ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ দলবেঁধে মেঘের দেশে

প্রকাশিত: ১২:২৭, ৫ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ দলবেঁধে মেঘের দেশে

ভ্রমণ মানেই আনন্দ, ভ্রমণ মানেই বাস্তব অভিজ্ঞতা। সীমাবদ্ধতার গ-ি পেরিয়ে বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচয় মেলে ভ্রমণের মাধ্যমেই। ভ্রমণ জানতে শেখায় নিজের দেশকে, দেশের মানুষকে, দেশের সংস্কৃতিকে। আনন্দের সাঙ্গ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ শুধু ভ্রমণেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) নিজস্ব অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের জন্য তাই প্রতিবছরই আয়োজন করে এক্সকারশন ট্যুরের। আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে দেশকে জানার এই অবারিত সুযোগটি পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী। বরাবরের মতো এ বছরও আয়োজিত হয় কৃষি অনুষদের এক্সকারশন ট্যুর। শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় মোট ৮টি বাসে সঙ্কুলান হয় শিক্ষার্থীদের। নবেম্বরের মাঝামাঝি তখন। হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে মাত্র। সন্ধ্যা ৭টায় যাত্রা শুরু করে কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ৮ নম্বর বাস। ৩২ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে গাইড শিক্ষক হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-অর-রশিদ এবং একই বিভাগের প্রভাষক মো. তাহমিদ হোসেন। গন্তব্য সাজেক। তবে এর জন্য প্রথমত যেতে হবে খাগড়াছড়ি। হৈ-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে শুরু হলো যাত্রা। গল্প-আড্ডা-গানের সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকে বাস। ময়মনসিংহ থেকে খাগড়াছড়ির দূরুত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। কিন্তু হৈ-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে নিমেশেই পাড় হয়ে গেল সারারাত। সকাল ৬ টায় গিয়ে পৌছালাম খাগড়াছড়ি। সেখানে বাস থেকে নেমে একটি হোটেলে নাস্তা সেরে নিলাম সবাই। বেলা একটু বাড়তেই দেখা মিলল চান্দের গাড়ির। প্রতিটি ধারণক্ষমতা ১২ জন। তিনটি গাড়ি ঠিক করা হলো সবার জন্য। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলাতে হলেও খাগড়াছড়ি থেকে যাওয়া সুবিধাজনক। এখানে আছে হেলি প্যাড, কটেজ, পাহাড়িদের বাসভূমি, কমলা বাগান ইত্যাদি। পিচঢালা আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করল আমাদের গাড়ি। একটু ভয় ভয় লাগলেও অন্য রকম এক রোমাঞ্চ অনুভূত হচ্ছিল এই চান্দের গাড়িতে। ৩ ঘণ্টা যাত্রা শেষে পৌঁছলাম মেঘের রাজ্য সাজেকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ শত ফুট উচ্চতার নয়নাভিরাম জায়গাটা নিমিষেই মন কেড়ে নেবে যে কারো। আগে থেকেই হোটেল বুকিং দেয়া ছিল। গাড়ি থেকে নেমে একটা হোটেলে উঠলাম সবাই। দুপুরে ‘বাম্বু চিকেন’ দিয়ে খাওয়াÑদাওয়াটা সেখানেই সেরে নেয়া হলো। এর পরই বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে। সাজেকে সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজের দারুণ মিতালী। এখানে রয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড যা থেকে সূর্যোদ্বয় আর সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। সাজেক রুইলুই পাড়া আর সাজেক পাড়া এই দুটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। ট্রেকিং করে সবাই কংলাক পাহাড়ে উঠলাম। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। সর্বোচ্চ চূড়া থেকে পুরো সাজেকের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ভাষায় বলা সম্ভব নয়। এখানে লুসাই, পাংকুয়া ও ত্রিপুরাদের বসবাস। প্রকৃতির মতো সুন্দর পাহাড়ের সহজ সরল আদিবাসী মানুষের সংগ্রামী জীবন থেকে হয়ত অনেক কিছু শেখার আছে। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। সাজেকের পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও উত্তরে ত্রিপুরা রাজ্য। কংলাকের চুড়ায় না উঠলে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ বৃথা। এখান থেকে সবুজ পাহাড় ও মেঘের সমুদ্র দেখে মনে হবে এ যেন দেশের মধ্যে অন্যদেশ। ঘুরতে ঘুরতেই সন্ধা নেমে এলো। তারপর হেলিপ্যাডে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখলাম। এরপর আবার হোটেলে ফিরলাম সবাই। রাতে করা হলো বার-বি-কিউ পার্টি। রাতের খাওয়া-দাওয়া করে গল্প-আড্ডায় কাটিয়ে দিলাম সারা রাত। পরদিন খুব ভোরে আবারও সেই হেলিপ্যাডে যাওয়া- সূর্যোদয় দেখতে। সকালের দৃশ্য আর সবুজের সঙ্গে মেঘের খেলা দেখতে দেখতেই কেটে গেল সময়। সকাল বেলা কটেজগুলো থেকে মেঘের অপরূপ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখে মুগ্ধ সবাই। পাহাড়গুলো যেন মেঘ ভেদ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমরা সেই পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে। সাদা মেঘগুলো যেন আমাদের পায়ের নিচে। এবার ফেরার পালা। সকালের নাশতা সেরে সবাই আবার রওনা হলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। আবারও সেই চান্দের গাড়ি। বিদায় জানালাম সাজেককে। কিন্তু স্মৃতিতে বেধে নিলাম অসাধারণ মুহূর্তগুলো। জাহিদ হাসান
×