ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় আসার প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় আসার প্রতিবাদে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রকাশিত রাজাকারের তালিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বরিশালের যুদ্ধাহত, শহীদজায়া ও গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসার প্রতিবাদে আজ বুধবার বেলা ১১টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনের সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। প্রতিবাদী সাংবাদিক সংগঠন বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়োজনে ও বিভিন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালীন সময় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অপমানকর। যেসব মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে পাকিস্তানী শত্রু সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তাদের নাম রাজাকারদের তালিকায় আসা সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীদের কর্মকান্ড। যে কারণে প্রকাশিত তালিকা দ্রুত সংশোধনসহ এর সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। একইসাথে বক্তারা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করেছেন। রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশান্ত ঘোষের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে রাজাকারের তালিকায় নাম প্রকাশিত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন-মুক্তিযুদ্ধ করেও বিজয়ের ৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। এখন আর বেঁচে থেকে লাভ কি? এ তালিকা বাতিল করে রাষ্ট্রকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজাকারের তালিকায় আমি ও আমার মায়ের নাম অন্তর্ভুক্তির পেছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে।’ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তীর কন্যা বাসদের জেলা শাখার সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা মিহির লাল দত্তের সন্তান সাংবাদিক শুভব্রত দত্ত, রিপোর্টার্স ইউনিটি সাবেক সভাপতি নজরুল বিশ্বাস, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাশ পুতুল, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোখলেচুর রহমান, বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী আবুল কালাম আজাদ, শহীদ আব্দুর সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি পুলক চ্যাটার্জি, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র ব্যাটবল, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ, নাট্যজন সৈয়দ দুলাল, শিক্ষক নেতা দাশ গুপ্ত আশিষ কুমার, গণফোরামের সভাপতি এ্যাডভোকেট হিরন কুমার দাস মিঠু, উন্নয়ন সংগঠক আনোয়ার জাহিদ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, জেলা ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান প্রমুখ। অপরদিকে সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকার মুক্তিযোদ্ধা বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ বুধবার দুপুরে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছেলে গৌতম চন্দ্র পাল। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গৌতম চন্দ্র পাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাবুগঞ্জ উপজেলার (হাল থানা-বিমানবন্দর) পূর্ব রহমতপুরের ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন এলাকার মৃত নকুল চন্দ্র পালের ছেলে ও আমার বাবা মৃত বিমল কৃষ্ণ পালের নাম দুরভিসন্ধি মূলক ভাবনার আলাকে অন্যায়ভাবে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রকাশিত করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। তিনি বলেন, আমার ঠাকুর দাদা নকুল চন্দ্র পালকে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে নিজ বাড়ির সামনে পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে তার লাশ পাশের খালে ফেলে দেয় এবং আমাদের বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওইসময় আমার বাবা ক্যাডেট কলেজের নিকটবর্তী কালভার্টের ওপর বেইজ কমান্ডার আব্দুল ওহাব খানের উপস্থিতিতে একযোগে আক্রমন করে পাক সেনাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এরূপ হত্যার কারনে যেখানে আমাদের শহীদের পরিবারের মর্যাদা লাভ করার কথা সেখানে উল্টো আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা বিমল কৃষ্ণ পালের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সমাজে আমাদের চরমভাবে অপমানিত করা হয়েছে।
×