সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান, সহজ বাংলা অভিধানেরও বেশ চাহিদা রয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর লেখা বইসহ তাকে নিয়ে রচিত শত গ্রন্থের আওতাভুক্ত ২৬টি নতুন বই প্রকাশ করেছে একাডেমি। এর মধ্যে হারুন-অর-রশীদ রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন’, মিল্টন বিশ্বাস সম্পাদিত ‘উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু’সহ বঙ্গবন্ধুবিষয়ক কিছু বই টানছে পাঠক। নতুন বইয়ের খবর ॥ বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৬টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে জালাল ফিরোজের ‘বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ সংবিধান’। জার্নিম্যান বুকস থেকে বেরিয়েছে নাজনীন হক মিমি রচিত ‘৬৯-এর শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ও মুক্তিযুদ্ধ’ এবং আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত ‘আয়নামহল : লালন সাঁইয়ের ধ্যান’। সাতভাই চম্পা প্রকাশনী এনেছে আমিনুর রহমান সুলতানের ‘লোকগানের জনকের মুখ’। রাত্রি প্রকাশনী এনেছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প’। অনুপম প্রকাশনী এনেছে সৌমেন সাহার ‘কোয়ান্টাম মেশিন’। অনন্যা এনেছে সুভাষ সিংহ রায়ের ‘জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’, মোস্তফা কামালের ‘স্বপ্নবাজ’ ও রকিব হাসানের ‘ইনকা দেবতার গুপ্তধন’। কথাপ্রকাশ এনেছে মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘ইতিহাস পাঠ ১ ও ২’। চারুলিপি প্রকাশনী এনেছে নির্মলেন্দু গুণের ‘কিশোর সমগ্র’। মেলামঞ্চের আলোচনা ॥ বুধবার গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জালাল ফিরোজ রচিত বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ সংবিধান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ডালেম চন্দ্র বর্মণ, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও সাব্বীর আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘শাসনতন্ত্রহীন জাতি নোঙরবিহীন নৌকার মতো’। এ উপলব্ধি থেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি নবীন রাষ্ট্রের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নে তিনি জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘রক্তের অক্ষরে এই সংবিধান রচিত’। গণপরিষদ গঠন, এর বিন্যাস এবং সংবিধানের মূল রূপরেখার ওপর বঙ্গবন্ধু সেসব সিদ্ধান্তধর্মী বক্তব্য রাখেন, এ বিষয়ে সরকার-দলীয় ও বিরোধী সদস্যদের বক্তব্য, মত, পরামর্শ, গণপরিষদের সদস্যবৃন্দের পর্যালোচনা, জনগণের অধিকার সংরক্ষণের নানাদিক, সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ ও চারটি মৌলিক স্তরেরভিত্তিতে সংবিধান রচনার নির্দেশ দেন তা সুলিখিতভাবে এ গ্রন্থে রয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, লেখক যথেষ্ট পরিশ্রম করে গবেষণামূলক দৃষ্টিতে গ্রন্থটি রচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের বন্ধু। আজকের মেলা ॥ আজ বৃহস্পতিবার গ্রন্থমেলার ১৯তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেলে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আবুল কাসেম রচিত বঙ্গবন্ধু ও চা শিল্প শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন দীপঙ্কর মোহান্ত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মেসবাহ কামাল ও মোকারম হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×